বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রাখাইনের গ্রামে সেনাবাহিনীর গুলি-মারধর-লুটপাট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:৪৮ পিএম

মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হামলাকে কেন্দ্র করে দেশটির সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী একাধিক গ্রামে ঢুকে গুলি চালিয়েছে। সেইসঙ্গে গ্রামবাসীকে মারধর, গ্রেফতার এবং তল্লাশির নামে স্বর্ণালঙ্কার, ঘড়ি ও মোবাইল লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। খবর রেডিও ফ্রি এশিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্থিতিশীল উত্তর রাখাইন রাজ্যের রাথেডং উপশহরের ওহন চাওয়াং গ্রামে সোমবার সকালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চার ঘণ্টা গোলাগুলি হয়েছে। পরে সেনা সদস্য ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা গ্রামে তল্লাশির নামে লুটপাট চালায়। এ ছাড়া স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের দুই শিক্ষকসহ কয়েকজন গ্রামবাসীকে আটক করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জানুয়ারি পার্শ্ববর্তী বুথিডং উপশহরের চারটি পুলিশ চেক পোস্টে আরাকান আর্মি হামলার পর থেকেই ওই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্থানীয়রা বুঝতে পারছেন না, এখন গ্রামে কেন নতুন করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো।
গ্রামের এক বাসিন্দা নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘যখন সংঘর্ষ শুরু হয় আমরা তখন সকালের নাস্তাও খাইনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এর মধ্যেই সকাল ৮টার দিকে সরকারি সেনারা হালকা ও ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামের ভেতর গুলি চালাতে থাকে।’ ওই বাসিন্দা আরো বলেন, ‘আমরা খুব সমস্যার মধ্যে আছি। আমরা জানি না, তারা কেন এ ধরনের গুলি চালাচ্ছে। আতঙ্কে অনেকেই পালিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা যেতে পারিনি।’ গ্রামবাসী বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় সেনা সদস্য ও বিজিপির (সীমান্তরক্ষী বাহিনী) সদস্যরা গ্রামে ঢুকে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায় এবং স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা এবং মোবাইল ফোন লুটপাট করে। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে যারা আশ্রয় নিয়েছে তারাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন, কারণ তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য তিন মং উইন এলাকা পরিদর্শন করে বলেছেন, সেনাবাহিনী তাদের কমান্ডারদের সহায়তা করতে থামী হ্লা গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করেছে। গ্রামবাসী আতঙ্কের মধ্যে আছেন যে, সেনাবাহিনী আবার গ্রামের মধ্যে ঢুকলে তাদের কী হবে?
বার্মিজ গণমাধ্যম দ্য ইরাওয়াদ্দির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে শনিবার থামী হ্লা গ্রামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশ। এ সময় তারা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য থান নাইং এলাকা পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, গ্রামের ৮৪টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ১০টি বাড়িতে গোলার আঘাত লাগেনি। দুই নারী ও এক শিশু গোলার আঘাতে আহত হয়েছেন। তবে ইয়াঙ্গুনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিশু মারা গেছে। তিনিও স্থানীয়দের জিনিসপত্র লুটের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। সেইসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দারা খাদ্য ও পানির সংকটে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
গত ২৬ জানুয়ারি থামী হ্লা গ্রামে সেনাবাহিনীর একটি বহরে একটি মাইন বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে এসব হামলা ও অভিযান চালানো হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ওই বিস্ফোরণে নিরাপত্তাবাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি। বরং ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের ধরে ধরে এক জায়গায় করে মারধর করা হয়েছে। লাথি-গুঁতো মারা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সারাদিন আটকে রেখে সন্ধ্যার দিকে তাদের ছেড়ে হয় বলেও জানান তারা।
উল্লেখ্য, অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ২০০৯ সাল থেকে আন্দোলন করছে আরাকান আর্মি। গত ৪ জানুয়ারি চেক পোস্টে হামলায় ১৩ নিরাপত্তা কর্মী নিহতের পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন