অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রধান বাধা হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিদেশি নাগরিক হত্যা ও সন্ত্রাসবাদকে দায়ী করেছে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ ছাড়া বাংলাদেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কায়ন জটিলতা ও বিনিয়োগে সরকারি অনুমোদনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথাও বলেছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)- বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’-এ এসব সমস্যার কথা বলেছেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদো। বাংলাদেশে ইইউভুক্ত আট দেশ, পাঁচ যৌথ চেম্বার ব্যবসায়ীসহ মোট ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মায়াদো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।
পিয়েরে মায়াদো তাঁর লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না আসার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করে বলেন এর আরও কারণ আছে, যেমন ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে বহু ধরনের নৃশংসতা করছে, বিদেশিদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এগুলোর কোনো ব্যাখ্যা নেই, বিচারও নেই। এ ছাড়া রয়েছে জ্বালানি ঘাটতি ও অবকাঠামোগত সমস্যা। বিদেশিরা এসব কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে দু’বার চিন্তা করেন।
পিয়েরে মায়াদো বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশের অনেক সম্পদ রয়েছে প্রায়ই এমন কথা বলা হয়। যেসব বিদেশি কোম্পানি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে, তারা আবারও বিনিয়োগ করছে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত এই সত্য সব সময় প্রমাণ করে না যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো।
সকালে ডায়ালগে যোগ দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। পৃথিবীর সব দেশেই এখন ওষুধ রফতানি হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হারে এগোচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। দেশে ১০০টি ইকোনোমিক জোন তৈরি করেছি। এসব জোনে বিদেশিদের বিনিয়োগের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইইউ প্রতিনিধিরা যেসব বাধার কথা বলেছেন, সেগুলোর সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বিনিয়োগে উৎসাহী করতে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক বিনিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ডায়ালগ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পিয়ারে মায়াদো বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। তবে, এ ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমতি পেতে দীর্ঘসূত্রতা, লভ্যাংশ পাঠাতে জটিলতা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। আমদানি শুল্ক ছাড়, কাস্টমস নীতি, লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, সার্ভিস সেক্টরে বৈদেশিক বিনেয়োগে উচ্চ আদালতের মামলা জটিলতা, ট্যাক্স আদায় ও নির্ধারণ জটিলতাসহ অন্যান্য কারণে বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনের রাষ্ট্রদূতেরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ‘বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’ শিরোনামে আলোচনা হয়। ৫টি বিষয় নিয়ে দু’দিনব্যাপী ডায়ালগে আলোচনা হয়। সেগুলো হচ্ছে- ওষুধ শিল্প খাত, আমদানি শুল্ক, লাইসেন্স ও সার্ভিস সেক্টরে বৈদেশিক বিনেয়োগে সমস্যা, স্বচ্ছ বিনিয়োগ উৎস নির্ধারণ এবং ট্যাক্স পলিসি নির্ধারণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন