সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ সালের নির্বাচন আগামী ১৩ মার্চ। আইনজীবীদের এই শীর্ষ সংগঠনে কারা নেতৃত্ব দেবেন তা নিয়ে আদালত অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা প্যানেল ঘোষণা করে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে প্রার্থী বাছাই নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বিএনপি আইনজীবীরা। গুলশানে তিন দফায় বৈঠক করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পৌছতে পারেনি মনোনয়ন বোর্ড। প্রার্থী নিয়ে দেখা দিয়েছে নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি। নির্বাচনে একই ব্যক্তি একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নেয়া ও আইন অঙ্গণে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখেন তাদের বাদ দিয়ে প্যানেল ঘোষণা করার এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি ঘরোয়ানা আইনজীবীরা। গত বছরও সমিতির নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।
এদিকে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিজয় ধরে রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারর্পাসন খালেদা জিয়া। এছাড়াও লন্ডন থেকে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে মতবিরোধ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে বলেছেন বলে সূত্রে জানা যায়।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ইনকিলাবকে বলেন, এখন কোন মতবিরোধ নেই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে; দ্রতই জানতে পারবেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশনাও দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড ।
সূত্রে জানা যায়, সমিতির নির্বাচনের প্যানেল নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সিনিয়র আইনজীবীদের মিটিং করার কথা রয়েছে। এতে মতবিরোধ মিটিয়ে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হতে পারে।
বিএনপি ঘরোয়ানা আইনজীবী সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি বছর একটি পকেট কমিটি থেকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়। অথচ আরো যোগ্য আইনজীবী রয়েছে। গত বছরও দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টি হয়। নিজদের মধ্যে দফায় দফায় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এবার নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ আইনজীবীদের প্যানেল ঘোষণা হলেও বিএনপি প্যানেল ঘোষণা করতে পারছে না। এ নিয়ে হাইকোর্ট চেম্বারে ও গুলশানে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড একাধিক সভা করেন। সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী ও বর্তমান সভাপতি জয়নুল আবেদীন। সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আলোচনায় রয়েছে। এই পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছা চান অ্যাডভোকেট মনির হোসেন।
সভাপতি পদে এ জে মোহাম্মদ আলী প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়। মনোনয়ন কমিটি মনে করছেন এ জে মোহাম্মদ আলী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি আইনি অনেক ব্যাখা বিশ্লেষণ ভাল বুঝেন। উনাকে সভাপতি করা হলে ম্যাডামের মামলা গুলো পরিচালনা করতে বাড়তি সুবিধা পওয়া যাবে। তবে দ্ইু একজন আইনজীবী মনে করছেন বরিশাল বিভাগের যে কেউ সভাপতি পদে মনোনয়ন দিতে পারলে ভাল হবে। এতে বিজয়ী হওয়া সুবিধা হয়। কারণ তাদের ভোট ব্যাংক রয়েছে। সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নাম উঠে আসছে। তবে তিনি একাধিক বার নির্বাচন করাই নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে।
গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের কো চেয়ারম্যান অ্যাডভোকে মনির হোসেন সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চান। তবে মনোনয়ন বোর্ড তাকে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে বলেন। এতে তিনি প্রত্যাখান করেন। একই সঙ্গে রফিকুল হক তালুকদার রাজাকে কোষাধ্যক্ষ পদে নিবার্চনের জন্য কথা বলা হয়। যদিও বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সভাপতি ও সম্পাদকসহ কয়েকটি পদ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই একদিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপি প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে।
অ্যাডভোকেট মনির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে জোড় করে পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের তথা স্বাধীন বিচারের বিভাগ রক্ষার্থে বর্তমান কমিটি কোন কাজই করেনি। বিশেষ করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। আমরা রেজুলেশন আকারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি নেননি। এছাড়াও বার বার একই পদে তিনি নির্বাচন করে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ বন্ধ করেছেন তিনি। আমরা চাই নতুন কেউ সমিতিতে আসুক। মনির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তিনি (খোকন) গোপনে সরকারের হয়ে কাজ করেন। নিজেদের প্যানেল নিয়ে মতবিরোধ আছে কি না জানতে চাইলে বিএনপি আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজই সবকটি পদে প্রাথীর নাম ঘোষণা করা হবে। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে সমিতির বর্তমান সভাপতি জয়নুল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, কিছুটা তো ঝামেলা আছেই। আলোচনা চলছে। অনেক বিষয় আছে যা বলা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমিতির অফিস সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৩ ও ১৪ মার্চ ভোর্ট। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২০ ফেব্রæয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল এবং ৬ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সভাপতি সম্পাদকসহ সাতটি ও কার্যনির্বাহী সদস্যের সাতটি নিয়ে মোট ১৪ পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে আহŸায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে আইনজীবী সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার ৮৮ জন।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম আইনজীবী সমিতির বর্তমান কমিটির ১৪ পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১০টি পদে রয়েছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। আর একটি সহ-সম্পাদকসহ চার পদে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন