পানামা পেপার্সের বাংলাদেশী অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির ১৫তম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, টিপু মুন্সি, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও আখতার জাহান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ডলারের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত মাত্র ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। আরও ১৬ মিলিয়ন ডলার কিছুদিনের মধ্যে ফেরত পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বাকী অর্থ কিভাবে
আসবে, আদৌ আসবে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্টরা।
কমিটির সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে ফেরত পাওয়া গেছে এবং আরো প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
কমিটি চুরির জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে দেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত আনার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জোর সুপারিশ করে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যাতে পূনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১০ মে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার নেপথ্যে থেকে কারা কলকাটি নেড়েছে তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চুরির অর্থ শুধু ফেরত আনা নয়, জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণেরও তাগিদ দেয় ওই কমিটি।
বৈঠকে ব্যাংক রিজার্ভ ও আমানতের নিরাপত্তা এবং জালিয়াতি প্রতিরোধে করণীয় এবং বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। একইসঙ্গে আলোচনা হয় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুদের হার এবং বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং প্রসঙ্গে।
বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিংয়ের সার্বিক ঝুঁকি হ্রাস এবং তুলনামূলকভাবে মুক্ত ও সহজ অফশোর ব্যাকিং সুবিধার সার্বিক সুফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান অফশোর ব্যাকিং নীতিমালা সময়োপযোগী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
এদিকে আলোচিত পানামা পেপার্সের নথিতে নাম থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেও সংসদীয় কমিটিতে অবহিত করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করে জড়িতদের তালিকা ও প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রসঙ্গত চলতি মাসের শুরুতে পানামা পেপার্স নিয়ে প্রকাশিত একটি তথ্যভা-ারে অন্তত ১৮ বাংলাদেশির পাওয়া যায়, যারা বিদেশি ঠিকানা ব্যবহার করে শেল কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হয়েছেন। দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিস্টস (আইসআইজে) ফাঁস করা পানামা পেপার্স থেকে দুই লাখের বেশি অফশোর কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের তথ্যভান্ডার প্রকাশ করে। একই সঙ্গে মোস্যাক ফনসেকার মতো আরও দুটি ফার্মে নিবন্ধিত এক লাখের বেশি কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বের মোট ২১টি কর অঞ্চলে নিবন্ধিত তিন লাখের বেশি অফশোর কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনে যাদের নাম এসেছে, তারা আইন ভেঙে সম্পদ গড়েছেনÑএমনটা বলছে না আইসিআইজে, তবে অর্থ পাচার করতে বা কর ফাঁকি দিতে আইনের ফাঁক-ফোকর খুঁজেছেন অনেকেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন