সৃষ্টিকর্তার বিপুল রহস্যের চিত্রায়নে চিত্রিত এ জগত সংসার। তার মাঝে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে বিস্ময়কর সৃষ্টি মানুষ। যাদের দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট, করেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি, নিজেই লিখেছেন যাদের ভাগ্যবিধি। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা- “নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দর অবয়বে”-(সূরা ত্বীন, আয়াত ঃ ৪) এবং “নিশ্চয় আমি জমিনে প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি”-(সূরা বাকারা, আয়াত ঃ ৩০)।
মানবীয় শ্রেষ্ঠত্বের নিগূঢ় অস্তিত্বের অনুসন্ধানের পথে পথে রয়েছে মা’রেফাতের পাথেয়। স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির মিলনের খোদায়ী সেতুবন্ধন। মানবীয় সৃষ্টিতত্তে¡র ব্যবচ্ছেদে প্রতীয়মান হয় পার্থিব ও অপার্থিব উপাদানের সমন্বিত রূপ মানুষ। পার্থিব উপাদান-আগুন, পানি, মাটি ও বাতাস থেকে মানুষের জৈবিক সত্তার দৃশ্যমান অবয়ব। আর অপার্থিব উপাদান তথা লতিফা (সূ²াতিসূক্ষ বস্তু)- ক্বলব, রূহ, ছির, খফি, আখ্ফার সমন্বয়ে মানুষের আত্মিক অশরীরি সত্তার গোপন অবয়ব। আল কোরআনের সূরা ত্বাহা, আয়াত ৭-এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে মাজহারীতে মানবীয় রহস্যতত্ত্ব প্রসঙ্গে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। নূর জগতের অমূল্য এই নিয়ামতসমূহ তথা মঞ্জিলে মকছুদের অভিযাত্রায় সোনালী পথের সোপানগুলো শুধু মানুষকেই দেয়া হয়েছে, যা মানুষকে করেছে সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ।
ধূলির জগতে বিচরণকারী মানুষ কীভাবে আলমে আমরের লতিফাসমূহের সংযুক্ত হবে? এ জিজ্ঞাসার বাস্তবতা, ব্যবহারিক উপলব্ধি কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ হযরত গাউছুল আজম-এর পাক তাওয়াজ্জুহ্র গভীরে। তাওয়াজ্জুহ্ শব্দের অর্থ অর্ন্তদৃষ্টি নিক্ষেপ করা। গাউছুল আজমের পবিত্র অন্তরে নবীর নূরের যে মহাসমুদ্র নিরবে বহমান, তাওয়াজ্জুহ্র মাধ্যমে মানুষের মাঝে বিতরণ করে চলেছেন নবীপ্রেমের রহস্যময়তায়, নূরে মোহাম্মদীর আলোকধারায়। প্রিয় রাসূল (দঃ) এর বাণী-“তাদের ক্বলবসমূহ তথা অন্তকরণ হল হিদায়তের আলোকবর্তিকা”-ইবনু মাজাহ শরীফ ঃ ৩৯৮৯।
খোদাকে পাবার গভীর আগ্রহে, নবীপ্রেমের নিবিড় সাগ্রহে, হযরত গাউছুল আজম-এর শরণাপন্ন হলে তবে তিনি সুমহান অনুগ্রহে তাওয়াজ্জুহ্র প্রক্ষেপণে মানুষের অভ্যন্তরীণ লতিফাসমূহে জারি করেন জিকিরে খোদার গুনগুন গুঞ্জরণে। তবে নূর জগতের ক্বলবের সাথে ধূলির জগতে অবস্থিত মানুষের ক্বলবের সংযোগ সাধিত হয়। এভাবে সব লতিফায় যুক্ত হয় ঐশী তরঙ্গ, ফলশ্রুতিতে পাপে আসক্ত মানব চায় নবীজির নৈকট্য লাভের সঙ্গ, জীবনের ভুলগুলো হয় এশকে খোদার আলোড়নে ভঙ্গ, হেদায়তময় শান্তির স্নিগ্ধতায় হৃদয়ে দোলে প্রেম চতুরঙ্গ। শোকরে সবরে সাজে জীবনের আদি-অন্ত, তাকওয়া-তাওয়াক্কুলে পাড়ি দেয় অনাগত পথের দুর্গম দিগন্ত, খুঁজে ফিরে সতত রেজায়ে খোদার শান্তিময় সীমান্ত, রহমতে রাসূল অনন্ত, অশান্ত দিলে নামে চিরশান্তির মনলোভা বসন্ত, প্রেমসুধা আহরণের এ পথে হয় না কভু এতটুকু ক্লান্ত। এখলাছের ঐশী ডানায় ভর করে ছুটে চলে মানবের কাঙ্খিত ঠিকানা মঞ্জিলে মকছুদ, নফসের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে তুমুল প্রতিরোধ। অবনমিত করে হিংসা ও ক্রোধ, মানবের আপাদমস্তকে নামে মানবতার মূল্যবোধ, বিনয়ে ভুলে যায় নিষ্টুর প্রতিশোধ। ফলে নূর ধারণকারী ঐ ব্যক্তির শান্তিতে ভরে ওঠে চারপাশ, যার চলায় বলায় বিচ্ছুরিত হয় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, অশান্ত ধরণীতে হয় শান্তির বিকাশ, রূহের গভীরে দোলে খোদা পাবার উচ্ছ্্বাস। নূরে মোহাম্মদীর এ দর্শনে খোদায়ীভাবে সুদর্শন হয়ে উঠলে প্রত্যেক ব্যক্তি, পৃথিবীতে বাড়বে শান্তির ব্যপ্তি, তবে সমাজ হবে প্রেমশুদ্ধ জয়গানে মুখরিত, সত্যিকারের আলোকিত। এভাবে রাষ্ট্রে বইবে আরাধ্য শান্তির সুরভিত সুঘ্রাণ।
তৃষিত মানবাত্মায় তাওয়াজ্জুহ্ তথা অন্তর্দৃষ্টি প্রক্ষেপন করে নূরে মোহাম্মদীর দীপ্তি ছড়ানোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি শান্তি প্রতিষ্ঠার রূহানি দর্শনকে পৌঁছে দেবার প্রত্যয়ে আগামী ২ মার্চ ২০১৯ শনিবার, বেলা ১টা হতে ঢাকার গুলিস্থানে কাজী বশির মিলনায়তনের সম্মুখস্থ ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের ঐতিহাসিক এশায়াত সম্মেলন। আসুন! মিলিত হই শান্তির অবগাহনে, গাউছিয়তের প্রেম নিকেতনে, রূহানিয়াতের রওশনে, নবীপ্রেমের আবাহনে, খোদাকে পাবার ঐশী সম্মোহনে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন