বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজশাহী ব্যুরো : ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শুধু দিবস স্মরণ আর সেমিনার, আলোচনা সভা নয়, রাজপথে নামতে হবে। মওলানা ভাসানী যেমন ফারাক্কা লংমার্চ করে আওয়াজ তুলেছিলেন, ‘মরণবাঁধ ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দাও।’ যার আওয়াজ ভারতের তৎকালীন সরকারে কাঁপন ধরিয়েছিল।
তেমনি এখন সময় এসেছে পানির নায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবার। ভারত সব অভিন্ন নদীতে তার পানি আগ্রাসী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। যার পরিনতিতে গোটা বাংলাদেশ মরুভুমি হয়ে যাবে। দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ভারতের এ মরন খেলার হাত থেকে দেশ বাঁচাতে মানুষ বাচাতে এখনি প্রয়োজন গণআন্দোলন গড়ে তোলা। সাথে সাথে আর্ন্তজাতিক আদালতে মামলাসহ অন্যসব স্থানে আহবান জানানো। ইতোমধ্যে দেশের সব নদ নদী খাল বিল মরে গেছে। মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। ক্ষোভের যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটবে তা থেকে ভারতও রক্ষা পাবে না। ফারাক্কা লংমার্চের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ফারাক্কা লংমার্চ উৎযাপন কমিটির রাজশাহীর আয়োজনে পদ্মা নদীর তীরে এক গণসমাবেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এ আহ্বান জানান। ফারাক্কা লংমার্চ উৎযাপন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী, ড. এস আই খান সাবেক পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ, প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহমদ সাবেক ভিসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কবি ফরহাদ মজহার গবেষক ও পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী এম ইনামুল হক সাবেক মহাপরিচালক পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, আওলাদ হোসেন খান সহ-সভাপতি আই এফ সি নিউইয়র্ক, সৈয়দ ইরফানুল বারী সাবেক সম্পাদক হক কথা, এ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম সমন্বয়ক জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন বাস্তবায়ন আন্দোলন, সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধান।
ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী বলেন, দেশের সব সময় কোন না কোন হত্যাকান্ড ঘটছে। এসব হত্যাকান্ডের কোন কুলকিনারা পাওয়া যাচ্ছেনা। কারা বা কেন এসব হত্যাকান্ড করছে তা খুজে বের করা দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু তা করছেনা। সরকার চলছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘‘র’’ এর পরামর্শে। শেখ হাসিনা ভারতকে চিনতে পারেনি। কিন্তু তার বাবা ঠিকই চিনেছিল। তিনি ১৯৭২ সালে ভারতের বিমানে করে বাংলাদেশে আসেননি। তিনি এসেছিলেন ব্রিটিশদের বিমানে চড়ে। শেখ মজিবের দুর দৃষ্টি ছিল। তিনি দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন আমি মুসলমান তার পরে আমি একজন বাঙালি। আপনি যদি স্বাধীন বাংলাদেশ চান তাহলে অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করেন। শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণের ত্যাগ তিথিক্ষা ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ভারত এক ছক্কায় উড়িয়ে দেবে। তাদের প্রকাশিত বইগুলোতে বলা হয় যে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ হয়েছিল ভারত পাকিস্তানের মধ্যে। এবং ভারতীয়রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেয়। ভারতীয়দের এ প্রচারনা বাংলাদেশীদের লজ্জাজনক। মাওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবের মধ্যে মতাদর্শগত অনেক বিরোধ ছিল। তবুও তাদের মাঝে রাজনৈতিক সমঝোতা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল। তিনি বলেন ফারাক্কা লংমার্চের পর চল্লিশ বছরে আ:লীগ বিএনপি জাতীয়পাটি কমিউনিষ্ট কোন দলই লংমার্চের জন্য কোন সভা সমাবেশ বা পদ্মা তিস্তার পানি নিয়ে কোন কথাই বলেননি। ক্ষমতায় থাকাকালে দলগুলো বিষয়গুলো নিয়ে আর্ন্তজাতিক ফোরামে উত্থাপন করেনি। কারন তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে সবকিছু উজার করে দিয়েছে। এতে করে শেষ রক্ষা হবে না। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে ভারত অনেক কথাই বলছে। তাদের বলি নিজের ঘর সামলান। সেদিন খুব বেশী দূরে নয়। ভারতও খন্ড বিখন্ড হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে দাম্ভিকতা।
ড. এস আই খান বলেন, আমরা সমুদ্র বিরোধ মিটাতে পারি। কিন্তু অভিন্ন নদী পানির নায্য হিস্যা কেন আদায় করতে পারিনা। অবশ্যই বিষয়টি আর্ন্তজাতিক ফোরামে উঠাতে হবে। নইলে জনগণ ক্ষমতাসীনদের ক্ষমা করবে না। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি যখন রুয়েটের শিক্ষক ছিলাম তখন যে পদ্মার রূপ দেখেছি আর কি দেখছি শুধু ধু ধু বালুচর। সমুদ্র থেকে দেশের অভ্যন্তরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে বিপর্যয় ডেকে আনছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমরা এমন কিছু করবোনা যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। তাকে অনুরোধ করবো আপনি হেলিকপ্টারে বাংলাদেশে তিস্তা বা পদ্মায় নামুন। দেখুন কি ভয়াবহ অবস্থা।
পদ্মার চরে জাগপার মিছিল-সমাবেশ
ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস পালন উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটি (জাগপা) গতকাল পদ্মা নদীর চরে এক প্রতিবাদী মিছিল ও সমাবেশ করে। জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে একটি মিছিল প্রথমে লালনশাহ পার্কের সমাবেশে যোগ দিয়ে সংহতি প্রকাশ করে। পরে তারা মিছিল করে পদ্মার মধ্যচরে গিয়ে সমাবেশ মিছির হয়।
এসময় শফিউল আলম প্রধান বলেন আজ সময় এসেছে ভাসানীর চেতনাকে ধারন করে মরন বাঁধ ফারাক্কা গজলডোবাসহ অভিন্ন নদীর প্রবাহ বন্ধকারী ব্যারেজ গুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। খালি আওয়াজ তুলে কাজ নেই। বাস্তবে মাঠে নামতে হবে। ছায়ার সাথে যুদ্ধ নয় আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে। দেশ বাঁচানোর আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে। ভারতের পানি শোষন নীতির বিষয় এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানি নায্য পানি পেতে হলে আর্ন্তজাতিক ফোরামে উঠাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন