কূটনৈতিক সংবাদদাতা : যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানাল বিএনপি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক মুখ্য উপ সহকারী মন্ত্রী উইলিয়াম টডের কাছে বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটের বাসায় গতকাল সোমবার সকাল সোয়া আটটা থেকে শুরু হয়ে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এ বৈঠকটি শেষ হয়। বৈঠকে পরিস্থিতি তুলে ধরেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ সময় বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মইন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকালের বৈঠকে বিএনপির তরফে মার্কিন মন্ত্রী চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র সারা দেশে খুন, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট প্রদানের তথ্য সংবলিত একটি পরিসংখ্যানপত্র দেওয়া হয়। বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের দাওয়াত করেছিলেন। এটি একটি ইনফরমাল আলোচনা ছিল। ফলে কী আলোচনা হয়েছে, এ নিয়ে বাইরে কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, এটা আমাদের একটা চা চক্র ছিল। এর বেশি কিছু না।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ‘গণতন্ত্রের উত্তরণ’, ব্লগার-ইমামসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের খুনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী-এ নিয়েও বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান উইলিয়াম ই টড।
সূত্র জানায়, বৈঠক প্রসঙ্গে বাইরে মুখ না খোলার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তরফে ‘উদ্ধৃত না করতেও’ পরামর্শ দেওয়া হয়। একই কথা জানান নজরুল ইসলাম খানও। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাইরে আলোচনার প্রয়োজন মনে করি না।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির চেয়ারপার্সনের দুই উপদেষ্টা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে মানুষ খুন, কেন্দ্র দখল, একচেটিয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়সহ নানা অনিয়মের একটি পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে টডের হাতে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরতেও বিএনপির তরফে আহ্বান জানানো হয়।
জানতে চাইলে সূত্র জানায়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরায়েলি লিকুদ পার্টির নেতার বৈঠক ও তার গ্রেফতার নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়নি। সূত্র এও জানায়, পরিসংখ্যানের বাইরে বিএনপির তরফে কোনো লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে কনসার্ন। তারা এটাই সরকারের কাছে তুলে ধরবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রদূতের নিমন্ত্রণে তারা বার্নিকাটের বাসায় গিয়েছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। যদিও বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন উপদেষ্টার দাবি, এসব আলোচনার বাইরেও আরও বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। যেগুলো ডিসক্লোজড করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মে ঢাকায় আমেরিকান সেন্টার থেকে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় জানানো হয় সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করতে ঢাকা সফরে আসছেন উইলিয়াম টড। এতে আরও জানানো হয়েছিল, ঢাকায় থাকাকালীন, পিডাস টড বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক সমন্বয় নিয়ে ও গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই এর সফরের ধারবাহিকতা নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথেও দেখা করবেন। এদিকে, কয়েক দিন আগে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকা সফর করেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। তবে গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার ‘ভাবনা জানতে’ তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। ওইদিন বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাড়ি ফিরোজায় দেড় ঘণ্টা ধরে তারা আলোচনা করেন। বৈঠকের পর বার্নিকাটকে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে খালেদা জিয়ার মতামত ও ভাবনা জানতে পারার সুযোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন