শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে এমপি সুলতান মনসুর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৯, ৬:১৪ পিএম

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হিসেবে শপথ নেয়ায় মৌলভীবাজার-২ থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের নাম এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। সুলতান মনসুর জানিয়েছেন, তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের মতামত নিয়ে এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেন বুঝেই শপথ নিয়েছেন। কিন্তু দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে শপথ নেয়ার ৫ ঘন্টা পর তাকে গণফোরাম থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সুলতান মনসুরকে নিয়ে টকশো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সর্বত্রই চলছে আলোচনা সমালোচনা বিতর্ক। সংসদে তার সদস্য পদ থাকবে কিনা তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ। সুলতান মনসুরের শপথ কিভাবে দেখছেন দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা?
সাবেক আইনমন্ত্রী সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করেন, দুই কারণে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য যদি তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন (ফ্লোর ক্রসিং) অথবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ নির্বাচিত হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে যদি শপথ না করেন। দল বহিষ্কার করলেও সদস্যপদ থাকবে। কারণ তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারি দলের এমপিরা কোনো ইস্যুতে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তখন ৭০ অনুচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাবে। তাঁদের সদস্যপদ থাকবে না। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে তাঁদের সদস্যপদ যাবে না। তবে এবারের এই পরিস্থিতি একেবারেই নতুন। দেখা যাক কী ঘটে!
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, গণফোরামের দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দুই এমপি শপথ নিলে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ তাঁদের আটকাবে। গণফোরাম এনডোর্স না করলে তাঁদের সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রশ্নে এ ধরনের সংকট এ দেশে আগে কখনো হয়নি। ফলে এটি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। তবে তা সত্ত্বেও ৭০ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য হলো এমপিরা যাতে দলবদল করতে না পারে। সেদিক থেকে সদস্যপদ আটকে যাওয়ার কথা। তবে স্পিকার প্রাথমিকভাবে যদি মনে করেন ৭০ অনুচ্ছেদ ভঙ্গ হয়েছে তখন তিনি বিষয়টি শুনানির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাবেন। কিন্তু কমিশনের শুনানিতে সন্তুষ্ট না হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংবিধানবিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সুলতান মনসুরকে গণফোরাম বহিষ্কার করলে তাঁদের সদস্যপদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা ওই দলের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছেন। সেই মনোনয়ন আবার নির্বাচন কমিশন ‘এনডোর্স’ করেছে। ফলে একটি নিবন্ধিত দলের মনোনয়ন পেয়ে সেই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়া জটিল বিষয়। কারণ ওই দলের কাছে তাঁরা দায়বদ্ধ। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি একেবারেই নতুন।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই সুলতান মনসুরের। তিনি পদত্যাগ করে প্রয়োজনে আবার নির্বাচন করতে পারেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ নিতে পারেন না।
সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে। তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
উল্লেখ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর গণফোরামের সদস্য হিসেবে বিএনপিধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে গণফোরাম থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
দলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং দল থেকে বহিষ্কারের কারণে এর আগে বিভিন্ন সময়ে অনেকের সদস্যপদ খোয়া যায়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বহিষ্কারের সূত্র ধরে সদস্যপদ হারান আওয়ামী লীগের এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর। ২০০২ সালে দল থেকে বহিষ্কার করায় অষ্টম সংসদে বিএনপির মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান সদস্যপদ হারান। সপ্তম সংসদে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ায় বিএনপির ডা. মো. আলাউদ্দিন ও হাসিবুর রহমান স্বপনের সদস্যপদ হারিয়ে ফেলেন। তারও আগে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদানের কারণে মেজর জেনারেল (অব) মাহমুদুর হাসানসহ কয়েকজন সদস্যপদ হারান। আর জাতীয় পার্টি দ্বিখ-িত হওয়ার পর কয়েকজন এমপির সদস্যপদ নিয়ে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আলী ৭ মার্চ, ২০১৯, ৮:০৬ পিএম says : 0
আওযামীলীগ মানি জাতির সাথে বেইমানী
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন