বিশেষ সংবাদদাতা : শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় ঝুলে রইল কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী মহাসড়কের কলাপাড়া ও হাজীপুরে নব নির্মিত দুটি সেতু। অথচ ঐসব স্থানের ফেরি পারাপারে প্রতিদিন হাজার-হাজার সাধারণ মানুষসহ পর্যটকদের দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনা এখনো নিত্যসঙ্গী। উপরন্তু দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রায়ই ফেরি পারাপারও বন্ধ থাকছে। জোয়ার-ভাটার কারণেও অনেক সময় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
গত ২৯ ডিসম্বের কলাপাড়ায় পন্টুনের তলা ফেটে ডুবে যাওয়ার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি পারাপার বন্ধ হয়ে গিয়ে কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পরে। ৩০ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সাময়িকভাবে কলাপাড়া সেতুটি খুলে দিয়ে দুদিনের মাথায়ই আবার তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি চাল বোঝাই একটি ট্রাক ব্রেক ফেল করে ঐ একই ফেরি ঘাটের গ্যাংওয়ে ও পন্টুন হয়ে সোজা নদীতে পড়ে যায়। এসময় ট্রাকটি পন্টুনের সাথে বাঁধা কয়েকটি নৌকার ওপর আছড়ে পড়ে নিমজ্জিত হয়। ঐ ঘটনায় অন্তত ১০টি খেয়া নৌকা নিমজ্জিত হওয়ায় ছাড়াও ২০-২৫জন যাত্রী নদীতে পড়ে যায়। পরে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় জনতা। কিন্তু এর পরেও টনক নড়েনি কতৃপক্ষের।
প্রায় দুই মাস আগে কলাপাড়া সেতু এবং এক মাস আগে একই মহাসড়কের হাজীপুর সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বিষয়টি পটুয়াখালী সড়ক বিভাগ ও বরিশাল সড়ক জোন থেকে সড়ক অধিদফতরকে জানান হয়েছে। সড়ক অধিদপ্তরও বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার পরে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানান হয়েছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এর পরে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সেতু দুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি অদ্যাবধী। অথচ ইতোমধ্যে একাধীক দুর্ঘটনায় কলাপাড়া ফেরিঘাটে জানমালের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরগুনার একটি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় তখন কলাপাড়া ও হাজীপুরের ‘শেখ কামাল সেতু’ ও ‘শেখ জামাল সেতু’ দুটি উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, জাপানের ঋণ মওকুফ করন কর্মসূচী তহবিল ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের কলাপাড়া, হাজীপুর ও মহীপুর-আলীপুরে ৩টি সেতু নির্মিত হয়েছে। ২০০৬ সালের ঐ প্রকল্পের কাজ শুরুর লক্ষ্যে দরপত্র আহবান করা হয় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে। ফলে ১৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যায় ইতোমধ্যে ১৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। নদী শাসনসহ আরো কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ যুক্ত করে এর ব্যায় ২শ’ কোটি টাকা অতিক্রম করবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটির আওতায় কলাপাড়তে ৮৯১.৭৬ মিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ কাজ গত নভেম্বরের শেষ ভাগে সম্পন্ন হয়। ২০১০-এর ১২ জুন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদশ প্রদান করা হলেও ৩০মাসে সমাপ্য ঐ সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৬৫মাসে। প্রকল্পটির আওতায় হাজীপুরে প্রায় ৪৮৩.৭২ মিটার দীর্ঘ অপর একটি সেতুর নির্মান কাজও ডিসেম্বরের প্রথমভাগেই শেষ হয়েছে। এ সেতুটি নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হয়েছিল ২০০৯-এর ১ফেব্রুয়ারীতে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অপর একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতে মামলা করায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। পরবর্তীতে সব জটিলতা কাটিয়ে টিয়ে ২০১২-এর ১৫ফেব্রুয়ারী এর কার্যাদেশ দেয়া হলেও তহবিল সংকট সহ নানা জটিলতায় এ সেতুটির নির্মান কাজেও প্রায় দ্বিগুন সময় ব্যায় হয়।
২০১২-এর ২৫ফেব্রুয়ারী এ সেতু ৩টির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনসহ কলাপাড়া সেতুটি ‘শেখ কামাল সেত’ু, হাজীপুরে ‘শেখ জামাল সেত’ু ও মহিপুরÑআলীপুরে ‘শেখ রাসেল সেতু’ নামে নামকরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এর আগেই ঐসব সেতুর নির্মাণ কাজ যথাক্রমে ১৮%, ১০% ও ৬৩% সম্পন্ন হয়েছিল।
কিন্তু দীর্ঘ কালক্ষেপণের পরে দক্ষিনাঞ্চলের জনগণের বহু কাক্সিক্ষত সেতু ৩টির নির্মাণ কাজ শেষ হবার পরেও শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় তা মাসের পর মাস ফেলে রাখার বিষয়টি সাধারণ মানুষ খুব একটা ভালভাবে নিচ্ছেন না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কলাপাড়া ও হাজীপুরে ফেরি পারপারের বিড়ম্বনা ভোগ করতে গিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্যও করছেন।
এ ব্যাপারে গতকাল বরিশাল সড়ক জোন ও পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল পর্যায়ে আলাপ করা হলে সেখান থেকে শুধুমাত্র ‘সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে’ বলে জানিয়ে আর কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, ঐ একই মহাসড়কের মহিপুর-আলীপুর সেতুটির নির্মাণ শেষে ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পারে তা যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন