অর্থনৈতিক রিপোর্টার : রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়বে না বলে জানিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলেছেন, চাহিদার তুলনায় দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের অতিরিক্ত মজুদ থাকায় দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রীও বিপুল পরিমাণ মজুদ থাকার যুক্তি দেখিয়ে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলেও দেশবাসীকে আশ্বাস দেন।
গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান তারা। বৈঠকে আমদানিকারক, উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার। নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। একই সঙ্গে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে না ফেলতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন করবেন না, যাতে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। কারণ, একটি অতিরঞ্জিত সংবাদ অসৎ ব্যবসায়ীদের প্রতারণার পথ খুলে দিতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, রমজানে টিসিবি’র মাধ্যমে আমরা ১৭৪টি ট্রাকে করে সারা দেশে ক্রয়মূল্যে পণ্য বিক্রি করবো। স্বাভাবিকভাবেই বাজার থেকে আমরা একটু কম দামে বিক্রি করবো। তার মানে এটা নয়, আমাদের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, এটা আমরা চাই। আপনাদেরকে আমদানি করতে হয়। ডিউটি দিতে হয়। আরো অনেক খরচ আছে।
তিনি বলেন, একটা পণ্যের দাম বাড়তেই পারে যদি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম থাকে। আমরা এতোক্ষণ মূল্যায়ন করলাম, আমাদের কোনো পণ্যই চাহিদার চেয়ে কম নেই। বরং বেশি আছে। বৈঠকে ছোলার বাজার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ছোলার চাহিদা বছরে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আমাদের মজুদ আছে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। রোজা চলে গেলে এই পণ্য আপনারা কিভাবে বিক্রি করবেন? ডাল করে বিক্রি করতে হবে।
চিনির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম একটু বেশি, তাই এখানে দাম একটু উঠানামা করছে। আমাদের দেশীয় চিনি শিল্পকে সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে, নয়তো চিনির কলের শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবেন। একটা পরিবারে যদি ৫ জন করে সদস্য থাকে, তাহলে ৫০ লাখ মানুষ এই চিনি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। সেটাকে সংরক্ষণ করার প্রয়াজন আছে। নানা কারণে আমরা একটু ডিউটি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। আমরা এগুলো রপ্তানির বাজার খুঁজছি। আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি করা যেতে পারে। দেশ এখন সাধারণ চাল রপ্তানিরও উপযোগী। তাই দেশের উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি করা হবে। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানি হয়েছে। বর্তমানে সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। এখন সাধারণ চালও রপ্তানি করা হবে। গুদামে চাল রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বৈঠকে জানান, দেশে ১৮ লাখ ৬১ হাজার টন চাল উদ্বৃত্ত আছে। চালের কোনো সমস্যা নাই। গমেরও একই অবস্থা। ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ১৮ লাখ ২৫ হাজার টন চিনি প্রবেশ করেছে। গত বছরের রয়ে যাওয়া মিলিয়ে এখন আমাদের কাছে ২২ লাখ টনের মতো চিনি হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে চিনির চাহিদা রয়েছে ১৪-১৫ লাখ টন। গত বছর ১৭ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। সেখান থেকে ২ লাখ টন রয়ে গেছে। এর সঙ্গে আরো ১৪ লাখ টনের মতো যোগ হয়েছে। এখন দেশে ১৬-১৭ লাখ টন আছে। আরো কয়েক লাখ টন পাইপলাইনে আছে। মসুর ডালের চাহিদা আছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টন। আমরা ইতোমধ্যে ২ লাখ টন আমদানি করেছি। আরো আসছে। ছোলার চাহিদা ৬০ হাজার টন, আমাদের উৎপাদিত হয় ৭ হাজার টনের মতো। গত অর্থবছরে ৩ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করা হয়েছে। এ বছর ২ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন প্রবেশ করেছে। বিপুল পরিমাণ বাড়তি মজুদ রয়েছে।
খেজুর সম্পর্কে তিনি জানান, বর্তমানে ১৩ হাজার মেট্রিক টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে ২৭ হাজার মেট্রিক টন দেশে প্রবেশ করেছে। খেজুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ২২ লাখ মেট্রিক টনের চাহিদার বিপরীতে আমাদের ১৭ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। ৬ লাখ মেট্রিক টন দেশে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, রসুনের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টনের চাহিদা আছে। দেশে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টন উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার টন আমদানি হয়েছে, আরও এলসি খোলা হয়েছে। সেগুলো হলে রসুনের কোনো ঘাটতি থাকবে না। সেখানেও পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আদার ক্ষেত্রেও তাই, হলুদের ক্ষেত্রেও তাই।
সচিব বলেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সুতরাং অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের মনিটরিং সিস্টেম অত্যন্ত জোরদার আছে। বাজার ইন্টারভেনশনের জন্য যে পরিমাণ প্রয়োজন, সে পরিমাণ ছোলা, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও চিনি টিসিবি’র কাছে মজুদ আছে। চিনি শিল্প সংস্থার কাছেও চিনি মজুদ আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন