অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষি খাত প্রধান ভূমিকা রাখলেও গ্রামীণ অঞ্চলে এই খাতের প্রভাবে শহরের তুলনায় দ্বিগুণ হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে; যদিও প্রবৃদ্ধিতে আবার অকৃষি খাতের চেয়ে কৃষি খাত এগিয়ে।
গতকাল মঙ্গলবার দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের ‘ডায়নামিস অব রুরাল গ্রোথ ইন বাংলাদেশ সাসটেইনিং পোভার্টি রিডাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে অ-কৃষি খাতে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়। তবে যে হারে এই প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা তা হয়নি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টও চিমিও ফান, বিশ্বব্যাংকের কৃষি বিভাগের ডিরেক্টর ইথেল সেনহুসার এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতি বিদ মাথুর গৌতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু কৃষি খাতে সে তুলনায় অগ্রগতি কম। নানা প্রতিবন্ধকতায় এই অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। এজন্য এ খাতে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভবন, কার্যকরী বাজারজাত ব্যবস্থা ও নীতি সহায়তা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে গবেষণা বাড়ানো জরুরি।
অনুষ্ঠানে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মতৎপরতা আরো বাড়াতে পারে। কেননা, এই খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আর্থিক সহায়তার বিকল্প নেই। চিমিও ফান বলেন, গত দশকে বাংলাদেশ কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে মনে রাখতে হবে এ দেশে অনেক বেশি মানুষ, কিন্তু জমির পরিমাণ অনেক কম। এর মধ্যেই কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করে সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।
নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকার কৃষি খাতের উন্নয়নে সার, বীজ ও সেচ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। এজন্য বিগত সময়ে কৃষি খাতে এ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গ্রামীণ উন্নয়নে যে নীরব গতিশীলতা এসেছে, তা যেন এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এটি সম্ভব হয়েছে পারস্পরিক নীতি সংস্কার, প্রযুক্তিগত, মানব সম্পদ ও অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন এবং গ্রামীণ মানুষের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে। যদিও দারিদ্র্যতা ও অপুষ্টির হার এখনও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। তারপরও বাংলাদেশ যে অগ্রগতি সাধন করেছে তা প্রশংসনীয়।
অনেক বাধাবিপত্তির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসন, অংশীদারিত্বমূলক অগ্রগতি অর্জন করে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ উন্নয়নে নন-ফার্মের দিকে নজর বাড়ানো, মফস্বল শহরগুলোতে অকৃষি বা নন-ফার্ম খাত গড়ে তোলা, ভবিষ্যতে চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে চাল ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহ দ্রুত করা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করতে পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন