নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দী এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যালক কুমার ভক্তকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা, ছাত্রদের সাথে অশোভন আচরণ ও ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ এনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ। গত ১৬ মে স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব অভিযোগ উত্থাপন করে এই বহিষ্কার করা হয়। চিঠিতে চারটি বিশেষ অভিযোগ ছাড়াও আরো কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দীতে অবস্থিত পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চারটি সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিটি ওই বরখাস্তের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্যামল কান্তি ভক্ত ওই বরখাস্তের চিঠি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ১৬ মে ফারুকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে উদ্দেশ করে লেখা হয়, আপনার বিরুদ্ধে আনীত নিম্ন বর্ণিত অভিযোগসমূহ অদ্যকার পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়, আপনি ছাত্রদের উপর শারীরিক নির্যাতন করেন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেয়ার নাম করে অর্থ গ্রহণ করেছেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। বিদ্যালয়ের ছুটি ব্যতিরেকে অনুপস্থিত থাকেন এবং প্রায়ই দেরি করে বিদ্যালয়ে আসেন। পূর্বেও এসব অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে এবং আপনাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু আপনি এরূপ অবৈধ কর্মকা- থেকে বিরত হননি। তাই ১৩ মে ২০১৬ইং তারিখের ম্যানেজিং কমিটির সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তবে এ ব্যাপারে ফারুকুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিলে সেটা বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন জানা গেছে।
বরখাস্তের চিঠির অনুলিপি স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো হয় বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমি হাবিব জানান, বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের ম্যানেজিং কমিটির বিষয়।
অপরাধীদের শাস্তি হবে আইনমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জে স্কুল শিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠ-বস করানোর নিন্দা জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যারা এ অপরাধে জড়িত তাদের শাস্তি পেতে হবে। গতকাল (মঙ্গলবার) বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করানো, এটা আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয়।...এটা কিন্তু একটা অপরাধ। যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের নিশ্চয়ই শাস্তি ভোগ করতে হবে। কারণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যায় না। এটা আমরা কোনোভাবেই
বরদাশত করতে পারি না। এটা ঠিক যে এই শিক্ষক একজন ছাত্রকে মারধর করেছিল বলে আমি কাগজের রিপোর্টে দেখেছি। তবে যদি সেটাও হয়ে থাকে তাকেও বিচারের আওতায় আনা যেত। তাই বলে তৎক্ষণাৎ মোবাইল কোর্ট ছাড়া ওইখানে এরকম বিচার করাটা এটা বরদাশত করা যাবে না। আমার মনে হয় এটার ব্যাপারেও একটা আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শুক্রবার ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাত দেয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে জখম করে স্থানীয় জনতা। একপর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান তাকে কান ধরে উঠ-বস করতে বাধ্য করেন। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলার পাশাপাশি শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি উঠেছে। তবে ওই ঘটনায় কোনো ফৌজদারি অপরাধ ঘটেনি দাবি করে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, তাই পুলিশের করার কিছু নেই। এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী ওইসব কথা বলেন।
কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা- নিয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “সাবজুডিস মেটার হচ্ছে যখন আদালতে কোনো মামলা থাকে। আর তদন্তাধীন হচ্ছে, যখন পুলিশ এটা নিয়ে তদন্ত করে। এই দুটো সময়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন আছেন তাদের আসলে কিন্তু এ সম্পর্কে মন্তব্য করাটা ঠিক নয়। তাই এ বিষয়ে যে প্রশ্নটা আপনারা করেছেন তা নিয়ে আমার মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।”
ডিএনএ টেস্টে তনুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে সিআইডির প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, “এ দুটো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এগুলো কিন্তু তদন্তের অংশ। এগুলো যখন পুলিশ আদালতে তার প্রতিবেদন সাবমিট করবে তখন কিন্তু এই দুটো প্রতিবেদন সম্পর্কে পুলিশের একটা মন্তব্য থাকবে। এখনো আদালতে যদি এটা কোনো এপ্লিকেশন করা হয়, তাহলে এটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার তারা কী নির্দেশনা দেবে। “এসব ক্ষেত্রে আদালতের অনেক ডিসিশন আছে। আদালতই এটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এটা যথেষ্ট জনগণের মনকে বিচলিত করেছে। জনগণ এটার একটা সুষ্ঠু বিচার চান। এসব প্রেক্ষিত বিচার করে আমার বিশ্বাস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কোনোভাবে পাঠানো যায়, নিশ্চয়ই তারা এটা বিবেচনা করবে।”
মাউশির পরিচালকের বিদ্যালয় পরিদর্শন
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : বন্দরে স্কুল শিক্ষককে পেটানোর পর তাকে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় বন্দরের কল্যান্দি পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ। নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আবদুস সামাদ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। মাউশির পরিচালক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। অপরদিকে এ ঘটনার তদন্তে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত দলে গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে তদন্ত দলের সদস্যসংখ্যা দাঁড়াল ৫-এ। তদন্ত দলকে আগামী ৫ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বন্দর নাগরিক কমিটির সভাপতি ডা: আবদুস সাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল কবির সোহেল। বিবৃতিতে তারা বলেন, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও জাতির জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক। এদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার প্রতিবাদে গতকাল (মঙ্গলবার) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এলাকাবাসীর ব্যানারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, জাতীয় পার্টির নেতা আকরম আলী শাহীন প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন