শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফিলিস্তিনী দূতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : এই সময়ে টক অব দ্য কান্ট্রি ‘ ইসরাইলের লিকুদ পার্টির সদস্যের সাথে বিএনপি নেতার ভারতে এক অনুষ্ঠানে ফটোসেশন ও সরকার উৎখাত প্রসঙ্গ’। দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে এ নিয়ে। সত্য বা সাজানো কি না তার প্রমাণের আগেই ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনী চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সে (সিডিএ) অনাকাঙ্খিত মন্তব্যে ঝড়ের গতি প্রকৃতিতে প্রভাব ফেলেছে। শুধু ডানপন্থী ইসলাম ধর্মের মানুষই নয়, সনাতন ধর্মাবলম্বিরাও তার মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশ্লেষণ করছেন তার ভূমিকা।
অতীতে সরকারের প্রতিনিধির বাসায় ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত নৈশভোজে মিলিত হলেও তা নিয়ে টু শব্দ করেনি ফিলিস্তিন। এবার তাদের ঢাকার দূত কার স্বার্থে এমন বুলি ছাড়লেন? ঘটনার কিনারা না হতেই কেনো সমালোচনামুলক মন্তব্য? এতে কার পালে হাওয়া লাগবে? এর নেপথ্যে কি তার খোঁজ নিচ্ছে ডানপন্থীদের প্রতিনিধি বিএনপি ও তার মিত্ররা। শিগগিরই এ বিষয়ে ফিলিস্তিনে অভিযোগ জানাবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে জানা গেছে।
গত ৫ মার্চ ইসরাইলের লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আসলাম চৌধুরীর ‘ইন্ডিয়ান সিটিজেনস সিকিউরিটি কাউন্সিল’ নামের একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে সেখানে যান। অনুষ্ঠান উপভোগের পর সাফাদির সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন। এই দুইজনের কয়েকটি গ্রুপ ছবি ইসরাইলের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ওই সূত্র ধরে বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় কিছুদিন আগে আসলামের সঙ্গে ভারতে মেন্দি এন সাফাদির সেই সাক্ষাতের খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়। এ নিয়েই এ ঝড়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভিযোগ, তাদের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মুসলমানদের শত্রু এক ইসরাইলী ইহুদির সাথে বিএনপি নেতা বৈঠক করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি বলছে ওই নেতা ব্যক্তিগত সফরে সেখানে গিয়েছেন। এছাড়াও দলটির অবস্থান সব সময়ই ফিলিস্তিনের পক্ষে। ইসরাইলে সাথে বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরপরই দলের তরফ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাৎ করে দলীয় অবস্থানের কথা জানান।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক বিজয় কুমার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আমাদের আলোচনায় আমরা নানা মতের লোকজনকে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম দিই। তাদের সঙ্গে এটুকুই আমাদের সম্পর্ক। সাফাদিকেও এভাবেই আমরা ডেকেছিলাম। দিল্লিতে এসে তিনি আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হবেন, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উনি আমাদের সেমিনারে ১০ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন, ব্যস এটুকুই।
ইসরাইলি লিকুদ পার্টির ওই সদস্য, অনুষ্ঠানের ভারতীয় আয়োজক এবং বিএনপি সমস্বরে বিষয়টিকে স্বাভাবিক বা নিতান্তই ব্যক্তিগত বলে ব্যাখ্যা দিলেও আমাদের গণমাধ্যমে ঘুরেফিরে সেটি ‘ষড়যন্ত্রের বৈঠক’ হিসেবেই প্রচার-প্রকাশ করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ফটোসেশনে অংশ নেয়া আসলাম চৌধুরী গ্রেফতার হয়েছেন। সন্দেহ মুলক ৫৪ ধারায় রিমান্ড চেয়েছে। সাত দিনের রিমা-ে আছেন। সত্য-মিথ্যার প্রমাণ জানতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুটি গণমাধ্যমে ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের রিপোর্ট এবং এ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নজরে আসার পর তিনি তার দেশের কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে তার দেশের কর্তৃপক্ষও নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে তারা এ বিষয়ে আগে থেকেই অবগত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি সহায়তা চায় তাহলে আমরা আমাদের যা আছে তাই দিয়ে সহযোগিতা করব।
গতকাল এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কর্মকর্তা মেন্দি এন সাফাদির সাথে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক করেছে তা এখন প্রমাণিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বর্তমান সরকারকে ভারত ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ সমর্থন দেয়নি। সমর্থন নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ একেক সময় একেক ঘটনার নাটক সাজায় এটি তারই অংশ। তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি তথ্য পেয়েছে তা জাতি জানতে চায়। ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সে (সিডিএ) ঘটনার শেষ হতে না হতেই কি করে সরকারের মুখপাত্রের মতো কথা বললেন তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা প্যালেস্টইনের মুত্তিযুদ্ধ ও তাদের সংগ্রামের সাথে একাত্মতা করে এসেছি। নবী করীম (সা.) বলছেন, এই নাসারা ইহুদিদের বিশ্বাস করো না। আমরা ওদের বিশ্বাস করি না। যে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে, এটা ওদেরই তৈরি ষড়যন্ত্র। আজকে দেশে অরাজগতা আহলে জাহিলাতির নির্যাতন চলছে। এ ব্যাপারে সকলকে সোচ্চার হতে হবে, চুপ করে বসে থাকলে চলবে না।
দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যিনি (আসলাম চৌধুরী) মিডিয়ার কাছে আগেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ব্যক্তিগত সফরে এটা হয়েছে। সেখানে বিএনপিকে সংযুক্ত করা কেনো? বিএনপির আমলেই প্রথমে বাংলাদেশের মানুষের পাসপোর্টে সিল মারা হয়েছে এক্সসেপ্ট তাইওয়ান এন্ড ইজরায়েল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪ সালের ২৫ জুন ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনগোমেজ বাংলাদেশের পতাকাধারী যে বাসভবন সেখানে তৎকালীন ফিলিপাইনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে নৈশভোজ করেছেন। আমার কাছে প্রমাণ আছে, দলিল আছে। যে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে আমি দেখাতে পারি। সেই জনগোমেজ এখনো ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত আছেন। কি করে তিনি সেখানে থাকেন? ওই সংবাদ প্রকাশের পর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, জনগোমেজকে প্রত্যাহার করা হলো, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও এখনো জনগোমেজ আড়াই বছর ধরে কি করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাকেন, এটা আমার জিজ্ঞাসা। এ বিষয়টি নিয়ে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের কোন টু শব্দও শুনা যায়নি। আর এখনকার সাজানো ঘটনা অর্থাৎ সরকারের রান্না করা গরম ভাতে ঘি ফেলছেন। কোনে? সেটাও প্রশ্ন।
বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এডভোকেট আজাহারুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ফিলিস্তিনী চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সে (সিডিএ)-এর মতিগতি প্রশ্নবিদ্ধ। যে শাসকদের সময় আলেম-ওলামা থেকে শুরু করে মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীরাও রেহাাই পাচ্ছে না। খুন হচ্ছেন। সরকারের মন্ত্রীরা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ, নবী-রাসুলের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা বলছে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে ডানপন্থী দলগুলো। অবৈধ সরকারের সাজানো নাটকে কেনো ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রদূত শরিক হলেও তা মুসলমানদের জানার বিষয় আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন