বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কর্ণফুলী টানেল ও রেলপথ আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক লুসাই কন্যা খর¯্রােতা কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল হচ্ছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে যাচ্ছে রেল। চট্টগ্রাম মহানগরীতে হচ্ছে সিটি আউটার রিং-রোড। মুরাদপুর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের যোগাযোগে আসবে ব্যাপক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী-খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যুগোপযোগী উন্নয়নে বড় ধরনের যে প্রকল্পটি এ মুহূর্তে বাস্তবায়নের কাজ চলছে, সেটি হলো ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং-রোড’।
বিগত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আউটার রিং-রোডের চলমান নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। বড়সড় যন্ত্রপাতি দিয়ে মাটি ভরাটসহ সুপরিসর সড়ক অবকাঠামো বিনির্মাণের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম শহর রক্ষায় দীর্ঘদিনের দাবি, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে সর্ববৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে আউটার রিং-রোড। ১৭শ’ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ মেগা প্রকল্পটিতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ৭৫২ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৮২ কোটি টাকা এবং সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে ৮৬৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হচ্ছে। আউটার রিং-রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আগামী ২০১৭ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার টার্গেট রাখা হয়েছে।
নগরীর সর্বদক্ষিণ-পশ্চিমে পতেঙ্গা থেকে উত্তর-পশ্চিমে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোডটি শহর রক্ষায় একটি কার্যকর বাঁধের ভূমিকা পালন করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উঁচু করে আউটার রিং-রোড নির্মিত হচ্ছে। দেশীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লি. (এসইএল) ও ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেএনআর লি. যৌথভাবে প্রকল্পের কার্যাদেশ পেয়েছে। পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা স্টেডিয়াম পয়েন্ট পর্যন্ত ১৭.১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট প্রস্থ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫.২ কিলোমিটার কোস্টাল রোড এবং ২.১৫ কিলোমিটার ফিডার সড়ক। বর্তমান বেড়িবাঁধকে আরও ১০ ফুট উঁচু করে সড়ক নির্মিত হচ্ছে। এর জন্য সাগর উপকূল থেকে পর্যাপ্ত মাটি তোলার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সিডিএ’র চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এর বিনিময়ে সিডিএ চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত অপর একটি মেগা প্রকল্প বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে অনাপত্তি প্রদান করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নগরীর পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তে বিশেষত উপকূলীয় এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। সেখানে রয়েছে দেশের প্রধান জ্বালানি তেল স্থাপনাসমূহ, চট্টগ্রাম বন্দরের একাংশ, শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নৌ ও বিমান ঘাঁটি, দুটি ইপিজেড, ভারী শিল্প, কল-কারখানা, সাইলো ইত্যাদি। বিশাল এলাকাকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে সুরক্ষায় এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটন খাত সম্প্রসারণ, উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে চট্টগ্রামের বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রকল্প আউটার রিং-রোডের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে হালিশহর, ফৌজদাহাট, সাগরিকা, পতেঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় উপশহর সৃজনের সুযোগ তৈরি হবে। প্রসার ঘটবে পর্যটন সম্ভাবনারও।
কর্ণফুলী টানেল
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পাস হয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের এ টানেল নির্মাণকাজ শুরু হবে খুব শিগগির। দেশের প্রথম এ টানেল বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে একেবারেই বদলে দেবে। চীনের সাংহাইয়ের মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর মর্যাদা পাবে চট্টগ্রাম। আশা করা হচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি এ অঞ্চলের কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী-খ্যাত চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা কর্ণফুলী চট্টগ্রামকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। মূল মহানগর এবং বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। অন্যদিকে ভারী শিল্প এলাকা পূর্ব পাশে অবস্থিত। কর্ণফুলীর এপাড়ে সমৃদ্ধ মহানগরী গড়ে উঠলেও ওপাড়ে এখনও গ-গ্রাম। উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি সেখানে। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে কর্ণফুলীর ওপাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ভারী শিল্প কারখানা। নদীর ওপাড়ে আনোয়ারার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)।
টানেলের মধ্যদিয়ে দু’পাড়ের সেতুবন্ধন রচিত হলে নদীর ওপাড়ের আনোয়ারা-পটিয়া থেকে শুরু করে বিস্তৃীর্ণ এলাকা উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় মিলিত হবে। শিল্পায়নের পাশাপাশি সে অঞ্চলের লাখো মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে এমন প্রত্যাশা থেকে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ৯০’র দশকে জাপান ভিত্তিক উন্নয়ন-গবেষণা প্রতিষ্ঠান জাইকা এ ব্যাপারে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদীতে ব্রিজ নির্মাণের বদলে তলদেশে টানেল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। কর্ণফুলীর ওপাড়ের এলাকা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ৯০ সালের দিকেই টানেল নির্মাণের পরামর্শ দেয় জাইকা। কিন্তু নানা জটিলতা আর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাবে ওই টানেল বাস্তবায়ন হয়নি। শত বছরের পুরনো কালুরঘাট রেলসেতুর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীতে আরও দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এসব সেতু নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। যা বন্দরের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে কর্ণফুলী নদী রক্ষা এবং সেইসাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরীর যোগাযোগ সহজতর করতে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সেতু বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি ঠিক করতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চীনের ‘চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে’ (সিসিসিসি) প্রকল্পটির পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাছাই করা হয়। ২০১১ সাল থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সমীক্ষা করে সিসিসিসি রিপোর্ট পেশ করে। ওই রিপোর্টে টানেলের ব্যাপারে বিস্তারিত সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, নদীর তলদেশে টানেল হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এছাড়া পূর্ব প্রান্তের ৪ দশমিক ৯৫২ কিলোমিটার এবং পশ্চিম প্রান্তের ৭৪০ মিটার সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ হবে ৯ দশমিক শূন্য ৯২ কিলোমিটার। এছাড়া টোল বুথ এবং টোলপ্লাজা নির্মাণ করতে হবে ৭২০০ বর্গমিটার। চার লেনের টানেলে উভয় পাশে দুই লেন করে থাকবে। দুইটি টিউব নির্মিত হবে। প্রতিটি টিউবের ব্যাস হবে ১০ দশমিক ৮ মিটার। টানেলটি কর্ণফুলী নদীর কমপক্ষে ৪২.৮ মিটার গভীর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মহানগরীর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে টানেলটি শুরু হয়ে নদীর ওপাড়ে আনোয়ারায় শেষ হবে। সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, টানেল নির্মাণ করা হলে কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়া মাতারবাড়িতে ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, এতে করে টানেলের গুরুত্ব বাড়বে। মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় একটি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। টানেলের সাথে এ মহাসড়কের সংযোগ হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। কালুরঘাট সেতু ও কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে তীব্র যানজটের অবসান হবে। টানেল বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। সেতু বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে চীন। চীনের সাথে ইতোমধ্যে এই ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। খুব শিগগির চীনা প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। আগামী ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
কক্সবাজারে রেল
গতি পাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্প। ইতোমধ্যে একনেকে প্রকল্পটি পাস হয়েছে। শুরু হচ্ছে প্রকল্পের জন্য ভূমিঅধিগ্রহণও প্রক্রিয়াও। এডিবি’র আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। ভবিষ্যতে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিন পর্যন্ত চলে যেতে পারে এই রেলওয়ে সংযোগ। এই রেলপথ বাংলাদেশের ‘পূর্বমুখী’ (লুকইস্ট) কূটনীতিকে সফল করবে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক থার্মাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পকে ঘিরে এই রেলপথের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। তাছাড়া সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার, বান্দরবান অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ও কর্মসংস্থানের বিরাট সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্মোচিত হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগ সহজতর হবে। সড়কপথের ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে আরামদায়ক রেলে পর্যটন শহর কক্সবাজারে পৌঁছতে পারবে দেশি-বিদেশি পর্যকটেরা। পর্যটনের গুরুত্ব বিবেচনা করে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করবে রেল মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গিকার। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় এই অঞ্চলের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ। ওই অঙ্গিকারের অংশ হিসাবে চার বছর আগে ২০১১ সালের ৩এপ্রিল দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুই বছর আগেই কাজটি শেষ হওযার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। পরে প্রকল্পের নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। আর এই কারণে এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করতে দেরি হয়। সেইসঙ্গে প্রকল্প ব্যয় আগের চেয়ে সাত গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, এডিবি প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা দিতে রাজি হয়। নতুন প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন কলাতলী পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় বেড়ে যায়। এখন প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২৫৮ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে। প্রকল্পে ব্যয়ের এক বিলিয়ন ডলার বা আট হাজার কোটি টাকা দেবে এডিবি। বাকি অর্থ দেবে সরকার। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড় শুরু হয়। চলতি অর্থবছরে ৬০৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর আগে চার দফায় যথাক্রমে ১০ কোটি, ২২ লাখ, ৭ লাখ, ১৫ লাখ এবং ৩০৪ কোটি ছাড় দেয়া হয়। ২০১১ সালে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। নতুন নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু হলে তা শেষ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। প্রকল্প সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ১২৮ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকোরিয়া ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, সদর ও উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে এই রেল পথে প্রতিবেশি মিয়ানমার ও চীনের সাথে যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে।
ফ্লাইওভার
নগরীর সর্ববৃহৎ ফ্লাইওভার আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। মুরাদপুর থেকে শুরু হওয়া ফ্লাইওভারটি লালখান বাজারে এসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এটিকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত টেনে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। ৫.২ কিলোমিটারের ফ্লাইওভারে ১৮ কিলোমিটারের গিয়ে শেষ হবে। এজন্য বাড়তি আরও তিন হাজার কোটি টাকার বাজেট ধরা হয়েছে। ঈদের পর পুরোদমে শুরু হবে কাজ। মোট ১১ পয়েন্টে উঠানামার ব্যবস্থা রেখে ফ্লাইওভারটি এগিয়ে নির্মাণ করা হবে। সিডিএ সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর একনেকের সভায় মুরাদপুর-লালখানবাজার ফ্লাইওভার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। চার লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারের মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬২ কোটি ২১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৬ এর জুন পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লাইওভারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটি হবে চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভার। ইতোমধ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ প্রায় ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। পরবর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুরাদপুর ফ্লাইওভারকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড় এবং কদমতলীসহ পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ইতোমধ্যে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, কদমতলী ফ্লাইওভার এবং দেওয়ানহাট ওভারপাসের নির্মাণকাজ শেষ করেছে সিডিএ। আলাদা আলাদা তিনটি জংশনে ফ্লাইওভার করা হলে যানজট আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত অনুসারে চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ৩টি জংশনে আলাদা আলাদা ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিবর্তে মুরাদপুর জংশন থেকে টানা ওয়াসা জংশন পর্যন্ত চার লেইন বিশিষ্ট ৫.২ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। এই অংশের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। এর আগে নগরীর বহদ্দারহাট ও কদমতলী জংশনে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করে সিডিএ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আতিক ১৮ মে, ২০১৬, ৯:৩২ এএম says : 0
খুব ভালো খবর
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন