বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মুক্তির দিগন্তপানে বাঙালির অগ্রযাত্রা

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আজ ১৪ মার্চ। বরেণ্য সঙ্গীত রচয়িতার হৃদয় ছোঁয়া দেশাত্মবোধক গানে পঙ্ক্তিবদ্ধ এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা-সুরমা নদী তটের মানুষ সেদিন একটি নিজস্ব পতাকার স্বপ্নে আলোড়িত হয়ে উঠেছিল। সারাদেশের নগরে শহরে বন্দরে গঞ্জে আর গ্রাম বাংলার মানুষের রাখাল মনে গুঞ্জরিত হচ্ছিল ভালোবাসা জড়ানো শব্দগুচ্ছ-আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
বাঙালি ক্রমেই এগিয়ে চলেছিল মুক্তির দিগন্ত পানে। লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস, গুলি। প্রাণ দিচ্ছিল বাঙালি। রক্তরঞ্জিত হচ্ছিল দেশের মাটি। মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল- ‘রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব। এদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ এ বলিষ্ঠতা, এ প্রত্যয় অনুরণিত হচ্ছিল জনমানসে। স্বাধীনতার অভিযাত্রায় সূচিত হয়েছিল নতুন গতি। সাধ্য কী তাদের অগ্রযাত্রা রোধ করে পাকিস্তানি শাসকেরা!
চাকরিজীবীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে জারি করা সামরিক ফরমানের বিরুদ্ধে এদিন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিল মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, পেশাজীবী, মহিলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে মিছিল ও সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে কড়া নজর রাখা হয় যাতে পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো সম্পদ পাচার না হয় বা সামরিক বাহিনীর জন্য কোনো রসদ সরবরাহ করতে না পারে। বাংলা একাডেমীতে লেখক সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এদিন বের করা হয় লেখক শোভাযাত্রা। ডিআইটি টিভি ভবন প্রাঙ্গণে টিভি ও নাট্যশিল্পীরা সমাবেশের আয়োজন করেন।
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে তখনো চলছিল ইঁদুর-বিড়াল খেলা। ক্ষমতালোভী পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি সকল নীতি-নৈতিকতা সিন্ধুর মরুমধ্যে বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাই এদিন প্রকাশ্যেই ব্যক্ত করেছিলেন তার নির্লজ্জ ফরমুলা- ‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতা দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে হস্তান্তরই বর্তমান সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।’
তার এ ফরমুলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় পাকিস্তানের দুই অংশেই। বালুচিস্তানের রাজনৈতিক নেতা নওয়াব আকবর খান বুগতি তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি আশা করি সাংবিধানিক সঙ্কট নিরসনে যত দ্রুত সম্ভব প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে জীর্ণ সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আলোচনা শুরু করবেন।’ বস্তুত শুধু পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), জামায়াতে ইসলাম এবং মুসলিম লীগ কাইউম খান ছাড়া পাকিস্তানের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনসহ তার দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
এদিন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তান ন্যাপ নেতা খান আবদুল ওয়ালি খান। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে তার সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে তিনি অবশ্যই আলোচনায় অংশ নেবেন। তবে যতদিন বাংলার জনগণের অধিকার আদায় না হবে, যতদিন বাংলার জনগণ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বসবাসের সুযোগ না পাবে এবং যতদিন তাদের মুক্তি না আসবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন ও সংগ্রাম চলতেই থাকবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন