বিশেষ সংবাদদাতা : পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এখন একটি অচল প্রতিষ্ঠানের নাম। এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নমূলক সকল কর্মকা- পড়েছে মুখ থুবড়ে। কোন সমন্বয় নেই। পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, বদলি, বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদোন্নতি, জনবল সঙ্কট এখন প্রতিষ্ঠানটিকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আবদুল লতিফকে ডিজি বানানো হয়েছিল। আগামী রোববার তার শেষ কার্যদিবস। আজ বৃহস্পতিবার কিম্বা আগামী রোববার নতুন ডিজি (মহাপরিচালক) নিয়োগ দেয়া হবে পাউবো’তে। কে হচ্ছেন নতুন ডিজি এনিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। অনেকেই বলাবলি করছেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আবারো মহাপরিচালক পদটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে, বারবার কেন এই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সরকারে আওয়ামী লীগ থাকলেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি যেভাবে চাচ্ছেন- সেভাবেই চলছে পাউবো। জানা যায়, বিভিন্ন প্রকল্পে সময় বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এতে করে লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার, বেড়ে যাবে প্রকল্প ব্যয়। ফলে সরকার লোকসানের কবলে পড়বে।
পাউবো’তে এমন আলোচনাও রয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা হওয়ার কারণে একজন সিনিয়রকে বাদ দিয়ে জুনিয়রকে ডিজি করা হয়েছে। এবারও ওই কর্মকর্তাকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি সমর্থক এমন কাউকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বানানো হবে বলে গতকাল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিতে দিনভর গুজব ছিল। তবে এই গুজব কতটুকু সত্য তা রোববারের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে, ডিজি পদ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরগুলোতেও জুনিয়রদের বসানো, দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের হওয়া ব্যক্তিদের ভাল জায়গায় বদলি এবং পদোন্নতি পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে পাউবোর মাঠ প্রশাসনে চলছে নানা ক্ষোভ।
জানা যায়, সমন্বয়হীনতা এতটাই প্রকট যে মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ পাউবো, ড্রেজার পরিদপ্তর, নদী গবষেণা ইনস্টটিউিট, যৌথ নদী কমশিন (জেআরসি), বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর সব প্রতিষ্ঠানেই চলছে বিশৃঙ্খলা। মাঠ প্রশাসন একবারেই অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পাউবো ও ড্রেজার পরিদপ্তর একেবারেই গতিহীন। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্ণধার থাকলেও তারা স্বাধীনভাবে কোন কাজ করতে পারেন না। পানিসম্পদ মন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরই নির্ভর করে তাদের সবকিছু। জনবলের ঘাটতি থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ দপ্তর ও পরিদপ্তরগুলোতে কোন নিয়োগ নেই। জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রায় ৮০ জন এ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নেয়া হলেও তাদের ৬০ ভাগ চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। পাউবো’র পুরো কাজই এখন সিজিআইএস নামক প্রতিষ্ঠান নির্ভর। একই ধরণের অভিযোগ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের।
একমাসের মধ্যেই দু’জন পিডি-কে বদলি করা হয়েছে নিয়ম লঙ্ঘণ করে। পিডি বদলের ক্ষেত্রে মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করে একটি সার্কুলার জারি করা হলেও-এক্ষেত্রে ওই সার্কুলার মানা হয়নি। ফলে গড়াই প্রকল্পের পিডি আসাফুদৌলা-কে ময়মনসিংহে এবং ময়মনসিংহের পিডি আবদুল মান্নান-কে গড়াইতে বদলি করা হয়েছে। এই বদলি করা হলো বর্তমান ডিজি’র দায়িত্ব শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পূর্বে।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার পাউবো পদোন্নতি সংক্রান্ত বৈঠক রয়েছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কামালুর রহমান তালুকদার পিআরএল-এ যাওয়ায় এই শূন্য পদটি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এতে করে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং একজন নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাবেন। কারা পাচ্ছেন এই পদোন্নতি-এ নিয়েও গুঞ্জন চলছে। প্রশ্ন উঠেছে-এখানেও কী জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘণ হবে!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন