সীতাকুন্ড উপজেলা সংবাদদাতা : সীতাকুন্ডে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে আব্দুল মালেক (২৮) নামক এক যুবককে নিজ ঘর থেকে অপহরণ করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। নিহত মালেক চাঁদপুর জেলার হবিগঞ্জ থানাধীন করাদী শিকদা পাটোয়ারী বাড়ির ছিদ্দিক পাটোয়ারীর পুত্র। তবে তারা স্থানীয় শীতলপুর বগুলা বাজার এলাকার ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছে। গতকাল (বুধবার) ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় হত্যায় জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আব্দুল খালেক সুনির্দিষ্ট ১৩ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সীতাকু-ের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চৌধুরীঘাটা এলাকার আজবা কোয়ালিটি ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরীর মালিক রিফাত চৌধুরী ও আজমের নেতৃত্বে ১৩/১৪ জন কারখানার কর্মী হঠাৎ পার্শ্ববর্তী শীতলপুর বগুলা বাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ বশিরের ভাড়াটিয়া চাঁদপুরের ছিদ্দিক পাটোয়ারীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করে এবং আব্দুল মালেককে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে মালেক ঘর থেকে বের হলে আজমের নেতৃত্বে পানির কারখানার কর্মীরা তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল মালেকের প্রতিবেশী মোঃ সেলিম প্রতিবেদককে জানান, গভীর রাতে আজমের নেতৃত্বে কিছু লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে মালেককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে জানতে পেরে আমি সেদিকে এগিয়ে গেলে সেলিম আমার কাছে সাহায্য চায়। কিন্তু তাদের সবার হাতে লাঠি ও রড জাতীয় অস্ত্র থাকায় আমি বাধা দিতে পারিনি। দুষ্কৃতীরা তাকে চৌধুরী মসজিদের সামনে ব্যাপক মারধর করে। শেষে ঐ পানির কারখানার ভেতরে নিয়ে যায়। রাত ১টার দিকে ঐ কারখানার দিকে ছুটে যান মালেকের বাবা ও প্রতিবেশী সেলিম। তার বাবা ছিদ্দিক পাটোয়ারী প্রতিবেদককে বলেন, রাত ১টার দিকে আমি ও সেলিম আজবা পানির কারখানায় গেলে মোঃ আজম ও কারখানার মালিক রিফাত চৌধুরী এগিয়ে এসে বলেন, এখানে থেকে কোন লাভ হবে না। ছেলেকে নিয়ে যেতে হলে মোবাইল বাবদ ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিলে তাকে ফেরত দেওয়া হবে। নইলে তাকে পুলিশে দেওয়া হবে। বহু চেষ্টা করেও তাকে ছাড়াতে না পেরে শেষে আমরা ফিরে আসি। ঘরে ফিরে সারা রাত তার মা ও আমি ছটফট করতে থাকি। পরে জানতে পারি আজবা কোয়ালিটি ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানার দারোয়ানের কক্ষে নিয়ে গিয়ে আব্দুল মালেকের হাত পিছমোড়া করে শিকলে বেঁধে লাঠি, রড ও বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে সারা রাত তাকে নির্মমভাবে পিটানো হয়। মাথার পেছনে ভারী আঘাতের কারণে সারা রাত রক্ত ঝরে তার শরীর থেকে। এভাবে বিনা চিকিৎসায় গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থেকে গতকাল (বুধবার) সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
পরে পুলিশে খবর দিলে সকাল সাড়ে ১০টা সীতাকু- থানার এস.আই ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে পোস্টমর্টেমের জন্য প্রেরণ করেন। এসময় এলাকাবাসী মালেকের উপর হামলায় জড়িত ঐ কারখানার ৫ কর্মীকে আটক করে পিটুনি দিতে চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। আটককৃত ৫জন হলো, সীতাকু-ের বাড়বকু- দক্ষিণ মাহমুদাবাদ গ্রামের আলতাফ হোসেনের পুত্র কামরুল হোসেন শ্যাম (১৮), কক্সবাজার পেকুয়া শিলখালী গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের পুত্র মোঃ জামান (২৪), চকরিয়ার উত্তর সাদা গ্রামের নুর মোহাম্মদের পুত্র মোঃ ফোরকান (২০), হাটহাজারী চিকনদন্ডী গ্রামের ছাদেক আহমদের পুত্র নুরুল আলম (২৮) ও লোহাগাড়া আমিরাবাদ মাষ্টারপাড়ার মৃত হাজী আমিন উল্লাহর পুত্র মোঃ খায়ের আহমদ (৫০)।
সীতাকু- থানার এস.আই মোঃ কামাল উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আব্দুল মালেক নামক ঐ যুবককে পিটিয়ে হত্যার খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছি। এসময় তার শরীরে ব্যাপক পিটুনির চিহ্ন ছিলো। হাত পেছনে শিকলে বাঁধা ছিলো। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আব্দুল মালেক প্রকাশ আব্দুল বাদী হয়ে সীতাকু- থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এতে পানির কারখানার মালিক রিফাত ও আজমসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৫ জন আটক আছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান সীতাকু- থানার ওসি মোঃ ইফতেখার হাসান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন