ইনকিলাব ডেস্ক: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘জেনারেল ওসমানী ও তাজউদ্দিনের উপদেশ গ্রহণ না করে শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের হাতে ধরা দিয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন কামাল হোসেনকে। তখনকার দিনে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তার যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, সেটা আজকের আলোচনায় আসতে পারলে ভাল হতো।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বুধবার বিকালে তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও সামাজিক উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। আলোচনার আয়োজক ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান ১৯৮০ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর আগে ১৯৭৮ সালে একটা এফিডেবিট তৈরি করে সেটা বাকুরা হাইকোর্টে রিট হিসাবে জমা দেওয়া হয়। ওটা ভাল করে পড়া দরকার। মানুষ মৃত্যুর আগে খুব একটা মিথ্যা কথা বলে না।’
উনি (ইয়াহিয়া খান) লিখেছিলেন, ‘শেখ মুজিব একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক। একজন দেশপ্রেমিক নেতা। উনি পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার চেষ্টা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানও শেখ মুজিবকে সম্মান, শ্রদ্ধা করতেন। তাই তিনি তার নামে স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়েছিলেন। এই ব্যাপারে তর্কের কোনো অবকাশ নেই। ওই ঘোষণা না হলে আমরা হয়তো পরাধীন থাকতাম, স্বাধীনতার ঘোষণাটাই ছিল মূল চালিকাশক্তি। শেখ মুজিবুর রহমান কখনো বলেননি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।’
শহীদের সংখ্যা প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘লন্ডনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি (শেখ মুজিব) ৩ মিলিয়ন বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ৩ মিলিয়ন লোকের আত্মাহুতি হয়েছে। উনি ১০ জানুয়ারি ঢাকাতে এসে বলেছিলেন, সেখানেও ৩০ লাখের কথা রয়েছে। যখন তিনি অফিসে বসে অনুধাবন করলেন ( শেখ মুজিব বড় নেতা, তার সততা আছে), তিনি আওয়ামী লীগের যত এমপি আছে তাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা তৈরির কথা বললেন।’
‘তার আমলে ৪২ হাজার জনকে ভাতা দেওয়া হয়েছিল। এটা অস্বীকার করা যাবে না। আসাফুদৌল্লাসহ কয়েকজনের কাছে শেখ মুজিব জানতে চাইলেন, কতজনের তালিকা করেছ? তারা ৬৭ হাজারের কথা বলেন। আরো বেশি লোক দরকার। পরে ১২ জনকে দিয়ে কমিটি করলেন। সেখানে আমারও একজন ডাক্তার ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগেরও একজন এমপি আছে, যিনি বেঁচে আছেন। তার কাছে কপি থাকা উচিত, তারা কি পেয়েছিলেন? তারা ২ লাখ ৬৯ হাজার পেয়েছিলেন’ বলেন জাফরুল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় ১৬ ডিসেম্বর প্রবাসী সরকার দেশি-বিদেশি হিসাব মতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছিল ১৫ লাখ। কিন্তু আমাদের নেতা ( শেখ মুজিব) একটি সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। তিনি মনে করেছেন, যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন সেটাকে লিপিবদ্ধ করে রাখা দরকার। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়া তো শেখ মুজিবকেই সম্মান দিয়েছেন, এখানে কটূক্তি করার প্রয়োজন নেই।’
জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান জাতিকে একত্রিত করেছিলেন। বিএনপিতে যত মুক্তিযোদ্ধা আছে, অন্য কোথাও এত মুক্তিযোদ্ধা নেই; আওয়ামী লীগেও এত মুক্তিযোদ্ধা নেই। কারণ ভাসানী অনুসারী সব মুক্তিযোদ্ধা বিএনপিতে এসেছেন। বিএনপিতে যত বাম আছে অন্য কোথাও নেই। সুতরাং একটা ঘটনাই একজনকে অমর করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ শেখ মুজিব শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, সারা বাংলাদেশের মানুষের নেতা। তেমনিভাবে জিয়াউর রহমান শুধু বিএনপির নেতা নন সারা বাংলাদেশের মানুষের নেতা।’
সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদেও মৃত্যুতে কেনো বিএনপি শোক জানালো না এরও সমালোচনা করেন জাফরুল্লাাহ চৌধুরী। এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির ভিন্নতা প্রমাণ করতে বলেন তিনি।
তিনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তাগিত দেন।
সংগঠনের সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ড. খলিলুর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ টি এম নরুল আমিন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন