আফজাল বারী : হতাশা-জটিলতা ভর করছে বিএনপিতে। এ অবস্থা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্ব নিয়ে। এই বিলম্বেই ভালো-মন্দ খুঁজছে দলটির নেতা-কর্মীরা। কেউ বলছেন বিতর্ক এড়িয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে বিলম্ব হতেই পারে। কেউ বলছেন উল্টোটা। দীর্ঘ নয় বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। পুরো সময়টা নেতৃত্বের পরীক্ষা চলছে। তারপর যোগ্যতা মাপার এই বিলম্বের শেষ কবে। কমিটিতেই সব কিছু ঘুরপাক খেলে সমস্যা সঙ্কুল দেশ-জাতির জন্য দলের রাজনীতি কোথায়? এতে করে আশার বদলে বরং হতাশা বাড়াচ্ছে। সাথে যোগ হচ্ছে নানান জটিলতাও। দ্রুত কমিটি গঠন করে জনদাবি সম্বলিত চলমান ইস্যুতে নিজেদের সম্পৃক্ত করার দাবি উঠেছে দলের অন্দরে-বাইরে। মূল দলের এহেন পরিস্থিতিতে অঙ্গ সংগঠনে আভ্যন্তরীণ বিরোধ মারামারি থেকে খুনাখুনিতে গড়াচ্ছে। এ বার্তা ভালো নয়।
আলাপকালে দলটির নেতাকর্মী ছাড়াও শুভাকাক্সক্ষীরা ইনকিলাবকে জানান, নয় বছর আগে ক্ষমতার ছাড়ার পর থেকেই বিএনপি অব্যাহত বিপর্যয়ে পতিত। হামলা-মামলা, কারাবরণ, আইনি লড়াই, আন্দোলন-সংগ্রাম সবই দলীয় নেতাকর্মীকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। এই বৈরী পরিস্থিতিতে কোন নেতা কি ধরনের ভূমিকা রেখেছে এটি শুধু বিএনপির হাইকমা-ই নয় শুভাকাক্সক্ষীদের নখদর্পণে। রাজনৈতিক দক্ষতা-যোগ্যতা, ত্যাগ-তিতিক্ষায় কোন নেতা পুরস্কার বা তিরস্কার পেতে পারে তা বাছাই করতে মাসের পর মাস পার হবার কথা নয়।
দলটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয়েছে গত ১৯ মার্চ। আজ দুই মাস পার হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে তিন ধাপে মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৪২ জনের আংশিক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর দলটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা স্বস্তির পাশাপাশি বড় দাগে দলের অন্দর-বাইরে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ; চাপা ক্ষোভ। সিনিয়র-জুনিয়রের সমন্বয় ঘটেনি। তৃণমূল থেকে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে বেশ উষ্মা বিরাজ করে।
সূত্রটি আরো জানায়, স্থায়ী কমিটির বেলায় আবেদনের সংখ্যা কম হলেও নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার নেতার বায়োডাটা জমা পড়েছে শীর্ষ নেতার কাছে। আছে প্রভাবশালী নেতার তদবিরও। পদ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবে উড়িয়ে দিলেও ভেতরে ভেতরে বেশ কড়া করেই ধরেছেন। সম্পাদক পদের জন্য নেতা নির্বাচনের বেলায় পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদের পারিবারিক ঐতিহ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনীতির বয়স সবই নিজেই টেককেয়ার করছেন। ইতোমধ্যে নবনিযুক্ত যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সফর দলের জন্য কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যেনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকটা সামাল দিতেই কমিটি ঘোষণা বিলম্ব করছেন তিনি। এ তথ্য চেয়ারপার্সনের ঘনিষ্ঠজন সূত্রের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির মতো বৃহৎ দলের এতো বড় কমিটি করতে কিছু সময় লাগতেই পারে। এটাকে দলের দুর্বলতা বলা যাবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহম্মেদ ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন নিজে বিবেচনায় কমিটি গঠন করছেন। দলের ত্যাগী, নিবেদিত প্রাণ ও যোগ্য সকল দিক বিবেচনা করতে কিছুটা সময় তো লাগতেই পারে। তিনি বলেন, কমিটির অংশবিশেষ তিন ধাপে ঘোষণা করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ক্রমান্বয়ে বাকিটা ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
দলের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ইনকিলাবকে বলেন, বিলম্বে কমিটি গঠন নিয়ে উভয় ধরনের ব্যাখ্যা আছে। সাধারণ কর্মীরা মনে করেন দলীয় প্রধান যাদের দায়িত্ব দেবেন তাদের সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তাতে সময় লাগাটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে পদ-পদবীর জন্য যারা অপেক্ষা করছেন তাদের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা থাকতেই পারে। তবে ভালো কিছু করবার জন্য সময় নেয়াই মঙ্গল বলে আমি মনে করি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) আসম হান্নান শাহ বলেন, দ্রুত কমিটি ঘোষণা করে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে নিজেদের উপস্থিতি দরকার। জাতীয়, রাজনৈতিক ইস্যুতে মানুষের মনে সরকারের ঠাঁই শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে সেটাকে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন