দীর্ঘকাল ধরে যক্ষা বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রধান সংক্রামক রোগের স্থান ধরে রেখেছে। এ রোগে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে দরিদ্র এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সংক্রামক এ রোগটি ২০৩৫ সালের মধ্যে নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি (এ্যন্ড টিবি) কর্মকৌশল ঘোষণা করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালে যক্ষাকে মহামারি হিসেবে উলেখ করে এ রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য কর্মকৌশল অনুমোদ করে। উচ্চ ভিলাষী সেই কর্মকৌশল অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে যক্ষারোগের মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ আনতে হবে। পাশপাশি সনাক্তকৃত যক্ষা রোগীর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষাকে গ্লোবাল এমার্জেন্সি ঘোষণা করে। সংস্থা প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষা রোগী সর্বাধিক তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ১০ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ নতুন ভাবে যক্ষারোগে আক্রান্ত হয় এবং এক দশমিক ৩ মিলিয়ন লোক এ রোগে মৃত্যু বরণ করে। এসব মৃত্যুর বেশীরভাগই ঘটে থাকে উন্নয়নশীল দেশে, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে কর্মক্ষম নারী পুরুষই বেশি। যক্ষা রোগকে বিশ্বের শীর্ষ মানুষ হত্যকারী সংক্রামক রোগ হিসেবে উল্লেখ করে সংস্থাটি দাবি করে, এ রোগে প্রতিদিন ৪ হাজার ৫০০ জন প্রাণ হারায়।
জতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচীর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর লাখে ২২১ জন নতুন করে যক্ষায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ জন মারা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৬ জন যক্ষারোগী আছে। এর মধ্যে শিশু যক্ষারোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৩৫২ জন।
২০১৮ সালে যক্ষা বিষয়ে নিউউয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের ‘আন্ডার টু এ্যন্ড টিউবারক্লোসিস : এন আরজেন্ট গ্লোবাল রিসপন্স এপিডেমিক’ শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যক্ষা নির্মূলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার রোগীকে সনাক্ত এবং চিকিৎসার আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এরমধ্যে এক লাখ ১০ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজার ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষারোগী অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এছাড়া ৯ লাখ ৬৯ হাজার রোগীকে এই সময়ে যক্ষা প্রতিরোধের আওতায় আনার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমবিডিসি) প্রফেসর ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্ধারিত সময়েই আমরা আমাদের লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারবো’। কেননা প্রচলতি পদ্ধতির পাশপাশি বাংলাদেশ সরকার ১৯৩টি জিন এক্সপার্ট মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষাসহ সব ধরনের যক্ষারোগী সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া কর্মসূচি সমন্বয়, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, সরকারী ও বেসরকারি সংস্থার অংশীদারিত্বে গৃহিত কর্মসূচি সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাই ‘নির্ধারিত সময়ে যক্ষা নিয়ন্ত্রনের পাশপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্র (এসডিজি) অর্জন করতে সক্ষম হবো’ বলে উল্লেখ করেন ডা. শামিউল ইসলাম।
এদিকে দেশব্যাপি আজ বিশ্ব যক্ষা দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচি জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে জানানো হয়, যক্ষা রোগ নির্মুলে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে সরকার যক্ষা রোগীর মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ ও প্রকোপের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায়। এ লক্ষ্যে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাকসহ ২৫টি বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ চেষ্ট এন্ড হার্ট এসোসিয়েশন মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে দু’দিন ব্যাপী ইনোগ্রাল সেশন এবং সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করেছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ইটস টাইম’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন