শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-সোফিয়া অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ

বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক

প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৫ এএম, ২০ মে, ২০১৬

বাসস
ঢাকা এবং সোফিয়ার মধ্যে অর্থপূর্ণ ও কার্যকর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনিলিয়েভ বলেছেন, দুই দেশ শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তিসহ অন্যান্য খাতে একযোগে কাজ করে সম্ভাবনার দ্বারকে অবারিত করতে পারে। তিনি বলেন, ‘দুই দেশ তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথভাবে সহযোগিতার ক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে পারে।’ বুলগেরিয়া সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশের প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনিলিয়েভ’র সঙ্গে গতকাল বিকেলে (স্থানীয় সময়) প্রেসিডেন্সি প্রাসাদে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্লেভনিলিয়েভ এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পৌঁছালে রোজেন প্লেভনিলিয়েভ প্রটোকল সীমানা পেরিয়ে তাকে ভবনের করিডোরে এসে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। প্লেভনিলিয়েভ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের এক মহান নেতা হিসেবে হিসেবে অভিহিত করেন।
এহসানুল করিম জানান, সৌজন্য সাক্ষাৎ শুরুর পূর্বে দুই নেতা কিছু সময় একান্ত  বৈঠকে মিলিত হন। বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকালে সেদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক দু’জন উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশে বুলগেরিয়ার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে পারে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ এবং বুলগেরিয়ার মধ্যে বিভিন্ন সেক্টরে পারষ্পরিক অর্থবহ সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বুলগেরিয়া ইউরোপের প্রেক্ষাপটে ভাল অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের প্রসঙ্গে বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, তারা সিজনাল অভিবাসীদের ‘ব্লু কার্ড’ প্রদানের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের জন্য কাজের সুযোগ দিয়ে থাকেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন বুলগেরিয়ার সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বুলগেরিয়া বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) স্মরণ করেন, বুলগেরিয়া বিশ্বের চতুর্থ এবং ইউরোপের দ্বিতীয় দেশ, যারা মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় বুলগেরিয়াসহ পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই গতি হারিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও বুলগেরিয়ার মধ্যে কৃষি, তথ্য প্রযুক্তি ও পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অর্জিত অভিজ্ঞতা বুলগেরিয়ার সঙ্গে বিনিময় করতে চায়।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবং বুলগেরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আল্লামা সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে বুলগেরীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থে কৃষি, জ্বালানি, আইসিটি, সমুদ্র ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে বুলগেরিয়ার বিনিয়োগ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে আমরা দেশে একটি বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। কৃষি, জ্বালানি, আইসিটি, সমুদ্র এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক আকারে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনারা এ সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারেন। বুলগেরিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সোফিয়ার হোটেল মেরিনিলার দ্বিপক্ষীয় সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ অনুরোধ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ৭ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট থেকে ১৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। আমরা এখন প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপন করছি।’ তিনি আরো বলেন, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি পার্ক স্থাপন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বুলগেরিয়ার উদ্যোক্তারা এখাতেও বিনিয়োগ করতে পারেন।
সমুদ্র খাতের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধ সমাধান করা হয়েছে। দেশব্যাপী ৫ হাজার ৫শ’ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিটি খাতেও বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের সমন্বয়ে বিবিআইএন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বাজারকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে এটি হবে এ অঞ্চলের আরেকটি বাজার।
বুলগেরিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বাংলাদেশের বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন