রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুর্ভোগের শেষ কবে

বহদ্দারহাট-কালুরঘাট সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পাইপ লাইন স্থাপনে আড়াই বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এই কারণে সড়কের এক পাশ বন্ধ। অন্যপাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। বড় বড় গর্তে ভরা সড়কের বন্ধ অংশ এখন অঘোষিত পার্কিং, কাদামাটির স্তুপ, নির্মাণ সামগ্রী আর পরিত্যক্ত যানবাহনের বাগাড়। চালু অংশ অতিরিক্ত ও ভারী যানবাহনের ভারে চলাচলের অযোগ্য। যানজট সেখানে স্থায়ী রূপ নিয়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা।
চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম বহদ্দারহাট থেকে সিঅ্যান্ডবি, কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কের চিত্র এখন এমন। ওয়াসা বলছে তাদের পাইপ লাইনের কাজ শেষ। সিটি কর্পোরেশন বলছে, এখনও রাস্তা কাটছে ওয়াসা। ছয় কিলোমিটার এ সড়ক সংস্কারে ৭১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সংস্কার কাজ শুরু হলে তা শেষ হতে সময় লাগবে অন্তত এক বছর। তবে কবে কাজ শুরু হবে তা অনিশ্চিত। দুর্ভোগ আর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ স্থানীয়দের প্রশ্ন আরকান সড়কে অশেষ এই যন্ত্রণার শেষ কবে।
নগরীর ব্যস্ততম বহদ্দারহাট মোড় থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। তবে আসন্ন বর্ষায় পুরো এলাকায় দুর্ভোগ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। তারা বলছেন, প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এক কিলোমটিার সড়ক পার হতে সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। ওই এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠার উপক্রম হয়েছে। সড়কে দীর্ঘদিন ধরে গর্ত আর কাদামাটি থাকায় বেসরকারি অফিস, বীমা ও শো-রুমসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ছেলে মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতে দুর্ভোগের কারণে বাসা ছেড়ে চলে গেছেন অনেকে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় রয়েছে অনেক কল-কারখানা, আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিকটবর্তী মোহরায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের বাড়ি। অতিষ্ঠ স্থানীয়দের প্রশ্ন এ দুর্ভোগ লাঘবে সিডিএ চেয়ারম্যানের কি কোন দায়-দায়িত্ব নেই।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের একপাশ পুরোপুরি বন্ধ। অন্যপাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। স্থানীরা ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-পটিয়া এবং উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী-রাউজান-রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাইর যাত্রীরা যাতায়াত এ সড়ক হয়ে। গত আড়াই বছর ধরে এ সড়কে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী-পথচারীদের। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা যাচ্ছে না।
ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, সড়কটির অবস্থা বেহাল কয়েক বছর ধরে। ওয়াসার কাটাকাটির কারণে সড়কে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলেই কাদা পানিতে প্লাবিত হয় এলাকা। আর রোদ হলে ধুলো-বালির আস্তরণ। স্থানীয়দের অবস্থা এখন কাহিল। মুদি দোকানি হুমায়ুন কবির বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠার উপক্রম হয়েছে। সড়কের বন্ধ অংশের অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। একটু ভারি বর্ষণ হতেই সড়কে পানি উঠে। সড়কের যে অবস্থা তাতে আগামী বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। স্থানীয়রা জানান, ওয়াসার কাটাকাটির মধ্যেই কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিও সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করেছে। ওয়াসা এখনও কোথাও কোথাও রাস্তা কাটছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কাজী ইয়াকুব সিরাজ-উদ-দৌলা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পাইপ লাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনকে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে সড়কটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। এখনও কাটাকাটি চলছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কিছু পাইপ ফেটে যায়, মেরামতের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। আজ কালের মধ্যে সেটি মেরামত করে দেওয়া হবে।
ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানান, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় তবে দুই বর্ষায় কাজ করতে না পারায় সময় কিছুটা বেশি লেগেছে। কারণ অল্প বৃষ্টিতেই এ সড়কে পানি উঠে যায়। সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে সড়কের এই অংশটি নতুনভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরো এক বছরের মতো। সামনে আসছে বর্ষা মৌসুম। তাই কাজ শুরু হলোও পুরোদমে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বহদ্দারহাট-কালুরঘাট সড়ক সংস্কারের জন্য ৭১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কর্পোরেশনের ১২৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। সেখানে এ সড়কও আছে। সড়ক সংস্কার কাজের জন্য খুব শিগগির দরপত্র আহŸান করা হবে। মে মাস নাগাদ দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলে কাজ শুরু হবে। তবে বর্ষার কারণে কাজ শেষ হতে সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ওয়াসা কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করলেও তারা এখনও সড়কে কাটাকাটি করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন