মো. মানজুরুল হক, কুলাউড়া থেকে : ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে আকস্মিক বন্যায় কুলাউড়া পৌরশহরসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আকস্মিক বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসকল এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। সড়কের উপর পানি ওঠে যাওয়ায় উপজেলা শহরের সাথে অনেক ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গতকাল পৌরশহর, রাউৎগাঁও, পৃথিমপাশা, ব্রাহ্মণবাজার, ভূকশীমইল ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে পানি নেমে এসকল এলাকার ঘর-বাড়িতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি ঢুকে যায়। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গুগালীছড়া, ফানাই, মনু নদীর ওপরে ৫ থেকে ৬ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বর্ষণের ফলে কুলাউড়া উপজেলার গোগালী ও ফানাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে একাধিক স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানিতে মানুষের দুর্ভোগ ছিলো অবর্ণনীয়। কুলাউড়া-রবিরবাজার সড়কের স্কুল চৌমুহনী ও চৌধুরীবাজার এলাকায় সড়কের ওপর পানি থাকায় এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যায় রাউৎগাঁওয়ের কৌলা ও মুকুন্দপুর, ব্রাহ্মণবাজারের খুমিয়া, হিঙ্গাজিয়া, মিশন এলাকা, কাদিপুরের চুনঘর, গুপ্তগ্রাম পৃথিমপাশার হাসামপুর, গণিপুর, ভুকশীমইলের সাদিপুর, কোরবানপুর, গৌড়করণ এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদিকে গতকালের টানা বৃষ্টিতে রাতেই কুলাউড়া পৌরশহরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিবদ্ধ হয়ে পড়ে। শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত য়েছেন ব্যবসায়ীরা। পৌরশহরে দক্ষিণবাজারস্থ আপ্তাব এন্ড ট্রেডার্সের গুদামে পানি ঢুকে গুদামে রাখা সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক হাজী ফয়জুর রহমান জানান গুদাম ও দোকানে পানি ঢুকে কয়েক লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শহরের চৌমুহনী থেকে উত্তরবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। পৌর এলাকার মাগুরা, দক্ষিণবাজার, রেলওয়ে কলোনী, সাদেকপুর, নতুনপাড়াসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক ও বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন পৌর বাসিন্দারা। সকালে শহর থেকে পানি নেমে গেলেও পৌরসভার নি¤œাঞ্চল এলাকাগুলো এখনও পানিবদ্ধ রয়েছে। পৌরসভার বেশকয়েকজন ব্যবসায়ী ও বাসিন্দার বলেন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পুরোনো ড্রেন সংস্কার না করায় ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে অনেক এলাকা পানিবদ্ধ হয়ে পড়ে। পানি উঠে যাওয়ায় উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আহমদ ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহড়ী ঢলে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা কর্মধা, রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। এসকল ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তথ্য পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে দেব। তিনি আরও বলেন উপজেলা পরিষদের তহবিলে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামীকাল পরিষদের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিয়ানীবাজারে কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দি
বিয়ানীবাজার (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা : ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে একই রাতে বিয়ানীবাজারের ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত করেছে। এসব ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলের কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে পড়ায় অনেক বিদ্যালয় ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা অনেক কষ্ট করে নামাজ আদায় করছেন। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার বন্যার পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার কিছু কিছু পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে ছুটে গেছেন।
কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, ভোরে ঘুম থেকে জেগে গ্রামবাসী দেখেন কুশিয়ারা নদীর পানিতে রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর সব তলিয়ে গেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশংকা করছেন গ্রামবাসী। নদীর পানি প্রবল বেগে গ্রাম ও হাওরে প্রবেশ করছে। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিকেলে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. আসাদুজ্জমান বন্যা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন