শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঝুঁকি নিয়ে নৌ চলাচল বাড়ছে দুর্ঘটনা

নদী দখল প্রতিযোগিতায় সংকীর্ণ হয়ে আসছে শীতলক্ষ্যার নৌরুট

প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ হাফিজুর রহমান মিন্টু, নারায়ণগঞ্জ থেকে : নদী দখল প্রতিযোগিতায় নারায়ণগঞ্জের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যার নৌরুট ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। একদিকে নদী দখল ও ভরাট এবং অপরদিকে এলোপাথারি জাহাজ বার্থিংয়ের (নোঙর) কারণে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে নৌরুটটি। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে হাজার হাজার নৌযান। খেয়া পারাপারে নিয়োজিত থাকা অসংখ্য ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকাও চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এসব নৌযানের অধিকাংশেরই দক্ষ চালক না থাকার কারণে নদীপথে বেড়েই চলেছে নৌ-দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। সবশেষ বুধবার রাতে শীতলক্ষ্যায় সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকা ডুবির ঘটনায় একজনের মৃত্যু ঘটেছে।
নরসিংদীর টোকবর্মি থেকে মুন্সিগঞ্জের মহনা পর্যন্ত ৬৫ মাইল দীর্ঘ এই শীতলক্ষ্যাকে কেন্দ্র করেই এক সময় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল নারায়ণগঞ্জের। ব্রিটিশ শাসনামলে এই শীতলক্ষ্যার মাতলাঘাটেই ভিড়ত ভারতীয়সহ বিদেশি জাহাজগুলো। মাতলাঘাট থেকে কলকাতা রুটে চলাচল করত জাহাজ। তবে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের সেই ঐতিহ্য। প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব ও দূষণে মুমূর্ষু শীতলক্ষ্যার নৌরুটও ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে প্রতিদিন ৭টি রুটে অন্তত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে থাকে। দিনে ও রাতে চলাচল করছে অসংখ্য পণ্যবাহী নৌযান। ১৩টি খেয়াঘাটে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকায়। নৌরুট সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার জানান, শীতলক্ষ্যার বিভিন্ন স্থানে সিমেন্ট কারখানাসহ বড় শিল্পকারখানাগুলোর সামনে অসংখ্য বৃহদাকারের জাহাজ নোঙ্গর করে রাখে। এর মধ্যে রয়েছে শাহ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, বসুন্ধরা সিমেন্ট, সিমেক্স সিমেন্ট, আকিজ সিমেন্ট, রূপগঞ্জের সিটি মিলসহ বেশকিছু কারখানার সামনে ক্লিংকার ও ফ্ল্যাইঅ্যাশবাহী অসংখ্য বড় আকারের জাহাজ নোঙর করে রাখে। এতে করে ওই এলাকাগুলো দিয়ে দু’টি নৌযান পাশাপাশি যেতে পারে না। জোয়ার-ভাটার কারণে অনেক সময় চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। ছোট নৌযানগুলোর অনেকগুলোতেই সার্টিফিকেটধারী চালক নেই। একদম অদক্ষ চালক দিয়েই অনেক নৌযান চলছে। প্রশিক্ষণ না থাকায় কোন দিকে হর্ন দিতে হবে তাও অনেকে জানে না। এছাড়া বালুমহালের ইজারাদারের নিয়োজিত সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে অনেক বালুবাহী বাল্কহেডের চালকরা রাতে চালায়। তারা দিনের বেলায় লস্কর, বাবুর্চির হাতে স্টিয়ারিং দিয়ে ঘুমিয়ে নেয়। এতে করে দুর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মাহমুদ হোসেন জানান, শহরের বরফকল জেটিতে কাস্টমসের গাফিলতির কারণেও অনেক জাহাজকে দীর্ঘদিন নোঙর করে রাখতে হয়। অপরদিকে আকিজ সিমেন্ট কারখানার সামনেও অনেক জাহাজ নোঙর করে রাখে। সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা ও মেঘনা ডিপোতে অনেক তেলবাহী ট্যাংকার আসে। সরু চ্যানেলে তেলবাহী ট্যাংকারসহ যে কোনো নৌযানের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, নদীর মাঝখানে কোস্টার ট্যাংকার থাকলে সেগুলোকে অন্তত ১০ দিন আটকে রাখতে হবে। সেটাই হবে ওদের শাস্তি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন