শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নেতৃত্বশূন্যতা শঙ্কায় বিএনপি

প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের বাকি আর দুই ধাপ  ‘আসলাম জ্বরে’ আক্রান্ত কূটনীতির সম্পর্ক
আফজাল বারী : নেতৃত্বশূন্যতার ঝড়ের আশঙ্কায় ভুগছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের মেয়াদ যত ফুরাচ্ছে এই আশঙ্কার ডালপালা তত বিস্তৃত হচ্ছে। সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারের (১/১১) সময়ের চেয়ে এবারের রাজনৈতিক ঝড়ের গতি আরো তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করছে বিএনপির নীতিনির্ধারকগণ। এদিকে দলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া আসলাম জ্বরে দুর্বল হচ্ছে কূটনৈতিক সম্পর্ক। ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এমনতর জানিয়েছেন সিনিয়র একাধিক নেতা।
বিএনপির ধারণাতে যোগ করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা ভালো করেই জানেন মামলা মোকাবেলা করেই রাজনীতিতে থাকতে হবে। দলটি দীর্ঘদিন ধরেই এক ধরনের সঙ্কটের মধ্যে আছে। বেরিয়ে যেতে পারেনি। সঙ্কটের কারণে দলটির স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। সর্বশেষ সঙ্কটের সাথে যোগ হয়েছে আসলাম চৌধুরী। রাজনৈতিক কারণেই তাদের সামনে একটি শূন্যতার ঝড় আসতে পারে। এটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিএনপির বিশ্লেষণÑমামলা এবং সাজার মধ্য দিয়ে দলীয় নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার কৌশলে এগুচ্ছে সরকার। দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার সরকারের চেষ্টাকে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে বিএনপি। মামলার চলন আর সরকারের মতিগতি দেখে তাদের ধারণা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এতদিন অন্দরে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন, এখন উন্মুক্ত মঞ্চের সভা-সমাবেশে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করছেন। সিনিয়র নেতারা দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে পূর্বাভাস দিচ্ছেন। তবে বিচলিত হচ্ছেন না নেতারা। বরং শাসকদলীয় নেতাদের উদ্দেশে পাল্টা হুশিয়ারিও দিচ্ছেন।
আশঙ্কার কথা সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে বলেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, পদ-পদবী নিয়ে চিন্তাভাবনার চেয়ে আগে ভাবুন নেত্রীর রাজনীতি নিয়ে। সরকার মামলার মাধ্যমে সাজা দিয়ে নেত্রীকে জেলে দিয়ে আমাদের নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা করছে। কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকুন। একই সাথে তিনি সরকার প্রধানের উদ্দেশে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে স্বল্প সময়ের মধ্যে সেখানে (জেলে) আপনার সাথে সাক্ষাৎ হতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এক অনুষ্ঠানে শঙ্কার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা চলছে এবং মামলাকে কত দ্রুত শেষ করা যায়, তার জন্য তারা (সরকার) চেষ্টা করছে। সুতরাং আমাদের বসে থাকলে চলবে না, আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, আমাদের সংগঠিত হতে হবে। আমরা যেন আমাদের নেতা একমাত্র আশা-ভরসার স্থল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন রাজনীতি করতে পারেন, সেজন্য তার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ব্যাহত করতে পারি।  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাসসহ নীীত নির্ধারকদের অনেকেই এখন এ বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে কিছু করার চেষ্টা হলে বিএনপি বসে থাকবে না বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলা বিচারের শেষ পর্যায় আছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ২ জুন আদালতে হাজিরের আদেশ দিয়ে আগাম গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মিরপুরের আরেকটি মামলায় চার্জসিট দেয়া হয়েছে। আদালত সূত্র জানিয়েছে, মামলার গতিপ্রকৃতি বলে দেয় স্বল্প সময়ের মধ্যে রায়টি ঘোষণা করা হতে পারে। অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হলে আসামীর (খালেদা জিয়াসহ অন্যদের) সাজা হবে। হাইকোর্টের পর্ব শেষ বাকি আপিল বিভাগের।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ার দিনই কারাগারে যেতে হয়। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা চলমান। দলের স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিলসহ সারা দেশে বিএনপির ৭৫ সাংগঠনিক জেলায় যেসকল নেতায় নেতৃত্ব দেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই মামলা। গুরুত্বপূর্ণ পদের বেশ কয়েকজন নেতা এখনো পলাতক। তাদেরকে স্পর্শকাতর (বিদেশী হত্যা) মামলায় ফাসানো হয়েছে। মামলার কার্যক্রম দুর্বার গতিতে এগুচ্ছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হবার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে তদন্ত, চার্জশিট, সাক্ষ্যগ্রহণ। আইনজ্ঞ, রাজনৈতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, চলমান মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে। ’৯০-এর আন্দোলনের পর এবং ২০০৭ সালের ১/১১-এর পর দলটিতে যে নেতৃত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তার চেয়েও ভয়াবহ সঙ্কট ধারণ করতে পারে।
এদিকে সরকারের কূটনৈতিক আর রাজনৈতিক চালের কাছে বারবার ধরাশায়ী হচ্ছে বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং বর্তমান সরকারকে প্রতিবেশী ভারত ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ সমর্থন দেয়নি। এই সরকারে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রধর্ম, আলেম-ওলামাতে আঘাত। তাতে যোগ হয়েছে প্রগতিশীলদের নিরাপত্তায় ব্যর্থতা। সরকার যখন বেকায়দায়, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতার সাথে ইন্ডিয়ায় ‘ফটোসেশন’ মহৌষধে কাজ করেছে। কূটনৈতিক অঙ্গনে বিএনপির পথে কাঁটা পড়েছে।    
এ বিষয়ে ড. তারেক শামসুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির সঙ্কটের সাথে যোগ হয়েছে আসলাম চৌধুরী। তিনি বুঝে-শুনেই ইসরাইলি নেতার সাথে আলোচনা করেছেন। কারণ তিনি বিএনপির ছোটখাটো নেতা নন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা  জিয়াউর রহমানই মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সউদী আরবসহ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়েছিলো। তার সুফল বাংলাদেশ পেয়েছে। আসলাম চৌধুরীরা বিএনপিকে যে পথে নিয়ে গেছে এটা জিয়াউর রহমানের বিএনপি নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন