শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মুক্তির পুণ্যময় রজনী শবেবরাত

প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন হৃদয় খান

পবিত্র শবেবরাত। আল্লাহপ্রেমিক মুসলমানদের জন্য অনেক আশা ও ভরসার রাত। এই একটি রাতের জন্য আশায় বুক বেঁধে থাকেন পৃথবীর অজস্র মুসলমান। আমাদের এ জীবনের প্রতিটি পলক যার ইশারায় পড়ে তিনি তো সেই পরম শক্তিমান আল্লাহ। তাঁর কাছে নিজের সব সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার ফরিয়াদ জানিয়ে কেঁদে আকুল হয়ে নিজেদের দীনহীন ভাগ্যের উন্নয়নে তার সামান্য একটু দয়া ও করুণার দৃষ্টি আকর্ষণের এক মহিমান্বিত সুযোগ পবিত্র শবেবরাত।
মহিমান্বিত এ রজনীতে ব্যাপকভাবে বান্দাদের ক্ষমা করা হয় : হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রজনীতে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে তাশরিফ আনেন এবং আপন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী ও অন্যের সঙ্গে হিংসা পোষণকারীদের ছাড়া। (বাইহাকি, হাদিস : ৩৮২৭)। হজরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬০)। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মধ্য শাবান রাতে মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং দুই ধরনের লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তারা হলো হিংসুক ও অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৬৫০)।
এক হাদীসে কুদসিতে তিনি অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘ও বান্দা! তুমি যদি এ আকাশ ও মাটিভরা গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করো এবং আমাকে ডেকে ক্ষমা চাও, আমি তোমার এসব গুনাহ মাফ করে দেবো, এতে আমি কাউকেই পরোয়া করি না।’ পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে তিনি বান্দাকে বারবার ডেকে ডেকে তওবা করতে বলেছেন, শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্ক করেছেন। স্বার্থপরতার এ পৃথিবীতে লোভ ও হিংসার জালে বন্দি হয়ে আমরা এসব ভুলে যাই বারবার। তবুও তিনি সুযোগ দিয়ে চলেছেন অবিরাম, এই বুঝি তার কোন বান্দা এবার তার কাছে সত্যিই ফিরে আসবে, তাকে আপন করে ডাকবে।
শবেবরাত এমনই এক মহামূল্যবান সুযোগ। দুর্ভাগা ছাড়া আর কেউ এ রাতের কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। এ রাতের পুরোটা সময়জুড়ে আমাদের জন্য আল্লাহপাকের বিশেষ রহমত ও তাওয়াজ্জুহের দুয়ার খোলা থাকবে। কাজেই হেলায় খেলায় যেন তা পার হয়ে না যায়।
এ রাতে হায়াত-মউত ও পুরো বছরের রিজিকের ফায়সালা হয় : হজরত আয়েশা (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, শবেবরাতে কী ঘটে এ সম্পর্কে হজরত আয়শা (রা.) জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রাতের কার্যক্রম হলো- এ বছর যত (সন্তান) জন্মগ্রহণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ বছর যত (লোক) ইন্তিকাল করবে তা লেখা হয়। আর এ রাতেই বান্দাদের (সারা বছরের) কার্যাবলী (আসমানে) উঠানো হয় আর এ রাতেই নির্ধারিত রিজিক অবতীর্ণ হয়। তারপর হজরত আয়েশা (রা.) জানতে চাইলেন যে ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর রহমত ও করুণা ছাড়া কেউ কি বেহেশতে যেতে পারবে? রাসুল (সা.) তিনবার বলেন, কখনো পারবে না। আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করেন, হুজুর! আপনিও না? জবাবে বললেন, আমিও একমাত্র তাঁর দয়া ও রহমত ছাড়া জান্নাতে যেতে পারব না। (মিশকাত- পৃ. ১১৫)। যখন শাবানের পঞ্চদশ রজনী আসে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে মালাকুল মউতকে একটা তালিকা দেওয়া হয় এবং হুকুম করা হয়, এই তালিকায় যেসব মানুষের নাম লিপিবদ্ধ আছে তাদের প্রাণ হরণ করো। কোনো বান্দা বাগিচায় গাছপালা লাগাচ্ছে, কেউ বিবাহ করছে, কেউবা নির্মাণ কাজে ব্যস্ত অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লেখা হয়ে গেছে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, খ- ৪, পৃ. ৩১৭)।
শবেবরাতে রাত জাগার ফজিলত : এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাতে জেগে থাকবে, তাঁর জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। ১. যিলহজ্জের অষ্টম রাত ২. যিলহজ্জের নবম রাত ৩. ঈদুল আজহার রাত ৪. ঈদুল ফিতরের রাত ৫. শাবানের পঞ্চদশ রাত। এ কারণেই ফিকাহের ইমামদের অনেকে শাবানের পঞ্চদশ রাতে জেগে থাকাকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। হজরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, পাঁচটি রাতে দোয়া করা হলে তা কখনো ফেরত দেওয়া হয় না (অবশ্যই কবুল হয়) জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের পঞ্চদশ রাত এবং দুই ঈদের রাত।
অগণিত মুসলমানকে ক্ষমা করা হয় এ রাতে : হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ শাবানের পনেরতম রজনীতে প্রথম আসমানে শুভাগমন করেন এবং কালব গোত্রের বকরিগুলোর পশম পরিমাণ মানুষকে ক্ষমা ও মাগফিরাত করে দেন। (তিরমিজি)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
md..milon ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৪৭ পিএম says : 0
nice informatin.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন