সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি আইনি প্রক্রিয়ার না প্যারোলে-এনিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। সরকারের উচ্চ পর্যায় ও রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সর্বত্র এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। আদালত প্রাঙ্গনে আইনজীবীদের মধ্যেও চলছে এ নিয়ে কানাঘুষা। কেউ কেউ বলছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলের মুক্তির বিষয়টি রাজনৈতিক। আবার কেউ প্যারোলে মুক্তির সুযোগ নেই বলে দাবি করছেন। তাদের ভাষ্য, আদালতের মাধ্যমেই মুক্তি পেতে পারেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও খালেদা জিয়া প্যারোলে আবেদন করলে মুক্তির বিষয় নিয়ে সরকার চিন্তা ভাবনা করবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। এরপরই প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় আসে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। তারা চান খালেদা জিয়াকে আইনগতভাবে মুক্তি দেয়া হোক।
সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে নজরদারিতে রেখেই শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লোকালয়ে মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ দেয়াকেই প্যারোলে মুক্তি বলা যায়। বিশেষ ক্ষেত্রে কত দিন প্যারোলে মুক্তি থাকবেন এ সময়সীমা হ্রাস বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্যারোলে মুক্তির সুযোগ রয়েছে। তবে সেটার জন্য উপযুক্ত গ্রাউন্ড থাকতে হবে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার শারীরিক অবস্থা উল্লেখ করে আদালতে আবেদন করতে পারেন। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা-ই চূড়ান্ত হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এটা রাজনৈতিক কোন মামলা নয় যে রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার কারা মুক্তি পাবেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উনার সাজা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে উনার জামিন নিতে হবে।
খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ার মুক্তি পাবেন। প্যারোলের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে খালেদা জিয়া প্যারোলে যাবেন কি-না এবং সরকার প্যারোল দিবেন কি-না এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা চাই তাকে আইনগতভাবে মুক্তি দেয়া হোক।
আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা মোট ৩৬ মামলার রযেছে। তার মধ্যে ২টি মামলায় সাজা হয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত পাঁচ বছর কারাদন্ড দেয়ার পর হাই কোর্টে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে ৭ বছর কারাদন্ড দিয়েছে নিন্ম আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। বাকি ৩৪ মামলার মধ্যে গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলাসহ ১৩টি মামলা বিচারাধীন। আর হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে ২১ মামলা। বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্মীয় উসকানি এবং মুক্তিযুদ্ধদের নিয়ে কটূক্তির মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ান জারি করেছেন আদালত। গত৭ এপ্রিল কুমিল্লার একটি হত্যা হত্যার মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ২৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। গত ১০ এপ্রিল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে খালেদার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়নি।
সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে চার মামলায় জামিন নিতে হবে। বিএনপি অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন কররে যাচ্ছে। এরমধ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল খালেদা জিয়ার প্যারোলের নিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর খালেদা জিয়ার কারামুক্তি নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। কিন্তু তাকে প্যারোলে মুক্তি পেতে হলে সরকারের নির্বাহী আদেশ লাগবে। এ জন্য তাকে আবেদন করতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি হলেও কিছুটা শর্ত সাপেক্ষে হবে। তবে কী সেই শর্ত, সেটি এখনো জানা যায়নি। যদি দলটির পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয় কিংবা চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিক্যাল বোর্ড মুক্তির সুপারিশ করে, সরকার তা বিবেচনা করতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
বিএনপি ঘরোরা আইনজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির নির্বাচিত ছয় সদস্যের সংসদে যোগদান একটি শর্ত হতে পারে। আগামী ৩০ এপ্রিল মধ্যে নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সংবিধানের বলা আছে। এসময়ে মধ্যে শপথ নিতে হবে নির্বাচিতদের। বিএনপির নির্বাচতরা শপথ নিলে সরকার খালেদা জিয়ার কারা মুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন। তবে এটা নিশ্চিত করা বলা কঠিন। তবে তারা মনে করেন সরকারের সবুজ সংকেত ছাড়া এখন প্যারোল বা জামিন কিছুই হবে না, এটি স্পষ্ট। জামিন হলেও তা মঝোতার ভিত্তিতে হয়েছে বলেই মানুষ মনে করবে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া দন্ডিত আসামি। তাকে রাজনৈতিকভাবে মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি শুধু তখনই প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন।
প্রসঙ্গ, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাবাস করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কারাগারে অসুস্থ হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন