বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চৌমুহনী নৌ-বন্দর অস্তিত্ব হারিয়েছে

দখল প্রক্রিয়া থেমে নেই

আনোয়ারুল হক আনোয়ার | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বৃহত্তর নোয়াখালী তথা দেশের বৃহৎ বানিজ্য কেন্দ্র হচ্ছে নোয়াখালীর চৌমুহনী বাজার। নৌ-বন্দর কেন্দ্র করে এখানে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠা গড়ে উঠে। চৌমুহনী-আটিয়াবাড়ি, চৌমুহনী-ছাতারপাইয়া, চৌমুহনী-ফেনী নদী ও চৌমুহনী-চন্দ্রগঞ্জ খালের মোহনায় সংযোগ স্থানকে কেন্দ্র করে চৌমুহনী নামকরন হয়। এক সময় দেশীয় ও মাড়োয়ারীদের ব্যবসা বাণিজ্য ছিল চৌমুহনী বাজরে। চৌমুহনীর সাথে দেশের প্রায় সকল নদ নদীর সংযোগ ছিল। বিশেষ করে চাঁদপুর, ভৈরব ও নারায়নগঞ্জের সাথে পণ্য পারাপারে নৌ-পরিবহন ছিল একমাত্র ভরসা। নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর ও ভৈরব থেকে বড় বড় সাম্পান ও ডিঙ্গি নৌকায় মাল বোঝাই করে চৌমুহনী বাজারে সরবরাহ হতো। এক কথায় বাণিজ্যিকভাবে চৌমুহনী বাজার এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, ১৯৬৯ সালে চট্রগ্রাম বিভাগের মধ্যে চৌমুহনী রেলওয়ে স্টেশন বাণিজ্যিকভাবে প্রথম স্থান অর্জন করে। কিন্তু দখলদারদের কবলে পড়ে ঐতিহ্যবাহি চৌমুহনীর খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় চৌমুহনী বাজারের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বড় বড় খাল দখল করে দোকানপাট, আবাসিক ভবন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এখন চৌমুহনীর খালগুলো ডোবা নালায় পরিণত হয়েছে।
চৌমুহনী-ছাতারপাইয়া খাল, চৌমুহনী-তূলাতলী খাল, চৌমুহনী-আটিয়াবাড়ি খাল, চৌমুহনী-চন্দ্রগঞ্জ খাল, চৌমুহনী-বেগমগঞ্জ খাল ও চৌমুহনী বাজার থেকে দক্ষিণে মেঘনা নদী পর্য্যন্ত নৌযোগাযোগ ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীতেও নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ফেনী জেলার মধ্যে নৌ যোগাযোগ ছিল। বিশেষ করে চৌমুহনী বাজার থেকে নৌপথে পণ্য পারাপার হতো। এছাড়া বজরা, সোনাইমুড়ি, চাটখিল, রামগঞ্জ ও রায়পুরে নৌকাযোগে যাত্রী পারাপার হয়। পরবর্তীতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবার পাশাপাশি চৌমুহনী বাজারের খালগুলোতে দখলকারীদের দৃষ্টি পড়ে।
চৌমুহনী বাজারের সাথে নৌ-যোগাযোগের সুবাদে এখানে প্রকাশনা শিল্প গড়ে ওঠে। ১৯৪৫ সালে চৌমুহনী বাজারে চিত্ত রঞ্জন সাহা একটি ছাপাখানা স্থাপন ও পরবর্তীতে পুঁথিঘর স্থাপনের মাধ্যমে প্রকাশনা শুরু করেন। পরবর্তীতে চৌমুহনী বাজার ছিল প্রকাশনা শিল্পের জন্য দেশজোড়া খ্যাতি। ১৯৬৩ সালে চৌমুহনীতে বেসরকারী উদ্যোগে দেশের বৃহৎ পাটকল ডেল্টা জুট মিল প্রতিষ্ঠা করেন আলহাজ্ব আবদুর রব। ডেল্টা জুট মিল চালু হবার পর চৌমুহনী বাজারের গুরুত্ব রাতাারতি বৃদ্ধি পায়। সে সময় চৌমুহনী থেকে নৌপথে পাটজাত পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হতো। নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ফেনী থেকে বিপূল পাট নৌপথে ডেল্টা জুটি মিলে সরবরাহ হয়।
চৌমুহনী বাজারে দুইদিন অর্থাৎ শনিবার ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট বসে বসে। এক সময় হাটের দিনে চৌমুহনীর নৌঘাটে মালামাল পারাপারের অপেক্ষায় শত শত সম্পান ও পালতোলা নৌকা ভিড় করত। সন্ধার পর দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে নৌযানগুলো পালতুলে যাত্রা শুরু করত। কিন্তু এখন শুধুই স্মৃতি। চৌমুহনী বাজারের আশপাশে খালগুলোর বিভিন্ন অংশে মাটি ভরাট করে পানি চলাচলের উৎস বন্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মাটি ভরাট করে খালের অস্তিত্ব মুছে ফেলছে। চৌমুহনী-ছাতারপাইয়া, চৌমুহনী-আটিয়াবাড়ি, চৌমুহনী-চন্দ্রগঞ্জ, চৌমুহনী-তূলাতলী খাল দখল হতে হতে এখন ডোবানালায় পরিণত হয়েছে। খাল দখল করে গড়ে উঠেছে আবাসিক ভবন ও দোকানপাট। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বেগমগঞ্জ, বজরা, সোনাইমুড়ি, চাটখিল উপজেলার বিশাল এলাকা মাসের পর মাস পানিতে ডুবে থাকে।
চৌমুহনী বাজারের গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো পূণ:রুদ্ধারে জেলা প্রশাসনের এ যাবত উদ্যোগ গ্রহন করেনি। আর এতে করে খাল দখলের মহোৎসব চলছে সমানগতিতে। এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে তারা ইনকিলাবকে জানান, মাত্র চার দশক পূর্বেও চৌমুহনী বাজার নৌবন্দর হিসেবে সুখ্যাতি ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী গোষ্ঠী কর্তৃক খালগুলো দখল করে নেয়ায় অস্তিত্ব হারিয়েছে ঐতিহ্যবাহি চৌমুহনীর নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন