রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়াও দন্ডপ্রাাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বাকি আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার রায় এ আদেশ দেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, সবুজ ও আরিফুল ইসলাম মানিক। এদের মধ্যে সবুজ পলাতক রয়েছেন। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জল, পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আক্তার রেশমা, সিরাজুল ইসলাম কালু, আল-মামুন, সাগর, জিন্নাত, আরিফ ও ইব্রাহীম খলিল ওরফে বাবু। রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এন্তাজুল হক বাবু বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, রেশমার সঙ্গে দ্ব›েদ্বর জের ধরে রাবি শিক্ষক শফিউলকে খুন করা হয়। পিন্টুর স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে কোন কারণে খারাপ আচারণ করেন অধ্যাপক শফিউল। বিষয়টি রেশমা তার স্বামী পিন্টুকে বলে। পরে পিন্টু এ হত্যার পরিকল্পনা করে এবং সাজাপ্রাপ্তরা তিনজন মিলে এ হত্যায় অংশ নেন। মামলায় মোট ৩৩ জনের সাক্ষী দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন। ঐদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মুহাম্মদ এন্তাজুল হক অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ড. লিলন খুনের ৫ ঘণ্টার মাথায় ফেসবুকে একটি পজে খুলে দায় স্বীকার করে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন। তাই উগ্রবাদী এই সংগঠনটি হত্যাকান্ডে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।
তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে ব্যক্তিগত কোন্দলের জেরেই খুন হন এই শিক্ষক শফিউল ইসলাম। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসরিন আখতার রেশমা। হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ২৩ নভেম্বর রেশমার স্বামী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুস সামাদ পিন্টুসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে গোয়েন্দা পুলিশ রেশমাকেও গ্রেফতার করে। হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে রেশমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর এক বছর পর ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জলসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখায় কর্মরত নাসরিন আখতারের সঙ্গে শফিউল ইসলামের দ্ব›েদ্বর জের ধরেই তার স্বামী যুবদল নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু সাঙ্গপাঙ্গরা নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
তবে নাসরিন আখতার রেশমা ও তার স্বামী আবদুস সামাদ পিন্টু ছাড়া অন্যান্য অভিযুক্ত আসামীরা জামিনে মুক্ত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন