‘চলো- চলো-- চলো--- চলো/ চলো পাল্টাই’ একটি বিদেশী চ্যানেলের এই স্লোগান এবারের পয়লা বৈশাখের জন্য হতে পারে যুৎসই উদাহরণ। সত্যিই আমরা পাল্টে গেছি। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই লাখ লাখ মানুুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নববর্ষকে বরণ করেছেন। অতীতে রমনা বটমূল ও শাহবাগে তথাকথিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় পয়লা বৈশাখ উদযাপন পরিধি মনে করা হলেও এখন রাজধানী ঢাকায় পাল্টে গেছে এই উৎসবের পরিধি। রাজধানীর ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, মানিক মিয়া এভিনিউ, গুলশান লেকসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে মানুষের প্রচন্ড ভিড়। এসব এলাকায় লাখো মানুষ নিজেদের মতো করেই বর্ণিল নানা আয়োজনে পয়লা বৈশাখ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্ষবরণ করে।
পয়লা বৈশাখে অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবার চারুকলার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ অনুষ্ঠানে লোকসমাগম দেখা গেছে তুলনামূলক কম। টিএসসি, শাহবাগেও প্রায় অভিন্ন দৃশ্য। বরং রাজধানী ঢাকার অন্যান্য এলাকায় বর্ষবরণে লোকসমাগম দেখা গেছে বেশি। হাতিরঝিলের দৃশ্য ছিল চোখে দেখার মতো। এ ছাড়াও বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সর্বস্তরের মানুষ নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে নিজেদের মতো করেই। দিবসটি নিয়ে কোনো ধর্মীয় বিধিনিষেধ না থাকায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ উৎসবের মধ্য দিয়েই পালন করেছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে শত কোটি টাকার ব্যবসাও হয়েছে।
১৪২৬ নববর্ষ বরণকে কেন্দ্র করে সারা দেশে জমে ওঠে বৈশাখের বাজার। শাহবাগ-কেন্দ্রিক কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পান্তা-ইলিশকে প্রাধান্য দিলেও ভোটের অধিকারহারা দেশের মানুষের কাছে পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠে প্রাণের উৎসব। দেশব্যাপী দেখা গেছে পয়লা বৈশাখকেন্দ্রিক অর্থনীতির বিশাল কর্মযজ্ঞ। বাজারে ব্যাপকভাবে বিক্রি হয় বাঙালিয়ানার পোশাক-আশাক, জুতা, প্রসাধনী, খাদ্যপণ্যসহ গৃহসামগ্রী। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার পোশাকের বিভিন্ন শোরুম ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে ধুম পড়েছিল কেনাকাটার। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর ক্রেতা বৈশাখ উপলক্ষে দোকানে দোকানে খোঁজ করে পছন্দের পণ্য ক্রয় করেন। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে গ্রাম ও শহরে বসে বিশেষ মেলা। এসব মেলায় নানা পণ্যের জোগান দেয় গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলো। এ ছাড়া হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা। সব মিলে পয়লা বৈশাখ ঘিরে ছিল মহাকর্মযজ্ঞ। সরকারি চাকরিজীবীদের পয়লা বৈশাখের উৎসবভাতা দেয়ার পর থেকেই কয়েক বছর ধরে বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার ক্রমেই বাড়তে থাকে।
প্রতি বছরের মতো এবারো ১৪২৬ সালকে বরণ করতে রাজধানীর রমনার বটমূলে প্রভাতী আয়োজন করে ছায়ানট। নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়কে স্বাগত জানানো হয় ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’ স্লোগানে রাগালাপ দিয়ে। পরের ভাগে অনাচারকে প্রতিহত করা এবং অশুভকে জয় করার জাগরণী সুরবাণী, গান, পাঠ, আবৃত্তির মাধ্যমে দেশ-মানুষ-মনুষ্যত্বকে ভালোবাসার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি চর্চার মতোই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছায়ানটের শিক্ষার্থী-প্রাক্তনী-শিক্ষক নিয়ে, ছোট-বড় মিলিয়ে গান পরিবেশন করে। বরাবরের মতো এবারো কলকাতার সংস্কৃতি চর্চার ঢঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বের করা হয়। সেটা ছিল শাহবাগ-কেন্দ্রিক।
রমনা বটমূলের মতোই এবার পয়লা বৈশাখে রাজধানীর হাতিরঝিল হয়ে উঠেছিল জমজমাট। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে বৈশাখের বিকেলে হাতিরঝিল হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। হাতিরঝিল ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মের খরতাপ মাথায় নিয়ে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পুরো ঝিলের দু’পাশ জুড়ে মানুষের ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে নতুন সাজে ঘুরতে বের হওয়া মানুষের উপস্থিতি। বৈশাখী পোশাকে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা দেখা যায় অনেক বেশি। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরছেন অনেকেই। অনেকেই চক্রাকার বাসে ঘুরেছেন পুরো হাতিরঝিল। কেউ বা আবার ওয়াটার ট্যাক্সিতে উঠেছেন।
পয়লা বৈশাখের দুপুর থেকেই হাতিরঝিলে প্রবেশের সব মুখে ছিল যানজট। হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার চারটি সেতু ও উড়াল সড়ক এবং লেকের পাড়ে হাজার হাজার মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তাদের বাড়তি আনন্দ যোগ করে পানির ফোয়ারা। হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা একজন জানান, বিশেষ দিনে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করা তার শখ। হাতিরঝিল নতুন ওয়াটার রাইডার এসেছে। তাতে ঘুরেছেন। ছুটির দিনে নগরজীবনে এ ধরনের সুযোগ ভালোই লাগে বলেও তিনি জানান। আরেকজন বলেন, শাহবাগে প্যাঁচা দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। আমরা ওই হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির সঙ্গে নেই। তাই রমনা বটমূলের বদলে হাতিরঝিলে এসেছি।
হাতিরঝিলে ফাস্টফুডের ব্যবসায়ীরা জানান, পয়লা বৈশাখের দিন সকাল থেকে ব্যবসা কম ছিল। বিকেল থেকেই দারুণ ভিড়। সন্ধ্যার দিকে এখানে পা ফেলারও জায়গা ছিল না। কারণ, রাতেই এখানে সৌন্দর্য বাড়ে কয়েকগুণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ধানমন্ডি লেকের শতায়ু অঙ্গন, ভোরের সাথীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সব বয়সের লোক অংশ নিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন। আমরা হাতিরঝিলে এসেছি ওয়াটার রাইডারে উঠতে।
পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৬। নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে নিজেদের মতো করে স্বাগত জানাতে দেশের মানুষ মেতে ওঠে বৈশাখী উৎসবে। বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশজুড়ে হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সূর্যোদয়ের পর থেকেই রাজধানী ঢাকায় যেন বয়ে যায় বৈশাখীর আনন্দের বন্যা। রাজধানীবাসী ভিড় করে রমনা বটমূল ছাড়াও হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, মানিক মিয়া এভিনিউ, গুলশান লেক। বিভিন্ন সংস্কৃতি সংগঠন নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনেকগুলো অনুষ্ঠান বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে সরাসরি প্রচার করা হয়।
ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখা যায়, কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু করেন মোগল সম্রাট আকবর। হিজরি সন ও বাংলা সৌরসনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রাথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটে। ষাটের দশকের শেষ দিকে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে পয়লা বৈশাখ বরণ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে কলকাতার বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার আদলে বের হয় প্রথম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয় ইউনেস্কো।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে পয়লা বৈশাখ উদযাপন হয়ে গেছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রাণের উৎসবে। গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ মিলিত সার্বজনীন এই অসা¤প্রদায়িক উৎসবে। গতকাল দেশের পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে দেখা গেছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, উৎসবমুখরতা। নানা রঙের পোশাক পরে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। মানুষের ভাষায় এখন দেশের অন্যান্য যেকোনো উৎসবের তুলনায় পয়লা বৈশাখ বেশি জমজমাট। সব ধর্মের মানুষ একসাথে হয়ে আনন্দ করে পয়লা বৈশাখে। হাতিরঝিলে গিয়ে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা গেছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। আবহমান কাল ধরে পয়লা বৈশাখে হালখাতা করে থাকেন দেশের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ীরা। হালখাতায় ক্রেতাদের মিষ্টি-জিলাপি-নিমকি খাওয়ানো হয়। বর্তমানে হালখাতা উৎসব রং হারালেও মিষ্টি-বিরিয়ানি খাওয়ানোর প্রচলন রয়েছে। ফলে এবার বৈশাখে মিষ্টির দোকানের ব্যবসা চার থেকে পাঁচগুণ বেশি হয়েছে। কয়েক বছর ধরে দেশের মোবাইল কোম্পানি, কর্পোরেট হাউজ এবং বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্নজনের কাছে বৈশাখী উপহার পাঠানোর রেওয়াজ গড়ে তুলেছে।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকার বেইলি রোড, আজিজ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কসহ দেশের সর্বত্র বৈশাখী পোশাকের বিক্রি রেকর্ড গড়েছে। পোশাকের পাশাপাশি বিক্রি হয়েছে মাটির বাসন, মাটির গয়না থেকে রুপা, সোনা ও ডায়মন্ডের গয়না পর্যন্ত। ইলিশ বিক্রির পাশাপাশি মুরালি, চিঁড়া, দই, জিলাপি, পোলাও চাল, গোশত, গেঞ্জি, ফতুয়া থেকে শাড়ি, বাঁশের বাঁশি থেকে স্টিল আলমারি, খাট বিছানার চাদর থেকে পর্দা ও ফ্লোর কার্পেট সব দোকানে ব্যাপক বেচা-বিক্রি হয়েছে। পয়লা বৈশাখের উৎসব উপলক্ষে বিক্রি হয়েছে ফার্নিচার, নানান ইলেকট্রনিক্স পণ্য, টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার। সব পণ্যের দোকানে ছিল ক্রেতাদের প্রচন্ড ভিড়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, সারা দেশে বিভিন্ন পণ্যের ছোট-বড় প্রায় ২৬ লাখ দোকান রয়েছে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এসব দোকানি নিজেদের পণ্য বিক্রি করেছেন। কেউ কেউ বকেয়া আদায়ে নতুনভাবে হালখাতার আয়োজন করে বকেয়া পেয়েছেন। বৈশাখী উৎসবের ব্যবসা ও হালখাতায় বড় অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়। এতে টাকার চলাচল বাড়ে। অর্থনীতিতে পড়েছে ইতিবাচক প্রভাব।
প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের বিকেলে বৃষ্টি বা ঝড়োবৃষ্টি হলেও এবার আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। বৃষ্টি বাতাস কিছুই ছিল না। যারা সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের গান শুনতে যান; তারাই বিকেলে হাতিরঝিলে যান বেড়াতে। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা হাতিরঝিলের বিভিন্ন দৃশ্যকে তারা উপভোগ্য দৃশ্য হিসেবে মনে করেন। তিনি জানালেন, তার মতো অনেকেই সকালে শাহবাগ ও বিকেলে হাতিরঝিলে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : শোভাযাত্রা, নাচ, গান, আবৃত্তি, বলীখেলাসহ নানা আয়োজনে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিল চট্টগ্রামবাসী। বৈশাখের প্রথম দিন রোববার সকাল থেকেই নগরীর ডিসি হিল পার্ক, সিআরবি সাত রাস্তার মোড় শিরীষতলা, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, কর্ণফুলী নদীর তীর, পতেঙ্গা সৈকতসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে বর্ষবরণের আয়োজন। বর্ণিল পোশাকে নানা বয়সী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গ্রীষ্মের প্রথম দিনটিতে যেন নগরজুড়ে রঙের ঢেউ খেলে যায়। চাঁটগাবাসী মেতে ওঠে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে।
নরেন আবৃত্তি একাডেমি, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, বোধন আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন বৃন্দ আবৃত্তি। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর মুভমেন্ট, গুরুকূল আর ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, পহেলা বৈশাখ সার্বজনীন উৎসব, সবার প্রাণের উৎসব। নতুন বছরে আমি সকলের কল্যাণ কামনা করি। অন্যদের মধ্যে মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুবর রহমানও এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বরিশাল ব্যুরো : সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছড়াগান, লোকসংগীত, লোকনৃত্য, মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের মেলার মাধ্যমে বাংলা ১৪২৬ কে বরন করছে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ। এবার বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসন বর্ষবরণ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এছাড়া পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠী জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলাতেও নানা অনুষ্ঠান ও উৎসবে বর্ষবরণ চলছে।
বিশেষ সংবাদদাতা : উৎসব আনন্দে খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ বংলা বর্ষবরণ করল। রোববার পহেলা বৈশাখ সকালে রিভার সাইড পার্কে আনন্দ মেলার উদ্বোধন করেন খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কমোডর আনিসুর রহমান মোল্লা, (এল), এনইউপি, পিএসসি-বিএন। এ সময় শিপইয়ার্ডের জেনারেল ম্যানেজারগণ ছাড়াও উর্দ্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণও উপস্থিত ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনশেষে ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। দিনব্যাপি এ মেলার সাথে রিভার সাইড পার্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। বিপুল সংখ্যক দর্শণার্থী মেলায় অংশ নেয়।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরেও নানা আয়োজনে ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করা হয়েছে। বর্ষবরণ উপলক্ষে দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইলিশ বর্জিত পান্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন ও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারসহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা অংশ নেন। শোভাযাত্রা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের হয়ে দৌলতপুর থানা বাজার প্রদক্ষিণ করে। সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলা পরিষদ চত্ত¡রের বৈশাখী মঞ্চে দৌলতপুর শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর অনুষ্ঠিত হয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হা-ডু-ডু খেলা এবং হাড়ি ভাঙা প্রতিযোগিতা। বর্ষবরণ উদযাপন কমিটির সভাপতি ও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারের সভাপতিত্তে¡ দিনব্যাপী বর্নাঢ্য বর্ষবরণ উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্। বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন