শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অরক্ষিত উপকূলবাসীর বিপদই সঙ্গী

‘রিলিফ চাই না-বেড়িবাঁধ চাই’ : অতীতে হাজার কোটি টাকা লুটপাট : সচিব কমিটির সুপারিশ হিমাগারে

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : ‘৯১-এর ২৯ এপ্রিলের ভয়াল তুফান। এরপর আইলা, সিডর, কোমেন, রোয়ানুর মতো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে একের পর এক। উপকূলবাসীদের মেরে যায়। যারা বেঁচে যায় তাদেরও হয় মরণদশা। কারণ ওদের বসতভিটা, ধানি জমি, ফাউন্দি ক্ষেত, লবণের মাঠ, চিংড়ি ঘের, পুকুর কিংবা দোকানপাট সাগরের সাথে মিলেমিশেই একাকার। কাজকর্ম নেই। নিজেদের দু’বেলা আহারের ঠিক নেই। হালের গরু, হাঁস-মুরগির খাদ্য নেই। জীবনধারণের শেষ অবলম্বনটুকুও আর নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে চোখের সামনে ঘোর অন্ধকার।
শনিবারের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত হানার সাথে সাথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জনপদে জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলে ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের লোনাপানি এখন এপাশ-ওপাশ ঢেউ খেলছে। এভাবেই বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে ২১টি উপকূলীয় জেলার অন্তত সাড়ে ৪ কোটি মানুষকে। এর মূল কারণ হলো বেড়িবাঁধের ‘অভাব’। যাও আছে তা নামকাওয়াস্তে মাত্র। অথচ উপকূলবাসীর জানমালের প্রধান রক্ষাকবচ হলো বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস রোয়ানু-পরবর্তী এ মুহূর্তে সমগ্র উপকূলবাসীর এক আওয়াজ। আর তা হচ্ছেÑ ‘আমরা রিলিফ চাই না। বেড়িবাঁধ চাই’।
তবে এভাবে প্রতিটি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঘটে যাওয়ার পর এ ধরনের আর্তি সত্ত্বেও সরকারের তরফ থেকে উপকূলবাসীকে সুরক্ষায় স্থায়ী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। যেন এটাই নিয়তি তাদের! অতীতে দেশি ও বিদেশি বরাদ্দ বাবদ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকু-, সন্দ্বীপ, পতেঙ্গা, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, টেকনাফ, নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে নামে হাজার হাজার কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে। মানসম্মত কাজ হয়নি, বাঁধ টেকেনি। আর ফেরেনি উপকূলবাসীর ভাগ্য। উপকূলে বেড়িবাঁধের সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। চট্টগ্রাম সফরকালে রোববার প্রশাসনের পর্যালোচনা সভায় তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ কোথাও ঠিকমতো না থাকার কারণেই ঘূর্ণিঝড়ে এতবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ যদি হয় ৮ ফুট আর সামুদ্রিক জোয়ারের পানি যদি আসে ৬ ফুট হয়ে সেই বাঁধ টিকবে কীভাবে? উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো দুর্যোগ মোকাবেলায় যথেষ্ট কার্যকর নয় স্বীকার করে তিনি বলেন, বেড়িবাঁধগুলো আরো সুরক্ষিতভাবেই করতে হবে।   
তাছাড়া সমগ্র উপকূলজুড়ে অতীতে যতটা সবুজ বন-বাদাড় তথা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ছিল এখন তা আর নেই। বনদস্যু ও ভূমিদস্যু উভয় চক্র মিলে নির্বিচারে নিধন করে চলেছে উপকূলের ‘সবুজ বেষ্টনি’। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এবং বনরাজি ধ্বংসের মুখে পড়ার কারণে শুধু উপকূলের বাসিন্দারাই নয়Ñ বরং শহর নগর, দেশের প্রধান দু’টি সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা, জ্বালানি তেলের স্থাপনা, শিল্প-কারখানা, রফতানিমুখী শিল্পজোন, নৌ ও বিমান ঘাঁটি, পর্যটন কেন্দ্রসহ হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো স্থাপনা হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এভাবেই বাংলাদেশের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সীতাকু-, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরা, দুবলারচর অবধি ৭১৫ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলভাগ, চর ও দ্বীপাঞ্চল অরক্ষিত পড়ে আছে। সামুদ্রিক বেড়িবাঁধের মতো অপরিহার্য প্রতিরক্ষাব্যুহ না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্যোগের বিপদই উপকূলবাসীর নিত্যসঙ্গী। আড়াই হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশই ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।              
দেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলভাগ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের করাল গ্রাসের মুখেই রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ, চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চলে বেড়িবাঁধের বাইরে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে লাখ লাখ মানুষের বসবাস, অপর্যাপ্ত ও জরাজীর্ণ সাইক্লোন সেন্টার, ‘সবুজ বেষ্টনি’ তথা উপকূলে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্কতা, সচেতনতা ও পূর্ব-প্রস্তুতির অভাব, বিপদ সংকেত সম্পর্কে অজ্ঞতা-জটিলতা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কারিগরি ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণেই মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে সমগ্র উপকূলীয় জনপদ। দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ, জ্বালানি তেল স্থাপনা, নেভাল বেইস, পর্যটন কেন্দ্রসহ হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অবকাঠামোসমূহ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে সমুদ্র উপকূলজুড়ে।
অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দ্বীপাঞ্চল ও উপকূলভাগে শতকরা ৩৫ ভাগ জায়গায় বেড়িবাঁধের চিহ্ন অনেক আগে থেকেই মুছে গেছে। উপকূলের প্রায় ৪৫ ভাগ বেড়িবাঁধ কম-বেশি বিধ্বস্ত ও নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। শনিবারের ঘূর্ণিঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় প্রাথমিক হিসাবে কমপক্ষে ৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণরূপে এবং ১৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে করে জোয়ারের লোনা পানিতে নিয়মিতই প্লাবিত হচ্ছে সিংহভাগ উপকূলভাগ। বেড়িবাঁধ তথা প্রধান উপকূল রক্ষাব্যুহের অভাবেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়।   
‘ফানেল’ বা চোঙার মতো দৃশ্যমান বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূল দুর্যোগ-প্রবণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. শহীদুল ইসলামের গবেষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শীর্ষে অবস্থান ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগ-প্রবণ অঞ্চল হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। এরমধ্যে সর্বাপেক্ষা দুর্যোগের ধকল পোহাতে হয় বাংলাদেশকে। দেশের চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলকে সর্বাধিক দুর্যোগের ঝুঁকি বইতে হলেও বিপদ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা সেখানে নেই। প্রস্তুতি ও জনসচেতনতাও খুবই নাজুক পর্যায়ে।  
বছর বছর উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের তুলনায় বেশিমাত্রায় দুর্যোগ আঘাত হানছে প্রত্যন্ত চর, উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলে। আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বৈরী প্রভাব সেখানে বাড়ছে। পরিকল্পিতভাবে দুর্যোগ সহনশীল বা টেকসই অবকাঠামো বিন্যাস করে উপকূল অঞ্চলের স্থাপনাসমূহ, জানমাল সুরক্ষায় কোন উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। দুর্যোগকে সঙ্গী করেই উপকূলবাসীর নিত্য বসবাস। এ অঞ্চলে নিয়মিত দুর্যোগ জনজীবন ও অর্থনীতির চাকাকে অচল করে দিচ্ছে। সাম্প্রতিককালে দেখা যায়, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সক্রিয় বা বর্ধিত প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারে বিশাল সমুদ্র উপকূলীয় ও মোহনার ভূমি তলিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে লবণাক্ততা মূল ভূমির দিকে ধাবিত হচ্ছে। লবণাক্ততার বর্ধিত প্রভাব উপকূলীয় ভূমির উর্বরতা শক্তিকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও প্রাক-প্রস্তুতি, যুগোপযোগী সতর্কীকরণ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে উপকূলের সর্বত্র। বঙ্গোপসাগরীয় আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ধীরে ধীরে বেড়ে চলার সাথে এ দেশের সাড়ে ৪ কোটি উপকূলবাসীর বাসস্থানের সংকটও ঘনীভূত হচ্ছে।
চরম ভাবাপন্ন ও প্রচ- বৈরি হয়ে ওঠা আবহাওয়া-জলবায়ুর সরাসরি ক্ষতির শিকার হচ্ছে সমগ্র উপকূলবাসী। বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরূপ প্রভাবে ৭১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গোপসাগরীয় তটরেখার কিনারাজুড়ে পানি ফুলে-ফেঁপে স্ফীত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। যা সাড়ে ৪ কোটি বাসিন্দা নিয়ে সমগ্র দেশের মোট আয়তনের শতকরা ৩২ ভাগ। চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলে ভূমি তলিয়ে কিংবা হারিয়ে যাচ্ছে। গৃহহীন ও রোজগার হারিয়ে উপকূলবাসী পরিণত হচ্ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে। বিপন্ন মানুষের সংখ্যা লাখ লাখ। বিপন্ন ও উদ্বাস্তুদের মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর-নগর ও শিল্পাঞ্চলে কাজের সন্ধানে অবিরত ছুটে আসছে অগণিত জলবায়ু উদ্বাস্তু। কিন্তু সেই সোনার হরিণ ‘কাজ’ তো মিলছেই না। বরং শত দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছে। অভাব অনটন বাড়ছে। বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য।  
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব সংক্রান্ত আন্তঃসরকারী প্যানেলের (আইপিসিসি) এক প্রতিবেদন বলছে, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে গিয়ে লবণাক্ততার আগ্রাসনও বাড়বে। তাতে সুপেয় পানির মারাত্মক সংকট দেখা দেবে এবং বিশাল এলাকায় জমির সক্ষাবিক উর্বরতা বিপন্ন হবে। সে সঙ্গে সারাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নগামী হবে, কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে এবং অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, জোয়ারের অস্বাভাবিক উচ্চতাজনিত অসময়ে দুর্যোগের আগ্রাসন আরও বৃদ্ধি পাবে। বঙ্গোপসাগরের করালগ্রাসে ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ার ২৫০ বর্গ কিলোমিটার, ভোলা জেলার ২২৭ বর্গ কিলোমিটার ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ১৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার শতকরা ৬৫ ভাগই সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।
‘মোকাম্মেল কমিটি’র সুপারিশ হিমাগারে      
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সংঘটিত শতাব্দীর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসযজ্ঞের পর দুর্যোগ-প্রবণ সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলবাসীর জানমাল সুরক্ষায় অগ্রাধিকার পরিকল্পনার ভিত্তিতে উপযুক্ত অবকাঠামো সুবিধাদি গড়ে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে সমন্বিত এক পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর আওতায় তৎকালীন সচিব এম মোকাম্মেল হকের নেতৃত্বে গঠিত সরকারি উচ্চপর্যায়ের কমিটি কর্তৃক প্রণীত হয় দীর্ঘ প্রতিবেদন। এতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন, সহজ ও বোধগম্য আবহাওয়া সতর্ক সংকেত প্রচলন, দুর্যোগ সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, উপকূলভাগে এনজিও কার্যক্রমে সুষ্ঠু সমন্বয়, দুর্যোগকালীন খাদ্যশস্য ও গবাদিপশু রক্ষার ব্যবস্থা ইত্যাদি খাতওয়ারী সমস্যাবলী চিহ্নিত করে টেকসই উন্নয়ন দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে মাঠপর্যায়ে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ শেষে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের করণীয় সম্পর্কে মোকাম্মেল কমিটি প্রণীত ১৭ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও সুপারিশমালা এ যাবত ২৪ বছরেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। সমুদ্রবন্দর, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ দেশের বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চল অরক্ষিত রয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডরের মতো আরও বিভিন্ন ধরণের দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েছে। জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবর্ণনীয় দুঃখ-যাতনায় তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।  
বঙ্গোপসাগর ঘেরা দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলে বসবাসরত সাড়ে ৪ কোটি জনগোষ্ঠির জন্য বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন সেন্টারসহ পর্যাপ্ত নিরাপদ অবকাঠামো আজো গড়ে উঠেনি। কৃষি-খামার, চিংড়িসহ সামুদ্রিক মৎস্য, লবণ, মুক্তা, প্রবাল, ঝিনুক, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদরাজি এবং সেখানে অবস্থিত বন্দরসমূহ প্রতিনিয়ত দুর্যোগে ঝুঁকিতে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল ও খুলনায় সাগরের সাথে লাগোয়া দ্বীপ ও চরগুলো ক্রমেই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর অধিক ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ জোন হওয়ার কারণে ঘন ঘন লঘুচাপ, নিম্নচাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হানা দিচ্ছে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলে। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রাণপণ লড়াই করে কোনমতে টিকে আছে লড়াকু উপকূলবাসী। সেখানে বাসোপযোগী পরিবেশ অনুপস্থিত।  
বিস্ময়কর রোয়ানু      
বিগত ১৬ মে শ্রীলংকার ঠিক কাছেই দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেয় সাধারণ একটি লঘুচাপ। যা বাংলাদেশ উপকূল থেকে ১৭শ’ কিলোমিটার দূরে, বিশাল ব্যবধানে। পরদিন তা আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এরপর ধাপে ধাপে নি¤œচাপ, গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুর বেলায় সেটি আরও ঘনীভূত ও শক্তি সঞ্চয় করে পরিণত হয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় যার নাম ‘রোয়ানু’। অবশেষে গত ২১ মে শনিবার ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২৭ কিলোমিটার শক্তিমত্তা নিয়ে বরিশাল হয়ে চট্টগ্রামের উপর দিয়ে আঘাত করে এবং সীতাকু--ফেনীর উপর দিয়ে দুর্বল স্থল নিম্নচাপ আকারে ত্রিপুরার দিকে সরে যায়। সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমা, মতিগতিতে রোয়ানু ছিল বিস্ময়কর ও বিরল।
এদিকে রোয়ানু শব্দটি মালদ্বীপের ভাষা। নারকেলের ছোবড়ার আঁশ দিয়ে তৈরি রশিকে সেদেশে রোয়ানু বলা হয়। অভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের বলয়ের ৮টি দেশ থেকে পর্যায়ক্রমে নাম দেয়া হয়ে থাকে এ অঞ্চলে সৃষ্ট কোন ঘূর্ণিঝড়ের। দেশসমূহ হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ওমান, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড।






 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
তানিয়া ২৪ মে, ২০১৬, ১১:৪১ এএম says : 0
বেড়িবাঁধগুলো আরো সুরক্ষিতভাবেই করতে হবে।
Total Reply(0)
ফজলুল হক ২৪ মে, ২০১৬, ১২:৩২ পিএম says : 0
বঙ্গোপসাগর ঘেরা দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলে বসবাসরত সাড়ে ৪ কোটি জনগোষ্ঠির জন্য বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন সেন্টারসহ পর্যাপ্ত নিরাপদ অবকাঠামো আজো গড়ে উঠেনি কেন ?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন