সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘তনুর ধর্ষক-খুনিরা দুর্দান্ত সাহসে জঙ্গলে লাশ ফেলে গেছে’

মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক আজ হতে পারে

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ¯œাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যার পর লাশ জঙ্গলে আনার ক্ষেত্রে খুনিরা সাহসের সঙ্গে কৌশলে পেশাদার খুনির মতো কাজগুলো করেছে। তবে খুনিরা যতই সাহসী, কৌশলী হোক ডিএনএ প্রোফাইল মেলার পর তাদের আইনের আওতায় আসতেই হবে।
বাঁচার উপায় নেই। এমনটি জোর দিয়ে বলেছেন তনু হত্যা মামলার সিআইডির তদন্ত সহায়ক দলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। এদিকে আদালতের মাধ্যমে তনুর ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসার সম্ভাবনা রয়েছে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের।   
দেশব্যাপী আলোচিত তনু হত্যা মামলা নিয়ে সিআইডির তদন্ত কাজে অগ্রগতি বাড়ছে। সিআইডির তদন্ত সহায়ক দল কেবল তনুর ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের প্রোফাইল মেলানোর বিষয় নিয়েই বসে নেই। তনুর ডিএনএ রিপোর্টের পর সন্দেহভাজনদের ডিএনএ প্রোফাইলের ধাপে যাওয়ার আগে সিআইডি সন্দেহভাজনদের তালিকার মধ্যে সম্ভাব্য ধর্ষক-খুনি থাকার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সম্ভাব্যদের স্বভাব নিয়েও গবেষণা শুরু হয়েছে সিআইডির। তারা ধর্ষক-খুনিদের স্বভাব (ক্যারেকটার) নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। হত্যাকা- ও ধর্ষণের ঘটনাটি সেনানিবাসের ভেতরে হয়েছে, এ বিষয়ে আরও আগে থেকেই সিআইডি শতভাগ নিশ্চিত রয়েছে। তনুকে ধর্ষণ শেষে হত্যার পরের ধাপগুলোতে ধর্ষক ও খুনিরা দুর্দান্ত সাহস দেখিয়েছে। সিআইডি মনে করছে ধর্ষণ-হত্যা যেখানে হয়েছে, সেই স্থান আর লাশ পাওয়ার স্থান এক নয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে খুনিরা তনুকে মারার পর তার লাশ গুম করার কোনো উদ্দেশ্য নেয়নি। আর লাশটি যাতে সহজে তার পরিবার খুঁজে পেতে পারে এজন্য তনুর ঘরের কাছাকাছি জঙ্গলটি বেছে নিয়েছে খুনিরা। পায়ে হেঁটে ধরাধরি করেও তনুর লাশ খুনিরা জঙ্গলে ফেলে যায়নি। তারা হত্যার স্থান থেকে জঙ্গল পর্যন্ত লাশটি নিয়ে আসতে গাড়ি ব্যবহার করেছে, এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত সিআইডি।
কেবল তা-ই নয়, তনুর জুতা, ব্যাগ, মোবাইল ফোন, মাথার কাটা চুলÑসবই রাখা হয়েছে সহজে লাশ উদ্ধারের জন্য, যাতে লাশ উদ্ধার নিয়ে হত্যাকা-ের মূল জায়গা চিহ্নিত হয়ে না পড়ে। তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এমন বাহ্যিক আলামত হিসেবে খুনিরা লাশের অদূরে চারটি কনডমের ছেঁড়া প্যাকও ফেলে গেছে। সব মিলে সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত এলাকায় হত্যার পর তনুর লাশ জঙ্গলে আনতে খুনিদের আচরণ পেশাদার খুনিদেরও হার মানিয়েছে বলে মনে করছেন সিআইডির কর্মকর্তারা। সিআইডির ওই সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত সহায়ক দলের প্রধানসহ সবাই এই মামলার রহস্যের জট খুলতে এবং খুনিদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে মিডিয়াসহ দায়িত্বশীল সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এদিকে তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত দিতে পারবেন না, এমন সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কে পি সাহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। ডিএনএ রিপোর্ট প্রাপ্তি প্রসঙ্গে সিআইডি আরও আগে চিঠি দিয়ে ফরেনসিক বিভাগকে জানিয়েছে, তা আদালতের মাধ্যমে নেয়ার জন্য। সিআইডির চিঠির সূত্র ধরে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েও বসেনি। রোববার বসার কথা ছিল। তাও হয়নি। আজ মঙ্গলবার বসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।  
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ রাত ১০টার দিকে তার বাড়ির কাছাকছি কুমিল্লা সেনানিবাসের আবাসিক এলাকা পাওয়ার হাউজের জঙ্গল থেকে তার বাবা ইয়ার হোসেন প্রতিবেশী এক শিক্ষকসহ উদ্ধার করেন। ২১ মার্চ তনুর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তাড়াহুড়া করে দেয়া হয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা, শারমিন সুলতানা প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করেন ধর্ষণের আলামত ও মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। ৩০ মার্চ দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। প্রায় ৫৩ দিন গড়ালেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নামে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কে পি সাহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের গড়িমসি চলছেই চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন