স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন সরকারকে ভোটারবিহীন ও অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এদের আমলে জেলায় জেলায় গডফাদার তৈরি হয়েছে। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে এক মিলাদ মাহফিলে তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে গডফাদারের হাতে আইন, প্রচলিত আইনের কোনো বালাই নেই। আজকের এই পবিত্র শবে বরাতের দিনে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করব, আমরা যেন এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাই।
গত রোববার বাদ আসর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় দলটির উদ্যোগে এই মিলাদ মাহফিল হয়। এ সময় দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে মুনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের সভাপতি এম এ মালেক।
মিলাদপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষের জীবনের আজ কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। কোনো ধর্মের লোকই আজ নিরাপদ নয়। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা নিহত হচ্ছে, অথচ সরকার নির্বিকার। তারা শুধু বিএনপির ওপর এর দায় চাপাচ্ছে। আমরা যেন ত্রাসের রাজত্বে বসবাস করছি।
তিনি বলেন, গডফাদারদের কথায় কান ধরে উঠবস করা ইসলাম সমর্থন করে না। দেশে সেক্যুলারিজমের নামে ধর্মহীনতা চালু হয়েছে। ইসলামে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এর জন্য দেশে প্রচলিত আইন আছে। কিন্তু গডফাদাররা এ আইন মানছে না।
মিলাদে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহীন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবেদ রাজা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল হাসান, আসাদুজ্জামান আসাদ, মিজানুর রহমান সোহাগ, মেহবুব মাসুম শান্ত, সাবেক ছাত্র নেতা আব্দুল মতিন, সর্দার মো: নূরুজ্জামান, আব্দুস সালাম খান, ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন রতন প্রমুখ।
ছাত্রসংসদের অভাবে রাজনীতিতে আসছেন ব্যবসায়ীরা : এদিকে ভিন্ন এক অনুষ্ঠানে রিজভী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে এখন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের আগমন ঘটছে। গত রোববার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার আমলে এখন রাজনীতির ধরন ভিন্ন হয়ে গেছে। এখন বিরোধী দল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকবে। আর সরকারি দল হলগুলো দখল করে নেবে। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন শুধু হল দখলই করবে না, তারা সেখানে সিট ও ডাইনিং নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। এ ধরনের ছাত্ররাজনীতি আমরা কখনো দেখিনি, আগে টুকটাক শুনতাম, ঘৃণাও করতাম।
তিনি বলেন, ছাত্রনেতা মানেই হচ্ছে, সে স্বতঃস্ফূর্ত, প্রাণবন্ত, টাটকা এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে শুভ্রদীপ্ত কথা বলে। এই হচ্ছে ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রনেতার পরিচয়, এখন যা আমরা দেখিও না, শুনিও না। সেজন্য মনটা খারাপ হয়ে যায়। সামগ্রিকভাবে এর জন্য বর্তমান অনির্বাচিত সরকার দায়ী, যারা রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করে আছে এবং যাদের কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে দানবীয় আকারে দুঃশাসন বিস্তার লাভ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ সচল থাকত, রাজনীতি ও নির্বাচন হতো। আর ছাত্র সংসদ থাকলে জাতীয় নেতৃত্ব বেরিয়ে আসার যে প্রক্রিয়া সেটি সম্পন্ন হতো। কিন্তু এখন এগুলো নেই। যার কারণে রাজনীতিতে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারসহ বিভিন্ন ধারার লোকজন আসছে। ফলে রাজনীতি করার যে প্রাথমিক ইউনিট সেই শিক্ষাঙ্গন থেকে ক্রমাগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে আসন গ্রহণ করার যে ব্যাপারটি সেটি ক্রমাগতভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন