বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্মদিন

প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : কারার ঐ লৌহ কপাট/ ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,’ বা, ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির,’ অথবা, ‘মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত...’ এমন জাগরণী পঙ্্ক্তি দিয়ে এদেশবাসীকে জাগিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি পরাধীনতার শিকল ভেঙে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন জাতিকে। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ সেই বিদ্রোহী কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এ দিনে কলকাতার বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। আসলে ‘দুখু মিয়া’ ছিলেন বাংলার দামাল ছেলের প্রতীক। কবির বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মায়ের নাম ছিল জাহেদা খাতুন। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি মূলত প্রেম-দ্রোহ, সাম্য-মানবতা ও শোষিত মানুষের মুক্তির কবি।
বাংলায় সর্বোচ্চসংখ্যক তিন সহস্রাধিক গানের স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম। নিজস্ব ধারার সঙ্গীত রচনা করেছেন তিনি। প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত কবি মানুষের সংকীর্ণতা, দীনতা, মূঢ়তা ও নীচতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করেছেন। শোষিত মানুষের মুক্তির প্রথম বার্তাবাহক কবি নজরুলের লেখা কবিতা-গান আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুুগিয়েছে। তার লেখা ‘চল চল চল’ আমাদের রণসঙ্গীত। গান ও কবিতার মতো তার লেখা গল্প, নাটক, উপন্যাসও এ জাতির অনন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ কবির এ গানের কথা স্মরণে রেখে মৃত্যুর (মৃত্যু : ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র) পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। আজ তার সেই অন্তিম শয্যা ছেয়ে যাবে অগণিত অনুরাগীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে।
প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে সারা দেশে উদযাপন হবে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে পৃথক বাণী দিয়েছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হবে কবিকে নিয়ে নিবন্ধ। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে আসা কবির জন্মবার্ষিকীর দিনটি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালবাসায় উদযাপন করবে। এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে চট্টগ্রামে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি প্রফেসর ইমেরিটাস রফিকুল ইসলাম ও জাতীয় কবির পৌত্রী খিলখিল কাজী। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। এছাড়াও ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তার ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।
ঐদিন সকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে। কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে নজরুল ইন্সটিটিউট ও নজরুল একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ছাত্রী-ছাত্রীরা কলা ভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন এবং সেখান থেকে সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে শোভাযাত্রা সহকারে কবির মাজারে গমন করবেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘নজরুল গবেষণা কেন্দ্র’র আয়োজনে ১১৭তম ‘নজরুল জন্মবার্ষিকী’ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে ‘নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা’ শিরোনামে বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মত। বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হচ্ছে দেশ-বিদেশে। কোনো সঞ্জীবনী মন্ত্রে তিনি উচ্চ কণ্ঠে বলতে পারেন, ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না।’ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণা বন্ধ হয়নি কিংবা উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোলও কখনো থামেনি। আর সেই কারণেও নজরুল আমাদের কাছে এখনো প্রাসঙ্গিক। আসলে বিদ্রোহী কবি যেমন ছিলেন নির্ভীক, তেমনি এই প্রেমিক কবি ছিলেন রোমান্টিক। রোমান্টিকতার আতিশয্য ও অভিমানে ভরা তার অনেক গান গত শতকের অনেকটা সময় ধরে বাঙালির হৃদয়রাজ্যে বিচরণ শুরু হয়, যা আজও দীপ্যমান।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন জাতীয়তাবোধ। তার কলম শাসকের অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিমান ছিল। তিনি ছিলেন মানবতার কবি। তিনি বিদ্রোহী, সংগ্রামী। তিনি প্রেমিক, আবার তিনিই সাম্য ও শান্তির বার্তাবাহক।
প্রেসিডেন্টের বাণী
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, নতুন প্রজন্ম নজরুল চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে অর্থবহ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও অন্তহীন ভালবাসা জানান।
তিনি বলেন, কাজী নজরুল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে একজন কালজয়ী কবি। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সা¤্রাজ্যবাদ, শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তির গান।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, কাজী নজরুল বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগরাগিণী ও গজল সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতজগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তার লেখার ভঙ্গি ছিল প্রচলিত ধারা থেকে আলাদা, তাতে সার্থক সংমিশ্রণ ঘটে সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি শব্দের। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, কবি, সংগীতজ্ঞ, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও নায়ক।
আবদুল হামিদ বলেন, নজরুলের ক্ষুরধার লেখনীর স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়েছে তেমনি তার বাণী ও সুরের অমীয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙাালির হৃদয়কে। মহান মুক্তিযুদ্ধে কবির গান ও কবিতা অনিঃশেষ প্রেরণা জুগিয়েছে। তার লেখনী থেকেই আমরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। তিনি সাম্য ও মানবতার চিরঞ্জীব কবি কাজী নজরুলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবিনশ্বর উপস্থিতি বাঙালি জাতির প্রাণশক্তিকে উজ্জীবিত রাখবে।
তিনি বলেন, তরুণ সমাজকে শৃঙ্খল ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে এবং অজানাকে জয় করতে তিনি পথ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় কবি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখতেন, তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে একথা বলেন। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নজরুল আমাদের প্রাণের কবি। মানবতা, সাম্য ও দ্রোহের কবি। আধুনিক বাংলা গানের বুলবুল। বাংলা সাহিত্যে তার আবির্ভাব ধূমকেতুর মত। তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বিদ্রোহী কবি নজরুল একাধারে ছিলেন গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সম্পাদক ও অনুবাদক। কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী এ কবি তার লেখনীর মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
খালেদা জিয়া বাণী
বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, কবি নজরুলই উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম কণ্ঠস্বর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি একথা বলেন। তিনি তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং স্মৃতির প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান।
বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীতে আরো বলেন, ‘কবি নজরুল বাংলা সাহিত্যের এক অবিসাংবাদিত প্রাণপুরুষ। শত জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনী দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। নিজেও অত্যাচার সয়েছেন ঔপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠীর। পারিবারিক সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও নির্বাক হওয়া পর্যন্ত সাহিত্য-চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন বিস্ময়কর বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, তার ক্ষুরধার লেখনীর মধ্যে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মন্ত্রণা সুষ্পষ্ট। তার সাহিত্যে উচ্ছ্বাস ও স্বতঃস্ফূর্ততা এক অনন্য সৌন্দর্যময়তায় বিশিষ্ট শিল্পরূপ ধারণ করেছে। তিনি যুগান্তরের কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যে নবযুগের সূচনা করেন। অন্তর্গত সুন্দরের প্রেরণাতেই তিনি অসুন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন।’
বেগম জিয়া বলেন, জাতীয় কবি দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করতেও দ্বিধা করেননি। তিনি দেশে দেশে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন অনমনীয় প্রতিবাদী। তার কবিতা ও গানে মানবতা ও সাম্যের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। তিনি ছিলেন একাধারে শ্রমিক, সৈনিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নির্ভীক কণ্ঠস্বর এবং একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক যোদ্ধা। তিনিই উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তার কবিতা ও গান আমাদের মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এছাড়াও তার প্রকৃতি, মানবপ্রেম ও ভক্তিমূলক গান অনন্য বৈচিত্রময় সুর ও বাণীর সংমিশ্রণে এক অনবদ্য স্বপ্নিল পরিবেশ সৃষ্টি করে। যে গানের আবেদন চিরকালীন ও চিরস্থায়ী। তার সৃষ্টিকর্ম আমাদেরকে চিরদিন স্বদেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’ জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকল কর্মসূচির সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করেন বেগম জিয়া।
ত্রিশালে ৩ দিনব্যাপী জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান
ত্রিশাল থেকে এস এম হুমায়ুন কবীর জানান, আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। কবি নজরুলের কৈশোর স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানকে ঘিরে ত্রিশাল তথা ময়মনসিংহবাসীর মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নজরুলপ্রেমী ত্রিশালবাসীও নজরুলকে ধারণ করে আপন মনে। নজরুলের স্মৃতিকে নিয়ে তারা গর্বিত। তাই কবি নজরুলের জন্ম উৎসব যেন তাদের কাছে ঈদের আনন্দের চেয়েও উপভোগ্য। ইতোমধ্যেই প্রতি বছরের মতো এবারও নজরুল জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ও নজরুল মেলাকে উপভোগ করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নজরুল ভক্ত অনুরাগী ও আত্মীয়-স্বজনরাও ত্রিশালে ছুটে এসেছেন। জাতীয় কবির বাল্য বিদ্যাপীঠ দরিরামপুর নজরুল একডেমীর মাঠে প্রতি বছরের ন্যায় জাতীয় পর্যায়ে ৩ দিনব্যাপী নজরুল জন্মবার্ষিকীর প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি।
ত্রিশালে কবির স্মৃতিকে ধারণ করে গড়ে উঠেছে কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ত্রিশালের কজির শিমলার কাজী রফিজ উল্লাহ দারোগা কবি নজরুলকে ১৯১৪ সালে আসানসোলের রুটির দোকান থেকে নিয়ে আসেন। ত্রিশালের দরিরামপুর হাই স্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমী) ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি করেন। ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়ীতে কিশোর নজরুল জায়গীর থেকে দরিরামপুর স্কুলে লেখাপড়া করতেন।
নজরুল জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ত্রিশালের মাটিতে আগমন ঘটবে দেশবরেণ্য নজরুল গবেষক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও নজরুল ভক্ত অনুরাগীদের। নজরুল আবহে ত্রিশাল হয়ে উঠবে কাব্যময়। নজরুল সংগীতের ঝংকারে মুখরিত হয়ে উঠবে ত্রিশালের আকাশ বাতাস। সকলের সম্মিলনে ত্রিশাল পাবে এক ভিন্ন মাত্রা।
অপরদিকে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৩ দিনব্যাপী নজরুল জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়েছে। আজ বিকেলে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালার উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি।
ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেকের বাণী
এ সপ্তাহে বাংলাদেশ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে সমধিক পরিচিত, তাঁর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করছে। তাঁর জন্মের ১১৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও, এখন পর্যন্ত নজরুলের লেখনি আমাদের সবার কাছে তাৎপর্যময় মহৎ সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলে, শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের সকল মানুষের’।
গোঁড়ামী এবং জাত্যাভিমানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফসল হচ্ছে বাংলাদেশের জন্ম। নজরুলের কর্ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে মুক্তি ও সাম্যের পথে অনুপ্রাণিত করেছে। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় বর্ণিত, সকল মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্ম নেয় এবং অধিকার ও মর্যাদায় তারা সমানÑ এই কথা নজরুল লিখেছিলেন অনেক আগেই। যে কোনো রকমের বৈষম্য হতে মুক্ত থেকে, সম্ভাবনার আলোয় নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার ক্ষেত্রে মানুষের অধিকারের প্রতি তিনি ছিলেন সোচ্চার।
নজরুলের অসামান্য কবিতা ‘নারী’ তে মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্য যে বৈষম্য তার বিরুদ্ধে তিনি বলেছেন; এবং এর পাশাপাশি অন্যান্য কবিতায় তিনি মানুষের প্রতি যে কোনো ক্ষেত্রে, যে কোনো রকমের বৈষম্য বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। যে কোনো বিভেদের বিপরীতে, নজরুলের লেখনি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ কৃষ্টি এবং ঐক্য-সবার অন্তর্ভুক্তি-বৈচিত্র্য ও সহিষ্ণুতার সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের অংশ। এ বছরের কমনওয়েলথ প্রতিপাদ্য হচ্ছে সবার অন্তর্ভুক্তি; যে মূল্যবোধ নজরুল লালন করেছেন। সেটিই কমনওয়েলথ-এর প্রাণ। বাংলাদেশ এবং ব্রিটেন, কমনওয়েলথ-এর মৌলনীতি- সহিষ্ণুতা, অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্র্যময়তার অংশীদার এবং দেশ দুটি মানবাধিকার রক্ষা ও সমুন্নত রাখায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ তার গৌরবের ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ কৃষ্টি নিয়ে অহংকার করতে পারে। তবে ব্লগার, বিদেশি নাগরিক, মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের সদস্য, ধর্মীয় বা সংখ্যালঘুসহ দেশের নিরীহ মানুষদের উপর হামলা বাংলাদেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার প্রতি এক ধরনের কটাক্ষ। আজ আমরা নজরুলের কর্ম ও জীবন এবং ভিন্নতা, ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও সহিষ্ণুতার মতো মূল্যবোধগুলোকে স্মরণ করি।
“গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই
নহে কিছু মহিয়ান।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন