জনকহিংসা-বিদ্বেষ। পরাশ্রীকাতরতা। আরবীতে বলে হাসাদ। ইংরেজিতে ঃড় বহাবু, ভববষ বহাু ভড়ৎধিৎফব বলে। ‘অপরের সুখ, ধন-সম্পদ দেখে রোষে জ্বলে মরা এবং ঐ সুখ নিজের হোক বা না হোক তা ধ্বংস কামনা করার নাম হিংসা-বিদ্বেষ’। আল্লামা মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.) বলেন, অন্যের নিয়ামত ধ্বংস বা চলে যাওয়ার আকাঙ্খাকে হিংসা বলে’।
হিংসা বা ঈর্ষার দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো অপরের সম্পদ নষ্ট হয়ে নিজের নিকট আসার আকাঙ্খা করা। অপরটি হলো অন্যের নিয়ামত নষ্ট না হয়ে অনুরূপ নিয়ামত নিজের মধ্যে আসার কামনা করা। দুটির মধ্যে প্রথমটি সর্বাবস্থায় অবৈধ, নাজায়েয। এ জাতীয় হিংসা থাকা করীরা গুনাহ। আর দ্বিতীয় ধরণের হিংসা সৎকাজে বৈধ। যাকে গিবতাহ্ বা ঈর্ষা বলে। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, দু’ধরণের লোক ব্যতীত অন্য কারো প্রতি ঈর্ষা করা যায় না। (তাদের একজন হলো) এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ (প্রচুর) ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সত্যের পথে তা ব্যয় করার প্রচুর মনোবলও দান করেছেন। আর অপর ব্যক্তি হলো যাকে আল্লাহ তা’য়ালা হেকমত (প্রচুর প্রজ্ঞা) দান করেছেন। অতঃপর সে তা দ্বারা সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং তা (মানুষকে) শিক্ষা দেয়’ -(বোখারী -১৪০৯, মুসলীম -২৬৮, আহমদ -৪১০৯, ইবনে মাজাহ -৪২০৮, মিশকাতুল মাসাবীহ -২০২)।
হিংসা-বিদ্বেষ এমন একটি নিকৃষ্ট স্বভাব যা মানুষকে ক্ষিপ্ত করে অহেতুক শত্রæতা বাড়িয়ে দেয়। হিংসা মানুষের অন্তর্জালা বাড়িয়ে দেয়। হিংসার দহনে হিংসুক জ্বলতে থাকে সারাক্ষণ। হিংসুক ব্যক্তি অন্যের সফলতায় হিংসার বশবর্তী হয়ে ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত হতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করে না। আমাদের পিয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কারো সাথে হিংসা করেন নি, বরং উম্মতদেরকে হিংসা না করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। হাদীসের বাণী, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা কোন ব্যক্তি সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, মন্দ ধারণা হল জঘণ্যতম মিথ্যা কথা। কারো দোষ-ত্রæটি জানার চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, আর একজনের উপর দিয়ে মাল দর করো না ও দালালী করো না। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রæতা রেখো না, পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পিছনে লাগো না। বরং তোমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে থাকবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, পরস্পরে লোভ-লালসা করো না’ -(বোখারী -৬০৬৪, মুসলীম -২৫৬৩, আহমদ -৭৮৫৮, মিশকাতুল মাসাবীহ -৫০২৮)।
শরীয়তে হিংসা সম্পূর্ণরূপে হারাম। ইসলামী শরীয়ত কারো সাথে হিংসা করার সুযোগ প্রদান করে নি। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তোমরা হিংসা থেকে বেঁেচ থাকো। কারণ, আগুন যেমন লাকঁড়িকে খেয়ে ফেলে হিংসা ঠিক তেমনি নেকী ও পূণ্যকে খেয়ে ফেলে’ -(আবু দাউদ-৪৯০৩, মিশকাতুল মাসাবীহ -৫০৪০)। জমহুর মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, যদিও হাসাদ বা হিংসা অবৈধ এবং গিবতাহ্ বা ঈর্ষা বৈধ তবুও যে গিবতাহ্ বা ঈর্ষা হাসাদ বা হিংসা সৃষ্টি করে, সে গিবতাহ্ও অবৈধ এবং হারাম।
আমাদের সমাজে হিংসুকের সংখ্যা অনেক বেশী। কারো উন্নতি সহ্য করার মন মানসিকতা সম্পন্ন লোকের বড়ই অভাব। হিংসার দহনে প্রজ্জ্বলিত হতে থাকে সারাক্ষণ। অথচ হিংসা হিংসুককেই বেশী দহন করে। তাই হিংসা করা হতে বিরত থাকতে হবে। নচেৎ সমাজকে এগিয়ে নিবে কারা? এজন্য কারো প্রতি হিংসা করা যাবে না এবং কারো হিংসার শিকার যাতে না হতে হয় সেদিকেও সতর্ক থাকা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে হিংসা থেকে বাঁচার জন্য দো’আ শিখিয়ে দিযেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’ -(সুরা আল ফালাক্ব ঃ ০৫)। আসুন আমাদের সমাজকে গড়ে তুলি হিংসামুক্ত। যাতে করে সমাজ হবে বসবাস উপযোগী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন