আবু হেনা মুক্তি : কোন প্রকার বাস্তবমুখী নতুন প্রকল্প প্রণয়ন কিম্বা উপকূলের বসবাসরত প্রায় ৪ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই নিরবে নিভৃতে কেটে গেল আইলার ৭টি বছর।
এখনো খুলনার কয়রা, দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও বাগেরহাটের শরনখোলা, মংলার শত শত পরিবার গৃহহীন। সরকারের কাবিখা, ভিজিডি, ভিজিএফ ও একশো দিনের কর্মসূচী বিভিন্ন সময়ে বাস্তবায়িত হলেও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে শুভংকরের ফাঁকি। ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার তা-বে ল-ভ- হয়েছিল খুলনার কয়রা উপজেলাসহ গোটা দক্ষিণ উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ। আইলার জলোচ্ছ্বাসের তা-বে উপকূলের শতাধিক মানুষের প্রাণহানীসহ বিলীন হয়েছিল ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট দালানকোটাসহ সব কিছু। শতশত বছরের পুরান জনপদগুলোর কোন চিহ্নই ছিল না। আইলার ৭ বছর অতিবাহিত হলেও আজও অরিক্ষিত উপকূলের লাখ লাখ মানুষ। বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর মনোবল আর প্রাণশক্তি উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সহজাত প্রবণতা। মা মাটি প্রকৃতি যেমন সবকিছু উজাড় করে মানুষকে সহায় করেছে তেমনি প্রকৃতির রুদ্র রোষেও ক্ষত-বিক্ষত হতে হয় নিমেষেই। তবু শত বাধা-বিপত্তি প্রতিকূলতার মাঝেও লোনা হাওয়ার মানুষগুলো বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন দেখে।
সিডরের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আইলা ল-ভ- করে দেয় গোটা উপকূলীয় অঞ্চল। গত ৭ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে নিজের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছে কয়েক লাখ পরিবার। অবশ্য এখনো মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। অধিকাংশ বাঁধ মেরামত হলেও বেশকিছু বাঁধ এতোদিনেও পাউবো আটকাতে পারেনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুদীর্ঘ বেদনাবিধুর অধ্যায় আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন থেকে ৭ বছর কেড়ে নিলেও সংগ্রাম মুখর জীবনের অধিকারী কালজয়ী এসকল উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ শত প্রতিকূলতার মাঝেও ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। দুর্যোগে ক্ষত-বিক্ষত মানুষগুলোর জীবনে যেন ভোরের সোনালী সূর্য উঁকি দিচ্ছে। আইলা দুর্গত এলাকার উন্নয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬শ’ কোটি টাকার যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল তা এখন শেষের দিকে।
আমাদের কয়রা উপজেলা সংবাদদাতা মোস্তফা শফিকুল ইসলাম জানান, কয়রা উপজেলায় আইলার সময় গুরুত্বপূর্ণ ২৭টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা কয়রার পানির নিচে তলিয়ে যায়। বর্তমানে সব কয়টি বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে আটকানো বাঁধগুলো এখনো দুর্বল। প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি ছিল সে অনুযায়ী বাঁধের উচ্চতা হয়নি। যে কারণে প্রতি আমাবশ্য পূর্ণিমার গোনে বিভিন্ন পয়েন্টর বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে পড়ায় এলাকাবাসী আতংকে দিন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। এছাড়া চিংড়ী ঘের করার কারণে সহস্রাধিক জায়গায় বেড়িবাঁধ ফুটো করায় তা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যা অবিলম্বে সংস্কার না করা হলে যে কোন মুহূর্তে অঘটন ঘটতে পারে। অপরদিকে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ এখনো ভিটে ছাড়া। গোটা ইউনিয়নটি এখনো বিরান ভূমি রয়েছে। কোন রাস্তাঘাট নেই। নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। খোলা মাঠে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০ লাখ মানুষের সবাইকে এখনো পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি। অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছে তারা। কিছু কিছু গ্রামে এখনো প্রতিদিন জোয়ার ভাটা হচ্ছে। আইলা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখলে এখনো মানুষ আৎকে ওঠে। মনে হবে এখানে কোন বসতি ছিল না। নতুন সভ্যতার জন্ম হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়া দুর্গত মানুষ আর ত্রাণের দিকে চেয়ে থাকতে চায় না। তারা নিজ বাড়িঘরে আবার ঘর গৃহস্থালী করতে চায়। মাথা উঁচু করে এ লড়াইয়ে জিততে চায়। কারণ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে।
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের এমপি এড. শেখ মো. নুরুল হক বলেন, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে বেড়িবাঁধগুলো যেভাবে সংস্কার হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন