বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রেল বহরে যুক্ত হচ্ছে স্টিলের লাল-সবুজ কোচ

চলাচলের সময় কোনো শব্দ করবে না : ইঞ্জিনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রেলের বহরে যুক্ত হচ্ছে বিলাসবহুল ২৭০টি কোচ। বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে মিল রেখে স্টেইনলেস স্টিলের কোচগুলোর রঙ হবে লাল-সবুজ। ২৭০টি কোচের মধ্যে ১৫০টি কোচ আনা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া এবং ১২০টি আসছে ভারত থেকে। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে দুটি দেশের কোচই স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। এগুলো বিলাসবহুল, আরামদায়ক, টেকসই এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। ওজনে অপেক্ষাকৃত হালকা বলে গতিবেগও বেশি। কোচগুলো রেলের বহরে যুক্ত হলে ট্রেনের গতি ও যাত্রীসেবার মান দুটোই বাড়বে। রেলসচিব মো: ফিরোজ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, চলতি বছরের জুন মাসেই কোচগুলো রেলের বহরে যুক্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী মার্চ মাসে ভারতের পাঞ্জাবের কাপুলথালা রেলওয়ের কারখানায় তৈরি কোচগুলো আসা শুরু হবে।    
সূত্র জানায়, রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান আধুনিকায়ন, নিরাপদ ও আরামদায়ক করার লক্ষ্যে ২৭০টি নতুন যাত্রীবাহী কোচ ও ১০টি ইঞ্জিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত বছরের নভেম্বর মাসে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ জন্য পৃথক দুই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত প্রকল্পদুটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১শ’ আট কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে সরকারের ৫৭৪ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্প সাহায্য হিসেবে দেবে। প্রকল্প দুটির মধ্যে ১ হজার ৩৭৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ ‘প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ নামক প্রকল্পের আওতায় ২৭০টি কোচ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া কোচগুলো ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ২টি ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট এ  প্রকল্পের আওতায় কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। একনেকের ওই সভায় ৭৩৪ কোটি টাকার বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ রিলিফ ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ নামক অপর একটি প্রকল্পের আওতায় ১০টি ইঞ্জিন, ৪টি অ্যাকসিডেন্ট রিলিফ ক্রেন এবং একটি লোকোমোটিভ সিমুলেটর কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এই দুটি প্রকল্পের আওতাধীন রেলের জন্য ২৭০টি বিলাসবহুল কোচ আনা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি টিম ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে গিয়ে কোচগুলো দেখে এসেছেন। ইন্দোনেশিয়ার কোচগুলোর বিলাসবহুল এবং এগুলোর হুইল (চাকা) সিয়াট কোম্পানীর। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি কোচগুলো অপেক্ষাকৃত হালকা। চলাচলের সময় এগুলো কোনো শব্দ করবে না। ওজন কম হওয়ায় এগুলো টানতে ইঞ্জিনের শক্তি কম লাগবে। এতে করে এগুলোর গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। দীর্ঘস্থায়ী কোচগুলো রক্ষণাবেক্ষণের খরচও খুব কম।
অন্যদিকে, ভারতের কোচগুলো অস্ট্রিয়ান টেকনোলজিতে তৈরি। পাঞ্জাবের কাপুরথালা কারখানায় তৈরী হচ্ছে কোচগুলো। বিলাসবহুল এই কোচগুলো লিঙ্ক হোপম্যান বুশ (এলএইচবি) ব্রান্ডের। ভারতের বিলাসবহুল ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ ও ‘শতাব্দী এক্সপ্রেস’ ট্রেনে এই কোচগুলো ব্যবহার করা হয়। এলএইচবি কোচের চেয়ার ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা অত্যন্ত বিলাসবহুল।
জানা গেছে,  রেলওয়ের মিটার গেজে বর্তমানে চলার উপযোগী ১ হাজার ১৬৫টি যাত্রীবাহী কোচ আছে। এর মধ্যে ৫৯১টির অবস্থা ভালো নয়। এ কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রীসেবা দিতে পারছে না। সে কারণে মিটার গেজের জন্য বেশি কোচ আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ব্রড গেজে চলার জন্য রেলওয়ের ৩২৪টি কোচ রয়েছে, যার মধ্যে ৭৮টির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ব্রডগেজ লাইনের জন্য আনা হচ্ছে বিলাসবহুল ৫০টি কোচ।  
গত বছর নভেম্বরে একনেকের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, নতুন কোচ কেনা হলে তা আন্ত:নগর ট্রেন হিসেবে চলবে। একইসাথে পুরোনো কোচগুলো নতুন কোচ দিয়ে স্থানান্তরিত হবে। স্থানান্তরিত পুরোনো কোচগুলো পরবর্তীতে মেইল ট্রেন ও লোকাল ট্রেন হিসেবে চলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন