শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘ফণি’র পরের ঘূর্ণিঝড় ‘বায়ু’

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। ‘ফণি’ মানে বিষধর কালনাগিন সাপের ফণা। এই ঘূর্ণিঝড়ের ‘ফণি’ নামটি বাংলাদেশেরই দেয়া। ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের তীরবর্তী দেশগুলো মিলে সর্বসম্মতভাবে একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে। এর আওতাভূক্ত ৮টি প্যানেল দেশ হলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ওমান।
দুর্যোগ প্রস্তুতি-সতর্কতা, ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের সুবিধার জন্য এবং ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ড ধরে রাখতেই নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন- সাম্প্রতিক কালের ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সিডর, আইলা, নার্গিস, রোয়ানু, গাজা, তিতলি, বুলবুল, কায়া, মাহা, মোরা উল্লেখযোগ্য।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি মে মাসেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ। এরমধ্য থেকে ঘনীভূত ও শক্তি সঞ্চয় করে তৈরি হতে পারে আরও একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়। ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী সামনের ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘বায়ু’। মানে হাওয়া বা বাতাস। আর একইভাবে পরবর্তী একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের একেক নাম দেয়া হবে। ধাপে ধারে সামনের আরও কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে তালিকা তৈরি হয়েই আছে। নামগুলো ফুরিয়ে গেলে ফের মিটিং করে উপরোক্ত প্যানেল দেশগুলো আবারও ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করবে।
অতীতের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের ইতিহাসক্রম অনুসারে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বেশ কয়েকটি ভয়াল ঘূর্ণিঝড় মে মাসে বাংলাদেশ ও ভারতে আঘাত হানে। ফলে মে মাস সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ¡াস প্রবণ মাস।
গত ২৪ এপ্রিল ভারত মহাসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ-সুস্পষ্ট লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ-গভীর নিম্নচাপ থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ২৬ এপ্রিল সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়টি। যার নাম ফণি। এটি গত শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের ওডিশায় ছোবল হানে ঘণ্টায় প্রায় ২শ’ কিলোমিটার গতির শক্তিমত্তা নিয়ে। এরপর ভুবনেশ্বর, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারত পেরিয়ে দুই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় ফনি। গতকাল শনিবার অর্ধেকটা শক্তি হারিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে এই ঘূর্ণিঝড়।
দুর্বল হয়ে কেটে যাচ্ছে ফণি
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ ভারত থেকে ভারতের দিকেই কেটে যাচ্ছে। ভারতে আঘাত করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে দুর্বল হয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ গতকাল (শনিবার) রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় লঘুচাপ আকারে ক্রমেই কেটে যাচ্ছে। ফণির ভগ্নাংশটুকু ময়মনসিংহ হয়ে ভারতের আসামের দিকে চলে যাবে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের সাত নম্বর ও ছয় নম্বর বিপদ সঙ্কেত তুলে নেয়ার পর মংলা, পায়রা এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এদিকে ফণির প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ, কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে নোয়াখালীতে ১২১ মিলিমিটার। ঢাকায় ৪৫, চট্টগ্রামে ১৭, ময়মনসিংহে ৮৬, সিলেটে ৬৬, রাজশাহীতে ৫৫, রংপুরে ৩৩, খুলনায় ২০, বরিশালে ৬৮ মিলিমিটারসহ স্বস্তির বর্ষণে সিক্ত হয়েছে সমগ্র দেশ। বৃষ্টিপাতের ফলে দিনের তাপমাত্রার পারদ ৩০ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। তবে আগামী তিন দিনে তাপমাত্রা ফের বাড়তে পারে।
আজ (রোববার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। আজ সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে। এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে আবহাওয়ার সবশেষ বিশেষ বুলেটিনে গতরাতে জানা গেছে, পাবনা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ অঞ্চল এবং এর পার্শ¦বর্তী এলাকায় অবস্থানরতরত স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা অঞ্চলে অবস্থান করছে। এটি পরবর্তীতে আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে কেটে যাবে।
এর প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের কিছু কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন