রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলামের আলোকে সফলতার উপায়

এসএম আরিফুল কাদের | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

মানসিক প্রশান্তি, হৃদয়ে তৃপ্তি, অগাধ সুখ, সকল প্রকার দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির মাধ্যমে মানুষ সফলতা খোঁজে। প্রকৃতপক্ষে সুখী, সুন্দর ও সফল একটা জীবনের কথা ভাবলে এসবের বাহিরে আর চাওয়ার কিছু থাকেনা। এসব অর্জনের জন্য কেউবা ধর্মীয় উপায় অবলম্বন করেন। আবার কেউ ধর্মের তোয়াক্কা না করেই কিছু বাস্তবিক পন্থা অবলম্বন করে তা অর্জন করতে চান। তবে কেবলমাত্র একজন মুমিন ব্যক্তিই এ দু’য়ের সফল সমন্বয়ে ঘটাতে পারেন যিনি নিজেকে তাঁর স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করেছেন। আর ¯্রষ্টার কাছে পুরোপুরি সমর্পন আসে তাঁরই দেওয়া বিধান পালনের মাধ্যমে। যাদ্বারা সফলতার মুখ দেখা সম্ভব।

একটি মানুষ সফল হতে প্রথমে তার ঈমান পরিশুদ্ধের পাশাপাশি নেক আমলে জোর দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অতপর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের রব পরিণামে তাদেরকে স্বীয় রহমতে প্রবেশ করাবেন। এটিই সুস্পষ্ট সাফল্য।’ (সূরা জাসিয়া : ৩০) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ এটাই বিরাট সফলতা।’ (সূরা বুরূজ : ১১)
সততা ছাড়া সফলতার কল্পনাই করা যায় না। কেননা, অসৎ মানুষকে কেউ বিশ্বাস করতে পারে না। তাই সফলতা পেতে দুনিয়াতে অবশ্যই সত্যবাদী হতে হবে। যার ফলে পরকালেও এই সততা ব্যক্তির উপকারে আসবে। আল্ল­াহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ। যার নিচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহা সাফল্য।’ (সূরা মায়িদা : ১১৯)
ভালবাসা, হৃদ্যতা, সাহায্য সহযোগিতায় কল্যাণ সাধন ও অনিষ্ট দূরিকরণ এই ালবাসা, সহযোগিতা ও আন্তরিকতার প্রয়োজন। যা পারে প্রকৃত মুমিন ব্যক্তিরা। তাঁদের ভালবাসায় ব্যক্তিজীবন হয় সাফল্যমণ্ডিত। কোরআনের ভাষায়, ‘আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। তাতে তারা চিরদিন
থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসাফল্য।’ (সূরা তাওবা : ৭১-৭২)
খাশয়াতুল্ল­াহ তথা আল­াহভীতি ও তাকওয়া বান্দার সফলতার উৎস। কোনো কাজে যদি বান্দার আল্লাহভীতি ও তাকওয়া না থাকে তাহলে অসফলতার কাজ পাইকারীভাবে করতে থাকবে। যার কারণে বান্দা সফলতার মুখ দেখতে পারবে না। আর এজন্যই প্রয়োজনীয় দিক অর্জনকারীকে সাফল্যব্যক্তি বলে উল্লে­খ করে মহান আল্ল­াহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করে, আল্ল­াহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই সফল ও কৃতকার্য।’ (সূরা নূর : ৫২)
পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ একে অপরের উন্নতি বা সফলতা দেখে হিংসা করতে শুরু করে। উন্নতির বাধা স্বরূপ ব্যক্তিকে করে নানা তিরস্কার। তাতেও যদি ব্যক্তিটি উন্নতির শিখড়ে পৌঁছে যায় তাহলে করে নির্যাতন ও নিপীড়ন। যারা এ তিরস্কার, নির্যাতন ও নিপীড়ন ধৈর্যধারণ করে সামনে এগিয়ে যায় তারাই হবে সফলকাম। কোরআনের ভাষায়, ‘নিশ্চয়ই আমি তাদের ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম, নিশ্চয়ই তারাই হল সফলকাম।’ (সূরা মুমিনূন : ১১১)
আল্লাহ তাআলা এই ধৈর্যধারণকারী ও নেককার বান্দাদেরকে যে পুরস্কার দান করবেন সে সম্বন্ধে জানিয়ে বলছেন, হে মুজরিম সম্প্রদায়! তোমরা তাদের উপর নানা নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েছিলে এবং বিভিন্নভাবে তাদেরকে তিরস্কার করেছিলে আর তারা ধৈর্য্য ধারণ করেছিল আজ সেই ধৈর্যের পুরস্কার আমি তাদের দান করলাম যে, তারাই সফলকাম। (তাফসির ইবনে কাসীর ৫ : ৪৯৯)
সফলতার মূলে রয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য। যার মধ্যে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য নাই সে সফলতার আশা করতে পারে না। পাশাপাশি প্রয়োজন অন্যায় ও অবিচারের বিরোদ্ধে সঠিক ও সত্য কথা বলা। কোরআনের ভাষায়, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্ল­াহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।’ (সূরা আহজাব : ৭০–৭১) সুতরাং যে ব্যক্তি আল্ল­াহর আদেশ বাস্তবায়ন করে আর তিনি যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকে এবং সঠিক ও সত্য কথা বলে সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করল অর্থাৎ আল­াহর পক্ষ হতে মহা সম্মানে সম্মানিত হল। (তাফসির তাবারি ২ : ২৩৬)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন