শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

একজন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বনাম আ’লীগের হাইব্রিড নেতারা

প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩১ পিএম, ২৭ মে, ২০১৬

স্টালিন সরকার : দৃষ্টিহীনদের মুদ্রা চেনানোর এক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় গত সপ্তাহে ঢাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে গভর্নর ফজলে কবির খুবই তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি করেন। তাঁর বক্তব্য হলো- ‘দৃষ্টিহীন হলেই মানুষ অন্ধ হয় না। দৃষ্টিহীনদের অন্তর্দৃষ্টি থাকে প্রখর; যেটা দিয়ে দেখতে পায়।’ পৃথিবীর কোনো ক্ষণজন্মা ব্যক্তি এ উক্তি করলে তা নিয়ে হয়তো গবেষণা হতো। উক্তিটি বাংলা ব্যাকরণে জায়গা পেত। আসলেই দৃষ্টিহীন হলেই মানুষ অন্ধ হয় না। মানুষের অন্তর্দৃষ্টি থাকে। মন চাইলে সেটা অন্তর্দৃষ্টি দিয়েই দেখা যায়। কিন্তু যাদের চোখ আছে; উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হিসেবে সমাজে পরিচিত, জাঁদরেল নেতা, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী, সুশীল তাদের অনেককেই দেখা যায় চোখ থাকতেও অন্ধের আচরণ করেন। আল্লাহ দু’টি চোখ দান করলেও সবকিছু দেখেন একচোখে। ডক্টরেটসহ নানা ডিগ্রী অর্জন করেও কথাবার্তা বলেন মূর্খের মতো। লাজ-লজ্জার বালাই নেই; করেন মিথ্যার বেসাতি। দেখেনও এক চোখে; আচরণও অনেকটা সে রকমই। চোখ থাকতেও তারা অনেক কিছু দেখতে না পারায় অন্ধের আচরণ করেন। তাদের অবস্থা বাংলা সিনেমার গান ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অভিনন্দন জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই কন্যা বুদ্ধি-প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধুর নাতনি এবং মা প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ইচ্ছে করলে তিনি ‘ক্ষমতাকে’ কাজে লাগিয়ে ভোগবিলাসী হতে পারতেন। ক্ষমতাকে খেয়াল-খুশি মতো ব্যবহার করতে পারতেন। সেদিকে না গিয়ে তিনি এমন সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুদায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন যা সমাজের অধিকাংশ মানুষকে করতে দেখা যায় না। সমাজে অনেক দানশীল, সমাজ সেবক, পরোপকারী, জনহিতকর ব্যক্তি রয়েছেন যারা মানুষের সেবাকে ব্রত মনে করেন। তারপরও তাদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, অন্ধ এবং জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক শিশুদের নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় না। বরং বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সমাজের ‘বোঝা’ এবং ‘বিরক্তকর’ মনে করে এড়িয়ে চলেন; বাঁকা দৃষ্টিতে দেখেন। কিন্তু সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সেই কাজটি বেছে নিয়েছেন। পুতুল স্থায়ীভাবে বিদেশ বিভূঁইয়ে থেকেও দেশের বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সেবায় যেভাবে কাজ করেছেন তা আমাদের জন্য গর্বের, অহংকারের এবং গৌরবের। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ক্ষমতাকে ‘ভোগ-বিলাসের’ পর্যায়ে না নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে সমাজে অটিজমকে এক সময় পাপ-অভিশাপ ভাবা হতো। অটিস্টিক শিশুদের সমাজের বোঝা মনে করা হতো। সমাজ সেবায় কিছু সংগঠন কাজ করলেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা পরিবারের কাছেও ছিল অবহেলিত। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। দক্ষ-অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিতদের তত্ত্বাবধান, বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা, খেলাধুলা, শরীর চর্চা, বইপড়া, প্রত্যেক প্রতিবন্ধী শিশুর বিশেষ চাহিদা পূরণ, বিকলাঙ্গ শিশুদের আর্থিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং মানসিক-শারীরিক অটিস্টিক শিশুদের উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
 বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের অবজ্ঞা না করা এবং প্রতিবন্ধী হিসেবে না দেখার আহবান জানানো সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০৮ সালে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় তিনি কাজ করেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, সামাজিক মর্যাদা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সহায়তা দিতে অবকাঠামো গড়ে তোলে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যার দেখাদেখি দেশের অনেক বিত্তবান এবং পরোপকারী মানুষ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন; অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন এবং সেবা করছেন। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। গতকালও মিডিয়ায় খবর এসেছে গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে ৬শ’ প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যার এই জনহিতকর কর্মকা-ে অটিজম নিয়ে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল তা কেটে যাচ্ছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের অবহেলা করা উচিত নয়; তারাও মানুষ।
 প্রধানমন্ত্রীর কন্যা হয়েও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ভোগ-বিলাসের বদলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন। সমাজের বোঝা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের সম্পদে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। তার এই মানব প্রেমে আমাদের শেখার আছে অনেক কিছুই। অথচ যারা দেশ প্রেমের কথা বলে রাজনীতি করছেন আওয়ামী লীগের সেই হাইব্রীড নেতারা উল্টো পথে হাঁটছেন। আর্তমানবতার সেবার পথে হাঁটছেন না। তারা ক্ষমতাকে শুধু ভোগ-বিলাসের সামগ্রীতে পরিণত করেননি; প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মুখ দিয়ে কখনো বিষ্ঠা ছড়াচ্ছেন, কখনো মিসাইল, বোমা ছুঁড়ছেন। তাদের ছোঁড়া বিষ্ঠায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ; এবং মিসাইল-বোমায় মানুষ হচ্ছে ক্ষত-বিক্ষত।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানম-ির কার্যালয়ের এক কর্মচারী নবম সংসদ নির্বাচনে এমপি অতঃপর প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হন। খুলে যায় ভাগ্যের চাকা। ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের পর মন্ত্রিত্ব জোটেনি। প্রচলিত শিক্ষায় ডক্টরেট ডিগ্রীধারী এ নেতা নিত্যদিন মুখ দিয়ে প্রতিপক্ষের গায়ে বিষ্ঠা ছুঁড়ছেন। হেন শব্দ নেই যে যা ব্যবহার করে দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে (বেগম জিয়ার ডাক নাম পুতুল) গালিগালাজ করেননি-করছেন না। সম্প্রতি বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করে রিমা-ে নেয়ার দাবি জানানো এই নেতা বিএনপি নেত্রীকে আইএস নেত্রী, জঙ্গী নেত্রী, আইএসের সভাপতি, জামায়াত মাতা, আইএসের এজেন্ট, পাকিস্তান বন্ধু অভিহিত করেন। বিএনপি নেত্রীকে পাকিস্তানে চালান করে দেয়া হবে বলেও একাধিক সভায় হুমকি দেন। কত যে বিদঘুটে শব্দের ব্যবহার করে একজন শীর্ষস্থানীয় নেত্রীকে গালিগালাজ করেন তার ইয়ত্তা নেই। উচ্চডিগ্রীর গবেষণার শিক্ষা যেন ‘বিশেষ পল্লীর’ খিস্তিখেউরকে হার মানিয়েছে। আরেক নেতা অন্য দল থেকে নৌকায় চড়ে ক্ষমতায় উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুর অনিষ্ট করাই যার রাজনীতির রণকৌশল ছিল; মন্ত্রী হয়ে তিনি এখন সবচেয়ে বড় মুজিব ভক্ত। সম্প্রতি নিজ দলকে দ্বিখ-িত করা এই নেতাও দীর্ঘদিন থেকে বেগম জিয়াকে হুজি নেত্রী, আইএস জননী, আইএসের পৃষ্ঠপোষক, তাকে শেষ করে দেয়া হবে, খালেদার দিন শেষ, আগুন নেত্রী, সন্ত্রাসী নেত্রী, জঙ্গীমাতা ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার করে গালি-গালাজ করেন। আরেক নেতা ‘বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর’ ঘোষণা দিয়েছিলেন ’৭০ দশকের প্রথমার্ধে। ’৭৯ সালে শরীর থেকে কমরেডের ‘রেড’ খোলস খুলে ফেলে এখন সবচেয়ে বড় মুজিবভক্ত সেজেছেন। নিজেকে গণমানুষের নেত্রী প্রমাণে টিভি ক্যামেরার সামনে গরীব মানুষের জন্য ন্যায্যমূলে দেয়া চাউল ক্রয়ে বাসাবোতে জনতার সারিতে দাঁড়ান, কারওয়ান বাজারে স্বল্প পয়সায় ‘পচা বেগুনের ভাগা’ ক্রয় করেন। ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় হরতাল-অবরোধে বালিশ মাথায় রাস্তার মাঝখানে শুইয়ে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। আরেক নেতা উপজেলা থেকে ঢাকায় এসে আত্মীয়তার সূত্রে ‘বড় পদ’ বাগিয়ে পেয়ে যান উপরে উঠার সিঁড়ি। আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে তিনি হাইব্রীড হিসেবে পরিচিত। আরো কয়েকজন নেতা রয়েছেন তারা এখন সবচেয়ে বড় আওয়ামী লীগার। রয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতের সাজাপ্রাপ্ত একাধিক মন্ত্রী। তাদের মুজিব ভক্তি দেখে যারা বংশপরম্পরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে রয়েছেন তারাও লজ্জা পান। এই সব নেতা এখন দেশে ‘আইএস নেই’ কোরাস গাইলেও দীর্ঘদিন থেকে তারা আইএস-জঙ্গী দেশে গিজগিজ করছে চিৎকারে মানুষের কান ঝালাপালা করেছেন। এখন আইএস নেই দাবি করলেও এক-দুই বছর আগের টিভির ফুটেজ দেখলে দেখা যাবে এসব নেতা আইএসে দেশ ভরে গেছে এমন বক্তব্য প্রায় নিত্যদিন দিয়েছেন। ক্ষমতার মধু লোভী এই নেতাদের দরদ বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য উথলে পড়ছে। ক্ষমতার মদমত্তে থাকা এসব নেতা-মন্ত্রী হরহামেশাই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পুলিশ প্রহরা ছাড়া চলতে পারেন না। নিজ নির্বাচনী এলাকায় একা হাঁটতে ভয় পান। অথচ তারা জনগণের নেতা দাবি করেন। ক্ষমতার দাম্ভিকতা তাদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে ‘ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়’ এ বাস্তবতা ভুলে গেছেন। ক্ষমতার জ-িসে আক্রান্ত এই নেতারা সবকিছু দেখেন একচোখে। দুই চোখ থাকার পরও তারা যেমন দেখতে পারছেন না নিজেদের ছড়ানো বিষ্ঠা; তেমনি মানুষ তাদের সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করেন সেটাও বুঝতে অক্ষম। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গায়ে দুর্গন্ধযুক্ত কথার বিষ্ঠা ছুঁড়েই যাচ্ছেন। অথচ তাদের নেত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ‘ক্ষমতা নয়’ মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পুতুল এখন সারাবিশ্বে বাক-প্রতিবন্ধী শিশু সেবার মডেল। অথচ ক্ষমতার জ-িসে আক্রান্ত মানসিক শক্তি হারানো হাইব্রিড এই সব নেতা প্রধানমন্ত্রীর কন্যার কাছ থেকেও কিছুই শিখছেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন