স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক মামলায় আত্মগোপনে থাকা যুবদল নেতাকে না পেয়ে পুলিশ তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে পরে তাকে মাদক মামলায় আসামি করা হয়। এ অভিযোগ করেছেন, রাজধানীর মিরপুর টেকনিক্যাল কলেজের সাবেক ভিপি ও ঢাকা মহানগর যুবদল নেতা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী হামিদার পরিবার। দারুস সালাম থানা এলাকার বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী হামিদা (৩৭) মাদক মামলার আসামি হয়ে এখন বন্দি রয়েছেন কাশিমপুর কারাগারে।
ভুক্তভোগী হামিদার স্বামী ইসমাইল হোসেন গতকাল টেলিফোনে ইনকিলাবকে জানান, মিরপুর দারুস সালামের ১১ নং কোর্ট বাড়ির স্থানীয় বাসিন্দা তিনি। রাজনৈতিক কারণে ওয়ান ইলেভেন থেকেই তিনি আত্মগোপনে। তিনি বলেন, গত ১১ মে সকাল ১১টার দিকে মিরপুর থানার এসআই রাশেদুজ্জামান বেগ এবং এএসআই জিয়াউর রহমানসহ ৫ পুলিশ সদস্য তার বাসায় যায়। তারা নিজেদেরকে দারুস সালাম থানার পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। আমাকে না পেয়ে পুলিশ আমার স্ত্রী হামিদাকে তাদের সঙ্গে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ দলে একজন মহিলা কনস্টেবলও ছিলেন। তারা দারুস সালাম থানায় না গিয়ে মিরপুর থানায় যায়। সেখানে স্ত্রীর কাছে আমার অবস্থান জানতে চায়। তিনি আমার অবস্থান জানাতে ব্যর্থ হন।
ইসমাইল অভিযোগ করেছেন, পুলিশ আমার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় স্ত্রীকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়। শেষে রফাদফা হয় ৭০ হাজার টাকায়। ছোট বোন জামাই শাহজাহান ৬৫ হাজার টাকা পৌঁছে দেন পুলিশকে। এ টাকা পেয়ে পুলিশ জানায়, হামিদাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। কিন্তু জামিন নিতে গিয়ে দেখা যায় হামিদাকে ফাঁসানো হয়েছে মাদক মামলায়। এজাহারে কল্যাণপুর মিজান টাওয়ারের সামনে থেকে সন্ধ্যা ৭ টা ৩৫ মিনিটে হামিদাকে মাদক দ্রব্যসহ আটকের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেখানে ঢাকা মেট্রো গ-১৭-০৯৫৯ নম্বরের একটি গাড়ী জব্দ দেখানো হয়েছে। ওই গাড়ীর ড্রাইভার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সুমন নামের একজনকে। তিনিও ওই মামলার আসামী। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে হামিদার কাছ থেকে একশ’ গ্রাম হেরোইন এবং ওই গাড়ীর ভেতর থেকে ৫০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার বাদী এএসআই জিয়াউর রহমান এবং তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে এসআই রাশেদুজ্জামানকে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাশেদুজ্জামান গত রাতে ইনকিলাবকে বলেন, বাসা থেকে নয় হামিদাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কল্যাণপুর মিজান টাওয়ারের সামনে থেকে। অর্থ আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, হামিদার সঙ্গে সুমন নামে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সুমনের সঙ্গে একই গাড়িতে হামিদাকে পাওয়া গেছে। এছাড়া জব্দ হওয়া গাড়িটির বিরুদ্ধেও অনেক মামলা রয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই মামলার চার্জশিট দেয়া হবে।
হামিদার ছোট ছেলে ইভান জানান, বাড়ি থেকে তার মাকে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন বাড়ির আশপাশের শত শত মানুষ। পুলিশ তার মাকে বাসা থেকে নিয়ে গেছে সকাল ১১ টায় আর মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে সন্ধ্যার পরের কথা। ইসমাইলের বোন সাদিয়া বলেছেন, পুলিশ যখন তার ভাবীকে বাসা থেকে নিয়ে যায় তখন তিনি নিজে পুলিশের সঙ্গে যান। পুলিশ তাদেরকে বলেছিলো দারুস সালাম থানার ওসি সাহেব একটু কথা বলবেন। কিন্তু তারা দারুস সালাম থানায় না নিয়ে হামিদাকে মিরপুর থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে, হামিদার পরিবারের সদস্যরা বলেন, স্বামী যুবদল করার কারণেই হামিদা আজ পুলিশের রোষানলে পড়েছেন। প্রায় দশ বছর থেকে ইসমাইল বাসা-বাড়িতে যেতে পারছেন না। ব্যবসা-বাণিজ্য সব হারিয়ে পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। এত কিছুর মধ্যেও সন্তানদের লেখাপড়াসহ পরিবারের হাল ধরছিলেন হামিদা। মায়ের অনুপস্থিতিতে স্কুল-কলেজ পড়–য়া সন্তানদের এখন অজানা ভবিষ্যত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন