চট্টগ্রাম ব্যুরো ও পটিয়া সংবাদদাতা : এবার চলমান নির্বাচনী সহিংসতার শিকার হলো মাতৃগর্ভের এক শিশু। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আর বিদ্রোহী প্রার্থীর সংঘর্ষে রক্তাক্ত আহত অন্তঃসত্ত্বা জন্ম দিয়েছেন মৃত শিশুর। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর অদূরে কর্ণফুলী থানার বর উঠান এলাকার শাহ মিরপুর গ্রামে ঘটে এই ঘটনা। গুরুতর আহত ফাতেমার অবস্থাও সংকটাপন্ন। তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনপূর্ব সংঘাতের জেরে ওই শিশুটিকে মায়ের পেটে থাকতেই চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে। উল্লেখ্য, আজ শনিবার ওই ইউনিয়নে নির্বাচন।
স্থানীয় অধিবাসী ও পুলিশ জানায়, জুমার নামাজের পর ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বড় উঠান ইউপির আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলম দিদারের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাজাহানের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর একপর্যায়ে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আমির হোসেনকে মারতে তার ঘরে হামলা চালায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা। এ সময় স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে আসেন অন্তঃসত্ত্বা ফাতেমা খাতুন। হামলাকারীরা ফাতেমা খাতুনের পেটে প্রথমে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পরে তার পেটে লাথিও মারে তারা। এতে গুরুতর আহত হয়ে প্রসব ব্যথায় কাঁতরাতে থাকেন ফাতেমা। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সেখানেই প্রসব করানো হয় ফাতেমার। এতে ফাতেমা মৃত বাচ্চা প্রসব করেন। তবে বাচ্চাটি মেয়ে না ছেলে ছিল তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম রাতে ইনকিলাবকে বলেন, ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে এক পক্ষের হামলায় ফাতেমা খাতুন নামের এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা গুরুতর আহত হন। পরে তিনি মৃত বাচ্চা প্রসব করেছেন। আমরা বাচ্চাটিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮-৯ জন তাদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, এখনও আমরা অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে থানা মামলা নিবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে ফাতেমা খাতুনসহ ৮ জনকে চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আহতরা হলেন আমির হোসেন, লাকি আক্তার, শাহজাহান, আবদুস সবুর, নুর জাহান, আব্দুর রহিম ও আব্দুল মালেক। আহতরা হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটি বিভাগে ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আবদুল হামিদ।
প্রসঙ্গত সুজনের দেওয়া তথ্যমতে চলমান ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০১ জনের প্রাণহানী হয়েছে। তবে সহিংসতায় মায়ের পেটে শিশু নিহতের ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে সরকারী দলের দুই গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হয়।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ওই ইউনিয়নে নির্বাচন হতে দেবেনা বলে ঘোষণা দেন স্থানীয়রা। এ জন্য তারা নির্বাচন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহবায়ক ও বড়ওঠান ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস শুক্কুর, যুগ্ম আহ্বায়ক কর্ণফুলী যুবলীগ নেতা মোঃ আলমগীর জানান, আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার পূর্বক কঠোর শাস্তি চাই। তা না হলে এ ইউনিয়নে নির্বাচন প্রতিরোধ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন