সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সিন্ডিকেটের কবলে রোজার বাজার

প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : পর্যাপ্ত মজুদ, আন্তর্জাতিক বাজারে দর কমতি, বাজারে কঠোর নজরদারির ঘোষণা এবং ব্যবসায়িদের সাথে দফা দফায় বৈঠক করেও কোন স্বস্তি আসেনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে লাগামহীন দাম বাড়ছে বাজারে। পণ্য প্রতি ধীরে ধীরে এবং একের পর একটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে অস্থিতিশীল করা হয়ে বাজার। মন্ত্রী-ব্যবসায়িদের কোন ঘোষণা কাজে আসেনি। দাম কমাতে সাহায্য করেনি বাণিজ্য সচিবের দেয়া পর্যাপ্ত মজুদের তথ্য। সব মিলিয়ে রোজার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। গত দুই আগের দামের সাথে কোন পণ্যেরই দাম মিলছে। সামনে সপ্তাহে আরো দাম বাড়তে পারে শঙ্কা খুচরা বিক্রেতাদের। এরই মধ্যে আগামীকাল রোববার থেকে খোলা বাজারে টিসিবির ৬ পণ্য। সারাদেশে ১৫৪টি ট্রাকে বিক্রি হবে এসব পণ্য।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোলা গত রমজানের তুলনায় এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বাড়তি দামে। চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-১২ টাকা। গোশত ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি দাম হাঁকছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ছোলা (লাল) ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা, ছোলা (সাদা) ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মসুর ডাল (দেশি) ১৪০-১৫০ টাকা, ভারতীয় ১০০ টাকা। মুগডাল ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে বেসনের দামও। ছোলার তৈরি বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বিভিন্ন শাক-সবজি থেকে শুরু করে ডাল-তেল ইত্যাদি পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহে যেসব সবজি ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সেগুলোই শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। এছাড়া গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৮ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। আর দাম বেড়েছে ছোলা, মসুর ডাল ও ফার্মের মুরগির। এ সপ্তাহে পেঁয়াজ, রসুন, চিনি ও ডালের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপশি দামও বেড়েছে একধাপ।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন ১০ টাকা বেশি দামে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী ৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, কাঁচাকলা ৩০ টাকা হালি, লেবু ২০ টাকা হালি, মিষ্টি কুমরা (ছোট) ৩০ টাকা করে প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে।
তবে অপরিবর্তিত দামে বিক্রি হচ্ছে আলু, প্রতিকেজি আলু ২০ টাকা। আর ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন (আকারভেদে) ১০০ থেকে ৯৮ টাকা, হালি ৩৪ টাকা। হাঁসের ডিমের হালি ৩৬ টাকা, দেশি মুরগির ডিম হালি ৪৮ টাকা। এদিকে শবে-বরাতকে সামনে রেখে হঠাৎ ফার্মের মুরগির দাম বাড়িয়ে দেয়ার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
এ সপ্তাহে রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার প্রতিকেজি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার ২০০ টাকা প্রতিকেজি, আকারভেদে দেশি মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২৫০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা।
এ সপ্তাহে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা গত তিন দিন আগেও ৫২ টাকায় বিক্রি হয়। ছোলা ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। মসুর ডাল (দেশি) মানভেদে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, (আমদানি) মানভেদে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। মুগ ডাল (মানভেদে) ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
আর পেঁয়াজ (দেশি) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। দেশীয় রসুন মানভেদে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা এবং বিদেশিগুলো ২১০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ সপ্তাহে বাজারভেদে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়। খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানী ঢাকার ২৫টি পয়েন্টে, চট্টগ্রামের ১০টি, অন্য বিভাগীয় শহরে ৫টি করে ট্রাক বসিয়ে পণ্য বিক্রি করবে। এছাড়া জেলা শহরে দু’টি করে মোট ১৭৪টি স্থানে অস্থায়ীভাবে ট্রাক বসিয়ে স্থানীয় বাজারের তুলনায় কিছুটা কম দামে পাঁচটি পণ্য বিক্রি করা হবে।
এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন করবেন না, যাতে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। কারণ, একটি অতিরঞ্জিত সংবাদ অসৎ ব্যবসায়ীদের প্রতারণার পথ খুলে দিতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, রমজানে টিসিবি’র মাধ্যমে আমরা ১৭৪টি ট্রাকে করে সারা দেশে ক্রয়মূল্যে পণ্য বিক্রি করবো। স্বাভাবিকভাবেই বাজার থেকে আমরা একটু কম দামে বিক্রি করবো। তার মানে এটা নয়, আমাদের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, এটা আমরা চাই। আপনাদেরকে আমদানি করতে হয়। ডিউটি দিতে হয়। আরো অনেক খরচ আছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বৈঠকে জানান, দেশে ১৮ লাখ ৬১ হাজার টন চাল উদ্বৃত্ত আছে। চালের কোনো সমস্যা নাই। গমেরও একই অবস্থা। ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ১৮ লাখ ২৫ হাজার টন চিনি প্রবেশ করেছে। গত বছরের রয়ে যাওয়া মিলিয়ে এখন আমাদের কাছে ২২ লাখ টনের মতো চিনি হয়েছে। বর্তমানে ১৩ হাজার মেট্রিক টন খেঁজুরের চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে ২৭ হাজার মেট্রিক টন দেশে প্রবেশ করেছে। রসুনের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টনের চাহিদা আছে। দেশে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টন উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার টন আমদানি হয়েছে, আরও এলসি খোলা হয়েছে।
এদিকে আগামীকাল রোববার থেকে বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করবে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতি বছরের মতো এবারও ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেঁজুর বিক্রি করবে প্রতিষ্ঠানটি।
টিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, আসন্ন রমজান উপলক্ষে সারাদেশে ১৭৪টি স্থানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ২৫টি ট্রাক এবং চট্টগ্রাম শহরে ১০টি ট্রাক থাকবে। অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ৫টি করে ট্রাক থাকবে। বাকি জেলাগুলোতে ২টি করে ট্রাক থাকবে।
ঢাকার মধ্যে প্রেস ক্লাব, সচিবালয় গেট, ফকিরাপুল বাজার, শান্তিনগর বাজার, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, বাসাবো বাজার, যাত্রাবাড়ি মোড়, কাপ্তান বাজার, মিরপুর ১২ নম্বর, ছাপড়া মসজিদ ও পলাশী বাজার, ঝিগাতলা বাজার, খামারবাড়ী ও ফার্মগেট, মহাখালী বাজার, রামপুরা বাজার, বনশ্রী বাজার, আগারগাঁও বাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, মিরপুর-১০ গোল চত্বর, কচুক্ষেত বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, উত্তরার আব্দুলাহপুর বাজার ও মিরপুর কালশী মোড় বাজারে বিক্রি হবে টিসিবির এই পাঁচ পণ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন