ইনকিলাব ডেস্ক : ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা থামছেই না। গতকাল কুষ্টিয়ায় এক আ’লীগ নেতার ছেলে নিহত এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
কুষ্টিয়ার আ’লীগ নেতার ছেলেকে হত্যা
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়ার আইলচারায় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা জোয়ার্দ্দার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম শাহিনুর রহমান শাহিন (৩৫)। সে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ও আইলচারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি জাহের আলী মেম্বরের ছেলে।
নিহতের আত্মীয়স্বজন ও আ’লীগের নেতাকর্মীদের দাবী ইউনিয়ন পরিষদে জয়ী বিএনপির প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানের লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছে এলাকাবাসী। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আইলচারা ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শাহিনুর রহমান শাহিন বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আইলচারা বাজারে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে বড় আইলচারা জোয়ার্দ্দার পাড়া ব্রীজের নিকট পৌঁছালে ইউপি নির্বাচনে জয়ী সিদ্দিকুর রহমানের লোকজন তাকে ঘিরে ধরে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, হাত ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে তিনি মারা যান।
শৈলকূপায় আহত ১৫
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজারে শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নৌকা প্রতীকের ১৫ সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ১১টি বাড়ি ভাংচুর ও দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে প্রায় কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ রিপোর্ট পাঠানো (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬.৩০) পর্যন্ত শৈলকূপার মিনগ্রাম ও আবাইপুরে সংঘর্ষ চলছিলো।
প্রত্যাক্ষদর্শী হাটফাজিলপুর গ্রামের আবু বক্কার বিশ্বাস জানান, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই হাটফাজিলপুর বাজারে নৌকার সমর্থকদের অবরুদ্ধ করে রাখে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) হেলাল উদ্দীনের সমর্থকরা। বাজার থেকে তাদের বের হতে দেওয়া হয় না। শুক্রবার বিকালে নৌকার সমর্থক কৃপালপুর গ্রামের কুদ্দুস বিশ্বাসের ছেলে জুয়েলকে মারধর করে হেলাল উদ্দীন বিশ্বাসের লোকজন। এ ঘটনার জের ধরে হাটফাজিলপুর গ্রামের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (আনারস প্রতীক) প্রচার মাইক আটকে দেয় নৌকার সমর্থকরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন নৌকার সমর্থক নিরু বিশ্বাস, আব্দুল কুদ্দুস, সিদ্দিক হোসেন, হাবিবুর রহমান, রেন্টু, মসলেম উদ্দীন, বাবলু, রব্বানী, উকিল মোল্লা, আবুল হোসেন ও আবু বক্কারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় তারা আব্দুল কুদ্দুস এবং বাবুলের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে প্রায় কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। দুইপক্ষের সংঘর্ষের সময় হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা ডাবলুকেও লাঞ্ছিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন।
ভালুকায় সংঘর্ষ, আহত ১০
ভালুকা (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা : ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনের প্রচারণাকালে বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকা উপজেলার ১১ নম্বর রাজৈ ইউনিয়নে আ’লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির ৩৯ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেফতার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণাকালে ১১ নম্বর রাজৈ ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী আনোয়ার উদ্দিনের (ধানের শীষ) সমর্থকদের সাথে আ’লীগের প্রার্থী নুরুল ইসালাম বাদশার (নৌকা) কর্মীদের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বিএনপির সমর্থক ও প্রার্থীর ভাই আসাদুজ্জামান আসাদ (৫৫), সাইফুল ইসলাম নারু (৩৫), সেখ সাদীর মিয়া (৫০), রাকিব (২৫) ও রনি (১৮); অপরদিকে আ’লীগের সমর্থক ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান খান মাসুদ (২৫), শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মন্ডল (৩০) ও মো. লিয়াকত আলীসহ (৪৫) অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের প্রথমে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত মনিরকে আংশকাজনক অবস্থায় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ শেখ সাদী, রাকিবুল হাসান রাকিব, সাইফুল ইসলাম নারু ও রনিকে গ্রেফতার করে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে আহত শতাধিক
চট্টগ্রাম ব্যুরো : পঞ্চম ধাপে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। এসব ইউনিয়নে ভোটের আগের রাতেই আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। গতকাল (শুক্রবার) বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী ও সরকারদলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি এবং তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে ভোটকেন্দ্র দখল করতে বহিরাগত ক্যাডারদের জড়ো করেছে সরকার দলীয় প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়ায় এবং কক্সবাজারের রামুতে নির্বাচনী সহিংসতায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েক জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ২১টি ইউনিয়নে, বোয়ালখালী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে, চন্দনাইশ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং কক্সবাজারের রামু উপজেলার ৫ ইউনিয়নে ভোট আজ। বৃহস্পতিবার থেকেই মাঠে নেমেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একই সাথে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন