শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাচার চক্রের গ্রেফতার ৩

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৯, ১২:১১ এএম

গত ৯ মে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের নৌকাডুবিতে প্রায় ৮৫-৯০ জন নিখোঁজ হন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৯ জন। এ ঘটনার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিমের স্বজনরা শরীয়তপুরের নড়িয়া ও সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় দুটি মামলা করেছেন। ওই মামলার ছায়া তদন্তে নেমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দুইটি চক্রের তিনজনকে আটক করা হয়। তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। র‌্যাব বলছে, মানবপাচারে সক্রিয় এমন ১৫টি চক্রের সন্ধান পেয়েছে তারা। চক্রগুলো মূলত সড়কপথ, বিমানপথ ও নৌ- এই তিনটি রুটে লোকদের লিবিয়ায় পাঠায়।
গতকাল দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সিলেটের এনামুল হক তালুকদার, শরীয়তপুরের আক্কাস মাতুব্বর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুর রাজ্জাক ভ‚ইয়া।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, তদন্তে ইউরোপে মানবপাচারের সঙ্গে দেশজুড়ে অন্তত ১০-১৫টি চক্রের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব-১ ব্যাটালিয়ন। এর মধ্যে ৫-৬টি চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া বাংলাদেশিরা সেদিন নৌ-দুর্ঘটনায় পতিত হন। চক্রের সদস্যরা ইউরোপে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে দেশজুড়ে লোক সংগ্রহ করে। তারপর ওই লোকদের সড়কপথ, বিমানপথ মিলিয়ে তিনটি রুটে লিবিয়ায় পাঠায়। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে নৌপথে তিউনেশিয়ার উপকূল হয়ে ইউরোপে পাঠায়। অর্থের বিনিময়ে অবৈধ পথে বিদেশ যাবার পুরো প্রক্রিয়ায় নৌপথে ঝুঁকির বিষয়গুলো জানানো হয় না। নৌপথে নেয়ার পর শুরু হয় কালক্ষেপণ। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে দুই মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। সম্প্রতি ইউরোপে পাচারে তিনটি ব্যবহৃত রুট হলো, বাংলাদেশ ইস্তান্বুল (তুরস্ক)-লিবিয়া, বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কা (৪-৫দিন অবস্থান)-ইস্তান্বুল (ট্রানজিট)-লিবিয়া এবং বাংলাদেশ-দুবাই (৭-৮ দিন অবস্থান)-আম্মান (জর্ডান) (ট্রানজিট)-বেনগাজী (লিবিয়া)-ত্রিপলি (লিবিয়া)। এ ক্ষেত্রে সড়কপথ ও বিমানপথ ব্যবহার করে লিবিয়ায় পৌঁছানো হয়। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে নৌপথে তিউনেশিয়ার উপকূল হয়ে ইউরোপে পাচার করা হয়।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ভিকটিমদের পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকিট ক্রয় এই সিন্ডিকেটের তত্ত¡বাবধানে সম্পন্ন হয়। ইউরোপে পৌঁছে দিতে তারা ৭-৮ লাখ টাকা অর্থ নির্ধারণ করে, যার মধ্যে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় পৌঁছানোর আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাত্রার আগে পরিশোধ করতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এর মধ্যে অধিকাংশ টাকা পরিশোধ হয়ে যায়, যার ফলে ইচ্ছা থাকলেও আর ফেরত আসতে পারেন না ভুক্তভোগীরা। ভিকটিমরা ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কথিত ‘গুডলাক ভাই’সহ আরো কয়েকজন এজেন্ট তাদের গ্রহণ করে। তাদের ত্রিপলিতে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করানো হয়। এ সময়ে ভিকটিমদের স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকে চক্রটি।
সেখানকার সিন্ডিকেট সমুদ্রপথে অতিক্রম করার জন্য নৌ-যান চালনা এবং দিকনির্ণয় যন্ত্র পরিচালনাসহ আনুসাঙ্গিক বিষয়ের ওপর নানাবিধ প্রশিক্ষণ দেয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভোররাতে এক সঙ্গে কয়েকটি নৌ-যান লিবিয়া হয়ে তিউনেশিয়া উপকূলীয় চ্যানেলের হয়ে ইউরোপের পথে রওনা দেয়। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে গমনকালে ভিকটিমরা ভূমধ্যসাগরে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়- বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক।
গত ৯ মে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ বাংলাদেশিরা সিলেট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ ও নোয়াখালীর বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তারা ৫-৬ টি চক্রের মাধ্যমে ইউরোপে যাচ্ছিলেন। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আটক ৩ সদস্যের চক্রের মাধ্যমে কতজন সেখানে গিয়েছিলেন বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ছাড়া, দেশজুড়ে ১০-১৫ টি চক্রের খবর আমরা পেয়েছি। তাদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এদিকে, আমাদের সিলেট ব্যুরো জানান, গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে এনামুল শিবিরের সাবেক নেতা। সে গোলাপগঞ্জের মেহেরপুর এলাকার পনাইরচক গ্রামের মৃত মো. আবদুল খালিকের পুত্র। এনাম সিলেট সরকারি কলেজে শিবিরের নেতা তথা সাথী ছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ট্রাভেলস ব্যবসার আড়ালে মূলত মানব পাচারই ছিল তার ব্যবসা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোভনীয় উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে সিলেটের বেকার যুবকদের উদ্ধুদ্ধ করতো এনাম। ৯ মে ভ‚মধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে সিলেটের ১৯ জন নিহত হলে সর্বোত্র এনামের নাম ছড়িয়ে পরে। রবর্তীতে ১৩ মে সিলেট জেলা প্রশাসন ঝটিকা অভিযান চালায় অবৈধ ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে। অভিযানের আগেই নগরীর জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনস্থ নিউ ইয়াহিয়া ওভারসিজ তালাবদ্ধ করে গা-ডাকা দেয় এনাম। নিহতদের স্বজনরা অভিযোগ করেন, নিহত সিলেটিদের বেশিরভাগই এনামের হাত ধরে অজানা পথে ইউরোপে রওয়ানা দিয়েছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন