স্টাফ রিপোর্টার
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি’র সমিতিরহাট ইউপি নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা’ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করেছেন নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলার করতে যাচ্ছে একজন ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। ভুক্তভোগী ওই প্রার্থী থেকে জানা যায়, তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পূর্বে ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার শেষ সময় ছিল ৬ এপ্রিল বেলা ৫টা পর্যন্ত। ওইদিন ৫টার পূর্বে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর চাপের মুখে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি’র সমিতিরহাট ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী (আ’লীগ বিদ্রোহী, ইসলামী ফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টি) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু প্রচ-চাপ সত্ত্বেও বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ জাহেদ উল্লাহ কুরাইশী তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ প্রার্থী হারুনুর রশিদ ওইদিন সর্বশেষ বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ ফোনে নিজে এবং পূর্বাপর তার সহযোগীরা বেলা তাকে ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চূড়ান্ত সময়-সীমা বেঁধে দেন। অন্যথা জীবন নাশের হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু যথাসময়ে তিনি না পৌঁছায় আ’লীগ প্রার্থীর সহযোগীরা তাকে ফোনে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। তিনি বান্দরবান থেকে ফেরার সময় চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন এলাকায় পৌঁছলে ওখানেই বেলা ৫টা বেজে যায়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় তিনি ফটিকছড়ি সদরস্থ বাসার সামনে পৌঁছামাত্র পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা কয়েকজন যুবলীগ নেতা-কর্মী তাকে মোটর সাইকেলে তুলে নেয়। এ সময় তিনি তাদের অনুরোধ করে একটি কম্পিউটার দোকানে প্রবেশ করে ‘জীবনের নিরাপত্তা হেতু নির্বাচনী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার প্রসঙ্গ’ উল্লেখ করে একখানা আবেদন লিখে নেন। পরে তাকে ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। ওখানে অবস্থানকারী নৌকা মনোনীত প্রার্থী মোঃ হারুন অর রশীদ ইমনসহ আরো ১০/১৫ জন আ’লীগ নেতা-কর্মী তাকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার (উপজেলা প্রকৌশলী) কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টা নাগাদ চাপের মুখে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়ে নৌকার প্রার্থী নিজেকে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা আদায় করে। এ বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ জাহেদ উল্লাহ কুরাইশী গত ৭ এপ্রিল ফটিকছড়ি থানায় একটি জিডি (নং-২৩৭) করেন এবং ওইদিনই সিইসি বরাবরে ই-মেইল যোগে লিখিত অভিযোগ পাঠান। পরবর্তীতে তিনি ঘটনার বিষয়ে ৯ এপ্রিল ফটিকছড়িতে সম্মেলন করে বিস্তারিত প্রকাশ করেন এবং ১০ এপ্রিল সরাসরি ইসিতে পৌঁছে ই-মেইলে পাঠানো কপি পুনরায় দাখিল করলে ইসি’র ৮০০৭ নম্বর ডায়েরী মূলে তা গৃহীত হয়। কিন্তু ইসিতে বারংবার চেষ্টা করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে তিনি হাইকোর্টে একটি রীটপিটিশন (৫০৫৬/২০১৬) দায়ের করেন। গত ২৭ এপ্রিল উক্ত রীটের শুনানীয়ান্তে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ রেজাউল হাসান ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হককে নিয়ে গঠিত অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা প্রয়োগ করে অতিদ্রুত ফটিকছড়ি’র সমিতিরহাট ইউপি নির্বাচন সংক্রান্ত সকল অভিযোগ তদন্ত পূর্বক প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা প্রদান করেন। রীটকারীর পক্ষে শুনানী করেন, সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়জী। রায়ের সার্টিফাইড কপি গত ১১ মে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করলে ইসি নড়েচড়ে বসে এবং ওইদিনই পুরো বিষয়টি তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়ে ইসি সচিবালয়ের ১১ মে ২০১৬ তারিখের ১৭.০০.০০০০.০৭৯.৪১.০১৮.১৬-২৭১নং স্মারক মূলে ইসি’র সিনিয়র সহকারী সচিব (সংস্থাপন-২) মোঃ শাহ আলমকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘোষণা করে। এরই প্রেক্ষিতে ইসি সচিবালয়ের ১৫ মে ২০১৬ তারিখের ১৭.০০.০০০০.০১০.২৭.০০১.১৬-১৯৭নং স্মারক মূলে তিনি এক নোটিশ জারি করে ১৮ মে ২০১৬; বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসে ঘটনা তদন্তের দিন ধার্য্য করেন। সে মোতাবেক ফটিকছড়ি পৌঁছে তদন্ত কর্মকর্তা এবং সব পক্ষ’র উপস্থিতিতে শুনানী সম্পন্ন হয়। এতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ জাহেদ উল্লাহ কুরাইশী ইসি প্রতিনিধির লিখিত প্রশ্নের সঠিক উত্তর ও দালিলিক প্রমাণাদি (হাইকোর্ট রায়, প্রত্যাহারপত্র, সংবাদ সম্মেলন, নিজের অবস্থান এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার সহযোগী কর্তৃক ফোনে হুমকি সম্পর্কিত বিষয় প্রমাণে মোবাইল কললিস্টসহ যাবতীয় তথ্যাদি) সংযুক্ত করেন। কিন্তু পরে দেখা যায় ভিন্নচিত্র। যেদিন (১৫ মে ২০১৬) হাইকোর্টের নির্দেশে তার অভিযোগ সমূহ তদন্তের নোটিশ জারি করা হয়; ঠিক সেদিনই (ইসি’র সহকারী সচিব নুরুল হাসান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ১৫ মে ২০১৬ তারিখের ১৭.০০.১৫৩৩.০৩৫.৪৬.০৪৬.১৬-২৮০ নং স্মারক মূলে) হাইকোর্টের দেয়া আদেশকে উপেক্ষা করে ফটিকছড়ি’র সমিতিরহাট ইউপি নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে বিজি প্রেসের উপ-পরিচালকের নিকট চিঠি পাঠানো হয় এবং যেদিন (নোটিশে ধার্য্য তারিখ ১৮ মে ২০১৬) ঘটনা তদন্তে শুনানী করা হলো; ঠিক সেদিনই (১৮ মে ২০১৬) সমিতিরহাট ইউনিয়নের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এতে হাইকোর্টের রায়ের প্রতি তামাশা দেখা হয়েছে বলে মনে করেন রীটকারী সৈয়দ জাহেদ উল্লাহ কুরাইশী। তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্তে ইসি’র সদিচ্ছা ছিল না; আইওয়াশের জন্যই এ তদন্ত করা হয়েছে। না হয় একই সাথে দু’টো চিঠি চলতে দেয়া হলো কেন? মূলত: ইসি আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে এক ট্রিকারে দু’নলা বন্দুক দিয়ে শিকার কাজ চালিয়েছেন। আমি ইতোমধ্যে আইওয়াশ তদন্তের প্রতিবেদন ও ইসি’র সর্বশেষ সিদ্ধান্তের নকল চেয়েছি। একই সাথে হাইকোর্টের আদেশকে উপেক্ষা করায় আদালত অবমাননা এবং কোর্টেই বিচার প্রার্থনা করে আরেকটি রীট করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন