লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন পরিচালিত র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন স্থান করে নিতে পারেনি সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, এই র্যাংকিংয়ের জরিপ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান, এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে চীনের ৭২টি, ভারতের ৪৯টি, তাইওয়ানের ৩২টি, পাকিস্তানের ৯টি, এবং হংকংয়ের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। এমনকি নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এই র্যাঙ্কিংয়ের তালিকায়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই এই তালিকায়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একসময় আমরা গর্ব করতাম, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সারা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার দর্পণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার নাম এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও নেই। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে হাজারের মধ্যেও নেই। কেন? সেটা আজ জাতির কাছে বড় প্রশ্ন। গতকাল (রোববার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান না পাওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে ড. মঈন খান বলেন, র্যাংকিংয়ের জরিপ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ফার্স্ট ক্লাস নয়, রাজনৈতিক দলের সদস্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাঠদানে উন্নত বিশ্বের নামি প্রকাশনীর পাঠ্যবইয়ের বদলে অখ্যাত ভারতীয় পাঠ্যবইগুলোকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে মানসম্মত গবেষণা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত অ্যাকাডেমিক জার্নালগুলোতে কয়টি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে জাতি জানতে চায়।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের গবেষণা সংস্থাগুলোর মধ্যে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে জ্ঞান আদান-প্রদান সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু ঢাবির যে ২৮৩টি বিশ্বিবদ্যালয়ের সঙ্গে গবেষণা আদান-প্রদান হয়, তারাও এই র্যাংকিংয়ে নেই। তার মানে হচ্ছে, নিম্নমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরেক নিম্নমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের মানের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুপরিচিত। বিশ্বব্যাপী র্যাংকিংয়েও তারাই দীর্ঘদিন যাবৎ আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
মঈন খান বলেন, দুঃখজনক হলেও আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়ে গেছে। একসময় অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রী পড়তে এলেও আমার জানা মতে এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনও বিদেশি শিক্ষার্থী নাই। ভাষা ইনস্টিটিউটে পূর্ণকালীন ও খন্ডকালীন মিলিয়ে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন। অন্য কোথাও কোনও বিভাগে বিদেশি শিক্ষক বা গবেষকের দেখা বলতে গেলে মেলেই না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সে জাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়াই যথেষ্ট। আজ যদি কেউ বলে অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও নকল দিয়ে সরকার এই কাজটিই এদেশে করছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে কি?#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন