স্টাফ রিপোর্টার : ইউনিয়ন পরিষদের পঞ্চম ধাপেও নির্বাচনে কমিশনের প্রত্যক্ষ মদদেই জনগণের ভোটাধিকার লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা পাচ্ছি, তাতে সর্বত্র ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি ও ব্যালট পেপারে ছিনতাই, অবাধে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা চলছে। প্রত্যেক ধাপের মতোই আজকে এই ঘটনা ঘটছে। নিজেরাই ভোট দিয়ে নিজেদের ঘোষণা করার কাজটি করে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী পরিবেশ ও প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে কলঙ্কিত করেছে। তার স্বাধীন সত্বা প্রকরণ পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেছে। এই পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে, আমি বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন প্রত্যক্ষ মদদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় জনগণের ভোটাধিকার যেভাবে লুট করা হয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
শনিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয় ৭১৭টি ইউনিয়নে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচনী এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি। এই ৭১৭ ইউনিয়নের ভোটাররা তিন হাজারের বেশি চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রায় ৩০ হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে তাদের জনপ্রতিনিধি বেছে নেবেন।
ইউপি নির্বাচনের ভোটাধিকার লুট হওয়া পুনঃনির্বাচন চান কিনা জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে নির্বাচন কমিশন নিথর, নির্বাক ও বোবা। সেখানে তাদের কাছে দাবি করে কি লাভ? আপনাদের মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরছি। মানুষ দেখুক, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে যাদেরকে বসিয়েছে, তারা কী ধরনের ব্যক্তি, তাদের আচরণ কী?
এই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা হয়ত শিক্ষাজীবন ভালো থাকতে পারেন, কিন্তু তাদের বিবেক এখন ভোতা হয়ে গেছে। তারা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য আজকে ধ্বংসকারী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। এই কমিশনের কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই। এলাকা থেকে অনেক অভিযোগ নিয়ে তাদের কাছে জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার তারা হয়নি, কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
নির্বাচন কমিশন সরকারের সম্পূর্ণ আজ্ঞাবাহী হিসেবে কাজ করছে- এই অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করে রিজভী বলেন, এরা হচ্ছে আজ্ঞাবাহী, তল্পিবাহী ও সেবাদাস। আসলে এই কমিশন বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করারই একটা যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। সংযম ও দায়িত্ব সহকারে দায়িত্ব পালন না করে সরকারের অনুগ্রহজীবী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে এই কমিশন। তারা (নির্বাচন কমিশন) তাদের চাকরি রক্ষার্থে কাজ করছে, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে ঢাকার ধামরাই, জামালপুর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, ফেনীর দাগুনভুঞা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার কসবা, কুমিল্লার হোমনা, তিতাস, নরসিংদী সদর, শরীয়তপুরের নড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
ভোটারদের নিজের ভোটটি নির্ভয়ে-নির্বিগ্নে দেয়ার পরিবেশ এখন ইতিহাসের পাতায় চলে গেছে। এখন শুধু নির্বাচনী সন্ত্রাস, ভোটচুরি, ভোটলুট, আতঙ্ক ও রক্তাক্ত সহিংসতা ডালপালা বিস্তার করেছে। আজকে এই পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা যেসব সংবাদ পাচ্ছি, এটা তারই অংশ বিশেষ বলে আমরা মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন