নাছিম উল আল : দেশের পশ্চিম জোনের ২১টি জেলায় ঘাটতি না থাকলেও বিতরণ এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় লাগাতার ও সীমাহীন ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ যথেষ্ট কষ্টে আছেন। খোদ বরিশাল মহানগরীর প্রতিটি এলাকায় দৈনিক গড়ে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে লাইনসহ ট্রান্সফর্মারে গোলযোগের কারণে। ফলে আসন্ন রমজানে ইফতার, তারাবী ও সেহেরীর সময় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছবে তা নিয়ে শঙ্কিত ওয়াকিবহাল মহল। অথচ খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি দেশে বর্তমানে কোনো লোডশেডিং না থাকার কথা জানিয়ে আসন্ন রমজানেও বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই আকাশে মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে মন্ত্রীর ঘোষণায় কোনো আস্থা রাখতে পারছে না আমজনতা।
বরিশাল মহানগরীতে ওজোপাডিকো’র দুটি বিতরণ বিভাগের আওতায় প্রায় ৩০টি ১১ কেভি ফিডারের সহ¯্রাধিক ১১/.৪ কেভি ট্রান্সফর্মারের বেশীরভাগই দীর্ঘদিনের পুরনো। উপরন্তু এসব ট্রান্সফর্মার সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদীরও বেহাল দশা। প্রায় কোনো ট্রান্সফমারেই এখন আর ড্রপ আউট ও এমসিপি নেই। এর সাথে ট্রান্সফর্মারগুলোর তেল পরিবর্তনসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জমাদী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না। ১১ কেভী লাইনগুলোর দু’পাশেই নানা ধরনের গাছপালার কারণে ট্রান্সফর্মারসহ হাই-টেনশন লাইনগুলো ঘন ঘন গোলযোগের কবলে পড়ছে। একইভাবে লো-টেনশন লাইনসহ সব ধরনের ইনসুলেটরের পীন ফেটে যাচ্ছে ঘন ঘন। এর সাথে বরিশালের ১৩২/১১ কেভী সাবস্টেশন সংলগ্ন রূপাতলী ৩৩/১১ কেভী সাব-স্টেশন থেকে পলাশপুর ও কাশীপুর সাবস্টেশনমুখী দুটি ৩৩ কেভী সঞ্চালন লাইনের গোলযোগও এখন নিত্যকার ঘটনা। এমনকি এসব সাবস্টেশনের ৩৩ কেভি বাজবার ও ব্রেকারগুলোও ত্রুটিপূর্ণ। সাবস্টেশনের ১১ কেভী ব্রেকারসমূহ চালু ও বন্ধ করা নিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন দায়িত্বরত কর্মীগণ।
ঘন ঘন ট্রান্সফর্মারে গোলযোগসহ তা পুড়ে যাবার কারণেই এ নগরবাসীর দুর্ভোগ সব সীমা ছাড়াচ্ছে। এ নগরীর যেকোনো ধরনের ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেলে ও বা বিকল হলে তা পরিবর্তনে খুলনায় ছুটতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের। ফলে দীর্ঘ সময় পার করতে গিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে নগরবাসীর।
এমনকি সামান্য বৈরী আবহাওয়াতেও এ নগরীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ এখন নিয়মিত ঘটনা। গত দিন দশেক যাবৎ গোটা পশ্চিম জোনেই কোনো লোডশেডিং না থাকলেও বরিশাল মহানগরীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই বিদ্যুতের বেহাল দশায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সব বর্ণনার বাইরে।
পশ্চিম জোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানীÑওজোপাডিকো গঠনের দশ বছর পরেও বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও একটি গাড়ী দিতে পারেনি এ কোম্পানটি। ফলে অভিযোগ কেন্দ্র ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের কর্মীগণ দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারছেন না। ট্রান্সফর্মারসহ ইনসুলেটর ও এলটি ও এইচটি ক্যাবলও নেই কোম্পনিটির হাতে। ফলে সম্পূর্ণ জোড়াতালী দিয়েই চলছে বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবারহ ও বিতরণ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় প্রতিদিন নগরীর প্রায় প্রতিটি ফিডারেই ৩-৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ইতোমধ্যে নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এমনকি কোনো ধরনের ঝড়ো হাওয়াবিহীন বৃষ্টিতেও বরিশাল মহানগরীর বিশাল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের সুষ্ঠু সেবা দিতে। কিন্তু বরিশাল অঞ্চলে কিছু লাইনে সমস্যার কথাও জানান তারা। পাশাপাশি গত বছর থেকে এবছরের চলতি মাস পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে বিপুল সংখ্যক ১১/.৪ ট্রান্সফর্মার সরবরাহের কথাও জানান ঐসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তাদের মতে কোম্পানীর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও বরিশাল মহানগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থায় এতটা ত্রুটি থাকার কথা নয়। বিষয়গুলো নিয়ে মাঠপর্যায়ের প্রকৌশলীদের তাগিদ দেয়ার কথাও জানান ওজোপাডিকো’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আসন্ন রমজানে দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্ভব সবকিছু করার কথাও জানান ওইসব দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন