শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যত খাদ্য চিন্তা

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন ও বেড়ে চলা জনসংখ্যার অর্থ ভবিষ্যতে মানুষের আহার যোগানো আরো কঠিন হয়ে পড়া। আমরা কি করে এটা নিশ্চিত করতে পারি যে বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক আন্ত নির্ভরতার যুগে প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য আছে?
১৯৮০-র দশকে ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষের সময় আমরা যেসব ছবির সাথে পরিচিত ছিলাম সেগুলো হচ্ছে শিশুরা শূন্য দৃষ্টিতে কামেরার দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের মুখের চারপাশে মাছি উড়ছে, তাদের ছোট পেটগুলো ফুলে আছে।
তার ৩০ বছর পর ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রলম্বিত খরার শিকার হয়ে ইথিওপিয়া আবার খাদ্যাভাবের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও এখনো দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হয়নি, তারপরও ইথিওপিয়ার ১ কোটি ৮০ লাখ লোক খাদ্য সাহায্যের উপর নির্ভরশীল।
ইথিওপিয়ায় জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সমিতির (জিআইজেড) জোহানেস শোয়েনবার্গার বলেন, ইথিওপিয়ার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই কৃষিতে কাজ করে, কিন্তু সাধারণত উৎপাদন খুবই কম। তারা আবহাওয়ার এ প্রবণতার সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না।
ঐতিহাসিকভাবে খাদ্যের সহজলভ্যতা ও তার মূল্যের উপর আবহাওয়ার চরম বিপর্যয়, যেমন, খরার বৃহত্তর প্রভাব পড়ে। এ মুহূর্তে ভারতের ৩৩ কোটি লোক খরা আক্রান্ত বলে খবরে জানা যায়। ফলে চাষবাস হয়েছে সামান্য ও খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
জাতিসংঘের মিলেনিয়াম লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক এক রিপোর্ট মতে, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে ক্ষুধা পীড়িত লোকের সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭৯ কোটি ৫০ লাখ লোক এখনো অপুষ্টির শিকার, তাদের মধ্যে ৯ কোটিই হচ্ছে শিশু।
নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধীনে সারা বছর সকলের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করে ২০৩০ সালের মধ্যে অনাহারের অবসান ঘটানো জাতিসংঘের লক্ষ্য। কিন্তু বিশ্বে জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় জাতিসংঘ ধারণা করছে যে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯শ’ ৭০ কোটি যার চাপ পড়বে খাদ্যের উপর।
বৈশ্বিক অভিন্ন বিষয় ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মার্কেটর গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও ‘এনালাইজিং ফুড ভোলাটিলিটি’র লেখক ম্যাথিয়াস কালকুল ডি ডব্লিউকে বলেন, জৈব জ্বালানি নীতি, বাণিজ্যে বিঘœ, রফতানি নিষেধাজ্ঞা, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পণ্য বাজার বিষয়ক জল্পনা-কল্পনাÑ এ সবই খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য মূল্যের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্র্ণ হয়ে উঠছে।
জৈব জ্বালানির জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্য লভ্যতার উপর বিপুল প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভুট্টা উৎপাদনকারী যা সে খাদ্যের জন্য এ শস্যের উপর নির্ভরশীল অন্যান্য অঞ্চলসহ মধ্য ও ল্যাটিন আমেরিকায় রফতানি করে।
কিন্তু জৈব জ্বালানি হিসেবে ইথানল তৈরিতে ক্রমবর্ধমান পরিমাণে ভুট্টা ব্যবহারের নীতির কারণে আমদানিকারক দেশগুলোর আমদানির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।
কালকুল বলেন, এ নীতি নির্ধারণ করেছে যে আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা রয়েছেÑ ইথানলের ন্যূনতম পরিমাণ চাহিদা যা প্রতি বছর মিটাতে হয়, আর তা হচ্ছে অনমনীয়তার কারণ। এতে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জৈব জ্বালানি প্রয়োজন হয়, যা বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি থেকে স্বতন্ত্র।
তার অর্থ, যখন ফসল সংগ্রহ কম হবে, তখন জৈব জ্বালানির জন্য ভুট্টা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে, কিন্তু রফতানি হ্রাস পাবে, মূল্য বাড়বে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ডগলাস গোলিন বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটা শুধুমাত্র ব্যাপক প্রভাব ফেলা নীতি সিদ্ধান্ত নয়। ২০০৮ সালে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিছু এশীয় দেশকে তাদের চাল রফতানি বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ ছিল যা তাদের সীমান্তের বাইরে বড় রকম প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক উন্নয়নশীল দেশ নিজ জনসংখ্যার খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে তাদের রফতানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাকি বিশ্বের দরিদ্র জনগণের উপর এর প্রভাব পড়ে।
কালকুল বলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে খাদ্যের উচ্চমূল্য অনেক বড় সমস্যা। সেখানে লোকজন উন্নত দেশগুলোর তুলনায় খাদ্যের জন্য তাদের আয়ের বড় অংশ ব্যয় করে। এটা গৃহীত খাদ্যের মানের উপর প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, যদি আয় হ্রাস পায় এবং খাদ্যমূল্য বেড়ে যায়, তখন খাবারের বৈচিত্র্যও হ্রাস পায় । লোকে তখন কম মূল্যের খাবারের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং সবজি, ফল ও গোশতের পরিমাণ হ্রাস পায় যা খাদ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি সমস্যা হল খাদ্য বাজার নিয়ে চিন্তা যেখানে বিনিয়োগকারীরা খাদ্যপণ্যের মূল্যের উপর বাজি ধরে এবং মূল্য বাড়ায়। কালকুল বলেন, আফ্রিকা ও এশিয়ায় খাদ্য মূল্যের উপর এর একটি সুনির্দিষ্ট প্রভাব আছে। তবে দায়িত্বশীল বিনিয়োগের দ্বারা এ প্রভাব সীমিত করার পন্থা আছে। তিনি বলেন, সংকটের সময় ব্যাংকগুলো তাদের কৃষি বাজারের বাইরে যেতে পারে। তিনি এও বলেন, তার প্রতিষ্ঠান একটি পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করছে যা বিশ্ব খাদ্য বাজারে সম্ভাব্য সমস্যার আভাস দিতে পারে। তা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাবে যে, এখন বাজার ত্যাগ করা ভালো এবং আন্দাজি কার্যকলাপ বা অন্য ব্যবসায়িক তৎপরতায় অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি রোধ করবে।
খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির চিন্তার প্রভাব এবং খাদ্য সংশ্লিষ্ট নীতি উন্নয়নশীলদেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে এবং স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির চেষ্টা দ্রুততর করছে। তবে কালকুল বলেন, এ ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। এতে দেশে খাদ্য উৎপাদন অধিক ব্যয়বহুল এবং কার্যত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
ইথিওপিয়ায় পরিবেশের অবনতি ও ভূমিক্ষয় খাদ্য উৎপাদনে অন্যতম বড় সমস্যা। কিছু হিসাব অনুযায়ী, বৃক্ষ নিধন ও অ-টেকসই চাষ অভ্যাসের কারণে দেশের ভূমির এক-চতুর্থাংশ অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়েছে।
দারিদ্র্য পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। জিআইজেড-র শোয়েনবার্গার বলেন, উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি দ্বারা ভূমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যেতে পারে। যেমন সার প্রয়োগ, কীটনাশক ব্যবহার এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার। তবে অধিকাংশ কৃষকেরই এসব ব্যবহারের সামর্থ্য নেই। ইথিওপিয়ার একজন কৃষক ইউরোপে এক হেক্টর জমিতে যা উৎপাদিত হয় তার ২০ শতাংশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ কেনিয়া বা মরক্কোর অর্ধেক উৎপাদন করে।
তবে তিনি বলেন, জিআইজেড ও অন্যদের অনুর্বর জমি পুনর্বাসন ও উৎপাদন বৃদ্ধি সহায়তা কর্মসূচিগুলো কৃষকদের সহায়তা করছে। সম্প্রতি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৃষ্টির আগমনের পাশাপাশি তারা মানুষকে আশা যোগাচ্ছেন। সূত্র ঃ ডি ডব্লিউ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন